তেঁতুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী দুজনকে বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে, পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য
Published: 27th, February 2025 GMT
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে উপজেলার দুজন প্রতিনিধিকে বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। বহিষ্কৃত দুজন হলেন তেঁতুলিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করা প্রতিনিধি মো. হযরত আলী ও মো. ওবায়দুল্লাহ।
গতকাল বুধবার রাতে বিজ্ঞপ্তিটি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী। বিজ্ঞপ্তিতে ফজলে রাব্বী জেলার আহ্বায়ক এবং মো.
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা থেকে জানানো যাচ্ছে, তেঁতুলিয়া উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে আসছিলেন হযরত আলী ও ওবায়দুল্লাহ; কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে নানা ধরনের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি জেলার সমন্বয়কদের নিয়ে মিথ্যাচার করে বক্তব্য দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ধরনের কাজকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। তাই শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে জেলার পক্ষ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হলো। পরবর্তী সময়ে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিজ্ঞপ্তিটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর অনেকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য করেছেন। ‘বহিষ্কৃত’ হযরত আলী মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘আপনার অফিশিয়াল কমিটি কোথায়? তেঁতুলিয়ায় আন্দোলন কি আপনার অনুমতিতে হয়েছে? নাকি এখানে আন্দোলনরত ছেলেদের সাথে আপনি একবার বসেছেন?...এ উপজেলায় যারা আন্দোলন করছে তারা থাকবে, আপনাকে গোনার টাইম নাই।’
রবিউল আওয়াল নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এটারই অপেক্ষায় ছিলাম।’ তবে অনিসুর রহমান নামের আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘ভাই অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলার জন্য কোনো ব্যানার লাগে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন কোনো ব্যানার ছিল না। পরে সবার সুবিধার জন্য, স্বার্থের জন্য বাকি আয়োজন। এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য যদি আপনাদের সমস্যা হয়, তাহলে আপনাদের সাথে না থাকাই উত্তম।’
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের তেঁতুলতলায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন হযরত আলী ও ওবায়দুল্লাহসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ‘বহিষ্কৃত’ ওবায়দুল্লাহ সমন্বয়ক ফজলে রাব্বীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ করেন।
মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, সারা বাংলাদেশে যখন ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে, তখন তেঁতুলিয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা আন্দোলনে নামেন। জেলার কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা আন্দোলন করেননি। নিজেদের বিপ্লবী মনোভাব থেকে তাঁরা আন্দোলন করেন। জুলাই বিপ্লবে হযরত আলীর অবদানের কথা সবাই জানেন। ফজলে রাব্বীদের মেনে নিতে না পারার কারণ হযরত বিএনপিপন্থী। শিবিরের মতাদর্শের হলেই হালাল, অন্য মতাদর্শের হলে বয়কটের ডাক—এ কেমন নীতি-নৈতিকতা প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁরা নিয়মবহির্ভূত ওই বহিষ্কারাদেশকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
জানতে চাইলে সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে তাঁরা বিভিন্ন কার্যালয়ে গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করায় তাঁদের শিবির বলে অপপ্রচার করছে। কয়েক দিন আগে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে কোনো কারণ ছাড়াই তারা জেলার সমন্বয়ক মোকাদ্দেসুর রহমান সান ও তাঁকে মারতে এসেছে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক র জন য ফ সব ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।