সেই ছয় শতাধিক বন্দির মুক্তি দিল ইসরায়েল
Published: 27th, February 2025 GMT
অবশেষে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী সেই ছয় শতাধিক বন্দির মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে ৪৬ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি স্থগিত রেখেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার গাজা থেকে চার জিম্মির মরদেহ ফেরত পাঠানোর পর ইসরায়েল তাদের কারাগারে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মধ্য থেকে তাদের মুক্তি দেয়। মুক্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজার ২৪ শিশুও রয়েছে। এর মাধ্যমে পাঁচ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরায়েলের নানা পদক্ষেপে বারবার যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে গত শনিবার হামাস জিম্মি মুক্ত করলেও চুক্তির শর্ত ভেঙে বন্দিমুক্তি আটকে দেয় ইসরায়েল। এতে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর শঙ্কা সৃষ্টি হয়।
দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, দক্ষিণ গাজা থেকে জিম্মিদের মরদেহ রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে চার মরদেহের তিনটির শনাক্ত নিশ্চিত করে ইসরায়েল। এর পরই বন্দিদের নিয়ে ইসরায়েলের বাস পশ্চিম তীরের রামাল্লা ও গাজার খান ইউনিসে পৌঁছায়। ফিলিস্তিনের প্রিজনার্স ইনফরমেশন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সকাল পর্যন্ত সপ্তম দফায় ৬৪২ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করেছে ইসরায়েল। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৪৬ জন।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত বন্দিদের মধ্যে সবাই গাজা অথবা পশ্চিম তীরে নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে পারছেন না। তাদের মধ্যে ৯৭ জনকে মিসরে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। অন্য কোনো দেশ গ্রহণের আগে তাদের সেখানেই থাকতে হবে। ৪৫৬ বন্দি গাজায় ফিরেছেন; ৩৭ জন গেছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে; পাঁচজন অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে।
গত শনিবার এ বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। ওই দিন ছয় জীবিত জিম্মিকে মুক্ত করে হামাস। উৎফুল্ল এক জিম্মি জনসমক্ষে হামাস সদস্যের কপালে চুমু খান, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করে ছয় শতাধিক বন্দির মুক্তি আটকে দেয় ইসরায়েল।
চলমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে যুদ্ধবিরতি সামনে এগিয়ে যাক। এ নিয়ে শিগগিরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভেন উইটকফ মধ্যপ্রাচ্য সফর করতে পারেন।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার যারা কারামুক্ত হয়েছেন, তাদের ওপর ইসরায়েলের নির্যাতন ও হেনস্তার বিষয়টি স্পষ্ট। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রথম দফায় বন্দি মুক্তির সর্বশেষ ধাপ ছিল এটি। মুক্ত বন্দিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদ্য ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত গাজা সিটির বাসিন্দা আলা আল বায়ারি বলেন, তিনি দেখেছেন ইসরায়েলের কারাগারে থাকাকালে কীভাবে নির্যাতন, মারধর, হেনস্তা ও যা ইচ্ছা তা-ই করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো তিনি তাঁর এক বছর বয়সের মেয়ের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন।
আলা বলেন, ‘তারা নগ্ন করে আমাদের ওপর পানি ছুড়ে মারত; তার পর বিদ্যুৎ দিয়ে নির্যাতন চালাত।’ আরেক ফিলিস্তিনি রামাল্লার ইয়াহিয়া শ্রিদা ইসরায়েলের কারাগারকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেন।
মুক্তি দিলেও পুনরায় আটকের শঙ্কা রয়ে গেছে। এর আগে ইসরায়েল অনেক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার পর আবার আটক করে। পশ্চিম তীরের বিরজেইত ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বাসিল ফারাজ জানান, ইসরায়েলের কারাগারে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা ৪৭ বন্দির মধ্যে নাইল বারগৌতি হচ্ছেন এমন একজন, যাকে বন্দি বিনিময়ে মুক্ত করা হলেও পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বারগৌতি ৪৫ বছর বন্দিদশায় কাটিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় হামলা
যুদ্ধবিরতি চললেও গাজায় বিচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বা আইডিএফ। এতে বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ১৭ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ১৯ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ হাজার ৩৬৫ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৭৮০ জন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল বন দ ইসর য় ল র ক র গ র বন দ র ম ক ত ম ক ত কর বন দ দ র ক বন দ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।