নিরাপদ সুপেয় পানি পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার: হাইকোর্ট
Published: 27th, February 2025 GMT
নিরাপদ সুপেয় পানি পাওয়াকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানযোগ্য পানি পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। দেশের সব মানুষকে নিরাপদ পানযোগ্য পানি বিনা মূল্যে সরবরাহ প্রশ্নে পাঁচ বছর আগে দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত রুলের ওপর শুনানি শেষে এ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট নিরাপদ পানযোগ্য পানি পাওয়ার অধিকারকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কয়েকটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। বিষয়টি চলমান তদারকিতে থাকবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।
আদালত বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, হাটবাজার, বিমানবন্দরসহ জনসমাগমস্থলে (পাবলিক প্লেস) আসা প্রত্যেকের জন্য বিনা মূল্যে নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আগামী ১০ বছরের মধ্যে নিরাপদ ও পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পাবলিক প্লেসে বিনা মূল্যে নিরাপদ পানযোগ্য পানির সরবরাহ নিশ্চিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে আগামী বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া দেশের পানির যত উৎস রয়েছে, সেই উৎসগুলো যাতে ক্ষয়িষ্ণু না হয় অর্থাৎ পানি যাতে শুকিয়ে না যায়, অনিরাপদ ও দূষিত না হয়, সে জন্য পানির আধারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির এবং বেলার পক্ষে আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম মনজুর আলম শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, বিনা মূল্যে নিরাপদ পানি ও ব্যবহারযোগ্য পানি পাওয়ার অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বিনা মূল্যে নিরাপদ পানি ও ব্যবহারযোগ্য পানি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায় বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রত্যেক নাগরিক উপকৃত হবে, পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
এর আগে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ স্বতঃপ্রণোদিত ওই রুল দেন। দেশের মানুষকে নিরাপদ সুপেয় পানি বিনা মূল্যে সরবরাহে প্রতিপক্ষ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের করণীয় কাজ এবং ওই করণীয় কাজ করতে নির্দেশ কেন দেওয়া করা হবে না, এ বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়। রুলের শুনানিতে গত ৫ জানুয়ারি আদালত আইনি সহায়তাকারী হিসেবে (অ্যামিকাস কিউরি) মতামত দিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ওই দুই আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র পদ প ন ক র জন য আইনজ ব সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
ইরানে গতকাল শুক্রবার নজিরবিহীন হামলার আগে ইসরায়েলকে চুপিসারে কয়েক শ অত্যাধুনিক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিডল ইস্ট আইয়ের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আগে থেকেই বড় পরিসরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত করছে ইসরায়েল। এরই অংশ হিসেবে ইরানে হামলার কয়েক দিন আগে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইসরায়েলে প্রায় ৩০০টি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়। অথচ ট্রাম্প প্রশাসন বলছিল, তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী।
এত বিপুলসংখ্যক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আগে থেকেই ভালোভাবে অবগত ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ কথা জানান।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাক্সিওস গতকাল দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনায় বাধা দেওয়ার শুধু ‘ভান’ করেছে। কার্যত তারা কোনো বাধা দেয়নি।ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলে বিপুল পরিমাণে হেলফায়ারসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সে খবর এত দিন প্রকাশিত হয়নি।
গতকাল রয়টার্সকে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভূপাতিত করতে মার্কিন সেনাবাহিনী সহায়তা করেছে।
হেলফায়ার হলো লেজারনিয়ন্ত্রিত আকাশ থেকে স্থলে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটাতে এ ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষভাবে উপযোগী নয়। তবে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য এটি কার্যকর।
গতকালের হামলায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ১০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। এসব বিমান নির্ভুল শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিশানা করে এবং কমান্ড সেন্টারগুলোর ওপর আঘাত হানে।
আরও পড়ুন‘আমরা সব জানতাম’, ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প২ ঘণ্টা আগেএক জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘হেলফায়ার ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় ও ক্ষেত্র আছে। এগুলো ইসরায়েলের জন্য বেশ কার্যকর ছিল।’
গতকাল বিমান হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইরানি কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরায়েল।
নিহত এই কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি।
ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক মাস আগে থেকেই ইসরায়েলের এ হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে জানত।
চলতি মাসের শুরুতে মিডল ইস্ট আই প্রকাশ করে, গত এপ্রিল ও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের একতরফা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়। এ পরিকল্পনায় ছিল নিশানা ব্যবস্থাগুলোর বিশ্লেষণ, সাইবার হামলার ছক কষা ও নির্ভুল আঘাতের কৌশল। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের রূপরেখা ট্রাম্প প্রশাসনকে মুগ্ধ করে।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের আচরণ বিশ্লেষক, এমনকি সম্ভবত ইরানিদের মধ্যেও এমন ধারণার জন্ম দিয়েছিল, তিনি নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য হামলার আহ্বানে বাধা তৈরি করবেন।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাক্সিওস গতকাল দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনায় বাধা দেওয়ার শুধু ‘ভান’ করেছে। কার্যত তারা কোনো বাধা দেয়নি।
ট্রাম্প পরে বলেন, তিনি হামলার আগে ইরানকে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম গত মার্চে এই ৬০ দিনের সময়সীমার খবর প্রকাশ করেছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে গত ১২ এপ্রিল আলোচনায় বসে। এর ঠিক ৬১ দিন পর ইসরায়েল তেহরানে হামলা চালাল।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা থমকে যায়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে দাবি তোলে, ইরান যেন কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করে। আর তেহরান জানায়, এ বিষয়ে কোনো আপস তাদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।
আরও পড়ুনইরানে হামলা: ট্রাম্প ৬০ দিনের সময়সীমার কথা বলছেন, সেটি কী?১৭ ঘণ্টা আগেদুই মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আলোচনার পুরো সময়জুড়েই ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলাদাভাবে জনসমক্ষে কিছু জানাতে হয়নি। কারণ, ৭৪০ কোটি ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তির অংশ হিসেবে এটি আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল।
আরও পড়ুনইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন কোথায়১৭ ঘণ্টা আগে