Samakal:
2025-06-16@06:09:21 GMT

উৎসবে বিদায়ের সুর

Published: 27th, February 2025 GMT

উৎসবে বিদায়ের সুর

অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এ বিদায়ের সুর বাজছে। আগামীকালই এর পর্দা নামবে। এ অবস্থায় শেষ মুহূর্তে ভিড় বাড়ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর। যারা ব্যস্ততার কারণে মেলায় আসতে পারেননি, তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির হচ্ছেন। গতকাল নানা সাজে তরুণ-তরুণীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ভিড় বাড়লেও সে তুলনায় লাফিয়ে বাড়েনি বইয়ের বিক্রি। প্রকাশকদের আশা, শেষ দুই দিন বিক্রি অনেকটা বাড়তে পারে।

গতকাল বুধবার বিকেলে মেলার বিভিন্ন প্রবেশপথে দেখা যায়, সেজেগুজে আগ্রহ নিয়ে মেলায় প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে ছবি তোলায় ব্যস্ত হলেও শেষ মুহূর্তে কেউ কেউ বই কিনছেন। কলেজ শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদকে দেখা যায় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বই খুঁজতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অডিও বুক শুনে অভ্যস্ত। তবে পাতা উল্টে বই পড়তেও পছন্দ করি।’ 

আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় প্রকাশকদের মধ্যে উল্লাস নেই। মেলা ঘুরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী চৌধুরী ফাহাদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাঠক, লেখক, বিক্রয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম রেসপন্স পাওয়া বইমেলা এটি। এবার মেলায় পাঠক ছিল না; দর্শনার্থী ছিল বেশি। তবুও শেষের দু’দিনে কিছুটা বিক্রির আশা করছি।’ 

কথাপ্রকাশের জসিমউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা সংস্কৃতি– বইমেলা একটা উৎসবস্থল। চার-পাঁচ বছর আগে যারা আসতেন, তারা বই কিনতে আসতেন। বিগত দিনগুলোর চেয়ে এবার বইমেলা অব্দি সবাই এসেছেন উৎসব করতে। যে যার মতো তা-ই করে চলে যাচ্ছেন। যারা মূল পাঠক, তারা অনলাইন থেকে বই কিনছেন; মেলায় আসছেন না।’

বিকেল ৩টায় মেলার দ্বার উন্মুক্ত হলেও ভিড় বাড়ে সন্ধ্যার দিকে। নিরাপত্তা অংশ হিসেবে যথারীতি বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণ ও গেটে হকারদের প্রতি কঠোর হতে দেখা যায় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। লিটলম্যাগ চত্বরে হকারের একটি দলকে বিকেলের দিকে বের করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কালীমন্দিরের গেটের কাছে থাকা অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

নতুন বই

গতকাল মেলায় নতুন বই আসে ১৬৬টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– মেঘদূত প্রকাশন থেকে তৌহিদ আহমেদের ‘যুগের বয়ান’, সম্প্রীতি প্রকাশ থেকে কাজী ফিরোজিয়ার ‘সৃষ্টিকর্তা বিধাতা আল্লাহর মহান বাণী’, বিদ্যাপ্রকাশ থেকে মফিদুল হকের ‘তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না’, গল্পকার থেকে মালেকা পারভীনের ‘শনিবারের গল্পগুলো’, সময় প্রকাশ থেকে শাহাবুদ্দীন নাগরীর ‘লক্ষ লক্ষ দেবদূত’।

মূল মঞ্চের আয়োজন 

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জুলাই প্রজন্ম ও প্রযুক্তি: নতুন সামাজিক বন্দোবস্তের খোঁজে’ শীর্ষক আলোচনা। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামিনা লুৎফা নিত্রা। আলোচনায় অংশ নেন কল্লোল মোস্তফা ও এহ্সান মাহমুদ।

সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা চব্বিশের জুলাই থেকে তাদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সংগ্রাম ও রাজপথে রক্ত ঢেলে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তারা অসাধারণ চিন্তাশীল, প্রতিশ্রুতিশীল ও উপলব্ধিশীল প্রজন্ম, যারা তাদের আশপাশের বিশ্ব সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে। এ প্রজন্ম যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে, সেই ভবিষ্যতের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তারা প্রস্তুত। 

আলোচকরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে অগ্রগামী সৈনিক ছিল নতুন প্রজন্মের তরুণরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির পতনের পর দেশের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে এসেছে তারা। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক মাধ্যম বৈষম্যহীন দেশ গড়ার দারুণ সম্ভাবনা ও সুযোগ করে দিয়েছে। 

সভাপতির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আমাদের যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা উপহার দিয়েছে, তা জনপরিসরে সংহত করতে হবে। এ সংহতি তখনই টেকসই হবে, যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্দোবস্ত হাজির করতে পারব। 

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক ফরিদ সাঈদ ও কবি এবিএম সোহেল রশীদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন শ্যামল জাকারিয়া, মানব সুরত, এ বি এম সোহেল রশীদ, ইউসুফ রেজাসহ অনেকে। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী, পুতুল দাস, এলবার্ট অনিমেষ দাস, শুক্লা ঘোষসহ অনেকে।

আজকের আয়োজন  

আজ বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ বিনির্মাণ: রাষ্ট্র কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা। কাজী মারুফের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশ নেবেন সৈয়দ নিজার। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল প রজন ম বইম ল উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার