নিরাপদ সুপেয় পানি পাওয়াকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানযোগ্য পানি পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। দেশের সব মানুষকে নিরাপদ পানযোগ্য পানি বিনা মূল্যে সরবরাহ প্রশ্নে পাঁচ বছর আগে দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত রুলের ওপর শুনানি শেষে এ রায় দেওয়া হয়।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট নিরাপদ পানযোগ্য পানি পাওয়ার অধিকারকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কয়েকটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। বিষয়টি চলমান তদারকিতে থাকবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।

আদালত বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, হাটবাজার, বিমানবন্দরসহ জনসমাগমস্থলে (পাবলিক প্লেস) আসা প্রত্যেকের জন্য বিনা মূল্যে নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আগামী ১০ বছরের মধ্যে নিরাপদ ও পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পাবলিক প্লেসে বিনা মূল্যে নিরাপদ পানযোগ্য পানির সরবরাহ নিশ্চিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে আগামী বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া দেশের পানির যত উৎস রয়েছে, সেই উৎসগুলো যাতে ক্ষয়িষ্ণু না হয় অর্থাৎ পানি যাতে শুকিয়ে না যায়, অনিরাপদ ও দূষিত না হয়, সে জন্য পানির আধারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির এবং বেলার পক্ষে আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম মনজুর আলম শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

ওবায়দুর রহমান ও সোয়েব মাহমুদ।

পরে আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, বিনা মূল্যে নিরাপদ পানি ও ব্যবহারযোগ্য পানি পাওয়ার অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বিনা মূল্যে নিরাপদ পানি ও ব্যবহারযোগ্য পানি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায় বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রত্যেক নাগরিক উপকৃত হবে, পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাবে।

এর আগে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ স্বতঃপ্রণোদিত ওই রুল দেন। দেশের মানুষকে নিরাপদ সুপেয় পানি বিনা মূল্যে সরবরাহে প্রতিপক্ষ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের করণীয় কাজ এবং ওই করণীয় কাজ করতে নির্দেশ কেন দেওয়া করা হবে না, এ বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়। রুলের শুনানিতে গত ৫ জানুয়ারি আদালত আইনি সহায়তাকারী হিসেবে (অ্যামিকাস কিউরি) মতামত দিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ওই দুই আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র পদ প ন ক র জন য আইনজ ব সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।

ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।

ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’

ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।

জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প
  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প