রাজনীতিতে নতুনত্বের ছাপ প্রত্যাশিত
Published: 27th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাড়ে ছয় মাসের মাথায় পদত্যাগ করলেন। তিনি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠিত হচ্ছে—এই খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের বিষয়টিও সামনে আসে।
সরকারের সঙ্গে নীতিগত বিরোধের কারণে নয়, বরং নতুন দলের নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নাহিদ ইসলামের এই পদত্যাগ। মঙ্গলবার দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে তিনি পতাকাবিহীন গাড়িতে করে যমুনা ছাড়েন।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্ব যে দল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, নাহিদ ইসলাম সেই দলের প্রধান হবেন বলে জানা গেছে। রাজনীতিতে যুক্ত হতে ও একটি নতুন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের পদ ছেড়ে দেওয়ার তাঁর এই সিদ্ধান্ত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। আমরা তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট গঠিত মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে তিনজন ছাত্রনেতা যোগ দিয়েছিলেন। বাকি দুজন হলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর প্রশ্ন এসেছে, তাঁরা কী করবেন? এই দুই উপদেষ্টা যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নতুন দলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা বা দলের কার্যক্রমে কোনো ভূমিকা রাখেন, তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে নতুন দল থেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁরা নিজেদের দূরে রাখতে পারলে সেই প্রশ্ন এড়ানো যাবে।
তবে দুই উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে এর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তির বিষয়টিও রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কেউ সরকারে আছেন—এমন বাস্তবতা সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনটি নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এই পটভূমিতে আগামী নির্বাচনটি এমন হতে হবে, যা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি না হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদত্যাগপত্রে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি।’ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার শক্তিকে সংহত করতে সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে তাঁর ভূমিকা বেশি হবে বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি প্রণিধানযোগ্য।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংগঠিত রাজনৈতিক পালাবদলের পর মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা আরও তীব্র হয়েছে। জনগণ আর পুরোনো রাজনীতি দেখতে চায় না। ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ সেই আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। নতুন দলের সামনে তাই চ্যালেঞ্জ অনেক।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী তরুণেরা বলেছেন, পুরোনো রাজনীতি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন দল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিচালিত হোক, সেটাই প্রত্যাশিত। তবে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা এগিয়ে নিতে পুরোনো দলগুলোর অভিজ্ঞতা ও তরুণদের উদ্যমের সমন্বয় প্রয়োজন। নতুন দল তাদের নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচির অভিনবত্বে রাজনীতিতে নতুনত্বের ছাপ রাখতে সক্ষম হবে আশা করি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র ন হ দ ইসল ম র পদত য গ সরক র র উপদ ষ ট র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক