পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জরুরি: সিপিবি সভাপতি শাহ আলম
Published: 27th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম বলেছেন, ‘পার্বত্য চুক্তি নিয়ে টালবাহানা চলছে। এটি দেশ ও জাতির জন্য শুভ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখতে চাই না। ভূমির সমস্যা নিরোধ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে শান্তি ফিরবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও জরুরি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণের কর্মসূচি শেষে আয়োজিত সমাবেশে সিবিপি নেতা শাহ আলম এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ ব্যানারে হওয়া এই কর্মসূচিতে বক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
গণসংযোগের এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ঐক্য ন্যাপ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (জেএসএস–সমর্থিত), ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। এটি নগরের চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে শুরু হয়ে আন্দরকিল্লা, লালদীঘি মোড় ঘুরে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
গণসংযোগে নেতা–কর্মীরা জনগণের কাছে চুক্তি বাস্তবায়নের সপক্ষে প্রচারপত্র বিলি করেছেন। এই পত্রে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া সাতটি দাবি তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সূচিভিত্তিক পরিকল্পনা করে চুক্তি বাস্তবায়ন করা, আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয় শাসন নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক তা বাস্তবায়ন করা, ভারতে প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা, দেশের মূল অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আসন রাখা ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা ইত্যাদি।
সমাবেশে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘পাহাড়ের সমস্যা শুধু পার্বত্যবাসীর সমস্যা নয়। এটি সব বাংলাদেশি নাগরিকের সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা হচ্ছে ভূমি। এটি সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যাঁরা উদ্বাস্তু হয়েছিলেন, শরণার্থী হয়েছিলেন, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং পরে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের সবাইকে পুনর্বাসন করতে হবে। এই সমস্যা গত ২৭ বছরে সমাধান হয়নি।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, বৈষম্যবিরোধী চেতনা নিয়ে পাহাড়ের বৈষম্যকে বিলোপ করতে হবে। অর্থাৎ পাহাড় ও সমতলের সব মানুষের যে বৈষম্য ও ভেদাভেদ রয়েছে, এটি দূর করার উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নেবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি জিইয়ে রেখে বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণ সম্ভব নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক ও কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের পাহাড়ি জনগণ, আমাদের আদিবাসী, আমাদের বাঙালি জনগণ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মিলে এক আনন্দের বাংলাদেশ গড়ব। যেখানে থাকবে না হানাহানি, খুনোখুনি, জাতিবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ। এমন এক শান্তির আলোর বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
গণসংযোগের এই কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা জাসদের সভাপতি ইন্দুনন্দন দত্ত, বাসদের চট্টগ্রামের ইনচার্জ আল কাদেরী, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, জাকির হোসেন প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সমস য গণস য গ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক