অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এ বিদায়ের সুর বাজছে। আগামীকালই এর পর্দা নামবে। এ অবস্থায় শেষ মুহূর্তে ভিড় বাড়ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর। যারা ব্যস্ততার কারণে মেলায় আসতে পারেননি, তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির হচ্ছেন। গতকাল নানা সাজে তরুণ-তরুণীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ভিড় বাড়লেও সে তুলনায় লাফিয়ে বাড়েনি বইয়ের বিক্রি। প্রকাশকদের আশা, শেষ দুই দিন বিক্রি অনেকটা বাড়তে পারে।
গতকাল বুধবার বিকেলে মেলার বিভিন্ন প্রবেশপথে দেখা যায়, সেজেগুজে আগ্রহ নিয়ে মেলায় প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে ছবি তোলায় ব্যস্ত হলেও শেষ মুহূর্তে কেউ কেউ বই কিনছেন। কলেজ শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদকে দেখা যায় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বই খুঁজতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অডিও বুক শুনে অভ্যস্ত। তবে পাতা উল্টে বই পড়তেও পছন্দ করি।’
আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় প্রকাশকদের মধ্যে উল্লাস নেই। মেলা ঘুরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী চৌধুরী ফাহাদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাঠক, লেখক, বিক্রয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম রেসপন্স পাওয়া বইমেলা এটি। এবার মেলায় পাঠক ছিল না; দর্শনার্থী ছিল বেশি। তবুও শেষের দু’দিনে কিছুটা বিক্রির আশা করছি।’
কথাপ্রকাশের জসিমউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা সংস্কৃতি– বইমেলা একটা উৎসবস্থল। চার-পাঁচ বছর আগে যারা আসতেন, তারা বই কিনতে আসতেন। বিগত দিনগুলোর চেয়ে এবার বইমেলা অব্দি সবাই এসেছেন উৎসব করতে। যে যার মতো তা-ই করে চলে যাচ্ছেন। যারা মূল পাঠক, তারা অনলাইন থেকে বই কিনছেন; মেলায় আসছেন না।’
বিকেল ৩টায় মেলার দ্বার উন্মুক্ত হলেও ভিড় বাড়ে সন্ধ্যার দিকে। নিরাপত্তা অংশ হিসেবে যথারীতি বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণ ও গেটে হকারদের প্রতি কঠোর হতে দেখা যায় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। লিটলম্যাগ চত্বরে হকারের একটি দলকে বিকেলের দিকে বের করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কালীমন্দিরের গেটের কাছে থাকা অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই আসে ১৬৬টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– মেঘদূত প্রকাশন থেকে তৌহিদ আহমেদের ‘যুগের বয়ান’, সম্প্রীতি প্রকাশ থেকে কাজী ফিরোজিয়ার ‘সৃষ্টিকর্তা বিধাতা আল্লাহর মহান বাণী’, বিদ্যাপ্রকাশ থেকে মফিদুল হকের ‘তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না’, গল্পকার থেকে মালেকা পারভীনের ‘শনিবারের গল্পগুলো’, সময় প্রকাশ থেকে শাহাবুদ্দীন নাগরীর ‘লক্ষ লক্ষ দেবদূত’।
মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জুলাই প্রজন্ম ও প্রযুক্তি: নতুন সামাজিক বন্দোবস্তের খোঁজে’ শীর্ষক আলোচনা। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামিনা লুৎফা নিত্রা। আলোচনায় অংশ নেন কল্লোল মোস্তফা ও এহ্সান মাহমুদ।
সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা চব্বিশের জুলাই থেকে তাদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সংগ্রাম ও রাজপথে রক্ত ঢেলে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তারা অসাধারণ চিন্তাশীল, প্রতিশ্রুতিশীল ও উপলব্ধিশীল প্রজন্ম, যারা তাদের আশপাশের বিশ্ব সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে। এ প্রজন্ম যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে, সেই ভবিষ্যতের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তারা প্রস্তুত।
আলোচকরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে অগ্রগামী সৈনিক ছিল নতুন প্রজন্মের তরুণরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির পতনের পর দেশের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে এসেছে তারা। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক মাধ্যম বৈষম্যহীন দেশ গড়ার দারুণ সম্ভাবনা ও সুযোগ করে দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আমাদের যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা উপহার দিয়েছে, তা জনপরিসরে সংহত করতে হবে। এ সংহতি তখনই টেকসই হবে, যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্দোবস্ত হাজির করতে পারব।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক ফরিদ সাঈদ ও কবি এবিএম সোহেল রশীদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন শ্যামল জাকারিয়া, মানব সুরত, এ বি এম সোহেল রশীদ, ইউসুফ রেজাসহ অনেকে। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী, পুতুল দাস, এলবার্ট অনিমেষ দাস, শুক্লা ঘোষসহ অনেকে।
আজকের আয়োজন
আজ বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ বিনির্মাণ: রাষ্ট্র কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা। কাজী মারুফের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশ নেবেন সৈয়দ নিজার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল প রজন ম বইম ল উপস থ
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।