পাসপোর্ট ছাড়ে মগের মুলুক কেয়ামউদ্দিনের
Published: 27th, February 2025 GMT
মালয়েশিয়ার পেনাং রাজ্যের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে যান এক প্রবাসী বাংলাদেশি। সে সময় পেনাং অফিস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) মিয়া মোহাম্মাদ কেয়ামউদ্দিন। তিনি সেখানে পরিচয় যাচাই না করেই দালাল সন্দেহে ওই বাংলাদেশিকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে দাবি ওঠে তাঁকে অপসারণ ও শাস্তির। তবে গত বছর ওই ঘটনার পরও কেয়ামউদ্দিন স্বপদে এখনও বহাল।
শুধু সেবাপ্রত্যাশীদের হেনস্তা নয়, কেয়ামউদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। টাকা না দিলে তাঁর দপ্তর থেকে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক প্রবাসী। তাঁর দপ্তরে কয়েক বছর ধরে বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি পাসপোর্ট। কিন্তু অজানা কারণে তিনি পাসপোর্টগুলো ছাড়ছেন না। এমন বেশ কিছু অভিযোগ ওঠার পর হাইকমিশন থেকে কেয়ামউদ্দিনকে গত ২৩ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে কেয়ামউদ্দিন মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনে কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত। সূত্র জানায়, কেয়ামউদ্দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে হাইকমিশনের পাসপোর্ট অনুবিভাগে কর্মরত অফিস সহকারী মনজিল হোসেন রাতুল ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। রাতুলের বিভিন্ন অপকর্ম সম্পর্কে একটি অডিও ভাইরাল হলে তা হাইকমিশনের কাছে আসে। হাইকমিশন এসব অভিযোগের সত্যতা পেলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। তবে এর কোনো জবাব দেননি রাতুল। সমকালের কাছে আসা রাতুলের এক অডিও বার্তায় শোনা যায়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হাইকমিশনের পাসপোর্ট অনুবিভাগের কার্যক্রম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। অডিওতে রাতুল বলেন, ‘মালয়েশিয়ার এমবাসিতে পাসপোর্টের কাজের সঙ্গে জড়িত আছে প্রচুর লোক, তাদের রুটি-রোজগার এখান থেকেই হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই, ইনকামও নেই। এরা যে কোনো কাজের জন্য, যে কোনো সেকশনে থাকুন না কেন, তারা এনগেজড। আমার সঙ্গে দুইজন এনগেজড, মাসুমের সঙ্গে দুইজন হতে পারে, সাইদুলের সঙ্গে হতে পারে, এগুলো একটা রেওয়াজ।’
এক পর্যায়ে রাতুলকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমার স্যারে (কাউন্সিলর, পাসপোর্ট অনুবিভাগ) কোনো দিন ১০ মিনিটও বসতে পারে না। ওই আইডিটা আমার কাছে থাকত এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর ছিল সে আইডিটাও আমার সহকর্মীর কাছে থাকত। মানে হের কথা হলো, সে ভিআইপি নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু রিনিউয়ের কাজ, অ্যাপ্রুভালের কাজ, এগুলো আমার অ্যাসিস্ট্যান্টরা করবে, এরা তো আমারই লোক। আমাগো চ্যানেলে সিন্ডিকেটের একটা সিস্টেম আছে।’
অভিযোগ আছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আস্থাভাজন হিসেবে পাসপোর্ট অনুবিভাগে কেয়াম একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ইশারায় রাতুল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুণুর রশিদের ভাগনি জামাইকে নিয়ে আসেন মালয়েশিয়ায়।
রাতুল অডিও বার্তায় দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপিরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। রাতুল বলেন, ‘আমারে হাইকমিশনারে যদি অর্ডার দেয়, আমি হাইকমিশনারকেও যে কোনো মুহূর্তে ফোন করাইতে পারি। স্যার জানে, দু-তিনটা মন্ত্রীর লগে আমার ফ্যামিলির মতো আর কি। বাহাউদ্দিন নাছিম, আসাদুজ্জামান আর আমাগো ওইডা বরিশালের। এরা আমাগো আত্মীয়স্বজনের মতো। স্যার সবই জানে।’
অভিযোগের সত্যতা জানতে মিয়া মোহাম্মাদ কেয়ামউদ্দিন ও রাতুলের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার এসএমএস ও কল করলেও তারা সাড়া দেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক য় মউদ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ ৯ বিষয়ে সুপারিশের জন্য নতুন উপদেষ্টা কমিটি
বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ ৯ বিষয়ে সুপারিশের জন্য ১১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশিদের বিদেশে নিয়োগ–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই প্রজ্ঞাপনে ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল জারি হওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটিতে ১১ জন উপদেষ্টা রয়েছেন। তাঁরা হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আগের সরকারের একই কমিটি ছিল ১৩ সদস্যের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, অর্থসচিবসহ ১৬ জন সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন কমিটির সহায়তাদানকারী কর্মকর্তা। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী বৈঠক করবে এবং চাইলে নতুন সদস্য যুক্ত করতে পারবে।
কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে বিদেশে জনশক্তি নিয়োগসংক্রান্ত কাজের সমন্বয়, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণের দিকনির্দেশনা, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অভিবাসী কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণ, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দক্ষতা উন্নয়ন, বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো ইত্যাদি ৯ ধরনের বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করা। ২০২৪ সালের কার্য পরিধি যা ছিল, গতকালের কার্যপরিধিও একই। দুই কার্যপরিধিতে দাঁড়ি, কমা ও সেমিকোলনের কোনো পরিবর্তন নেই।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিদেশে তিন লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান কমে গেছে। কারণ, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান—এ তিন শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। বড়দের মধ্যে টিকে আছে শুধু সৌদি আরবের শ্রমবাজার।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, করোনা চলাকালীন ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার কর্মী। ২০২২ সালে গেছেন ১১ লাখের বেশি। ২০২৩ সালে গেছেন আরও বেশি অর্থাৎ ১৩ লাখ। তবে ২০২৪ সালে ৩ লাখ কমে ১০ লাখে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই গেছেন ৫ দেশে। এগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ২০২৪ সালের জুন থেকে। ওমানে ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন যেখানে সোয়া লাখের বেশি, ২০২৪ সালে গিয়েছেন মোটে ৩৫৮ জন। একই অবস্থা সংযুক্ত আমিরাতেও। এ দেশে ২০২৩ সালে কর্মী গিয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ, আর ২০২৪ সালে গেছেন অর্ধেকের কম অর্থাৎ ৪৭ হাজার। তবে সৌদি আরবে ২০২৩ সালে প্রায় ৫ লাখ কর্মী গেলেও ২০২৪ সালে গেছেন সোয়া ৬ লাখ।
সূত্রগুলো জানায়, সরকারিভাবে ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠানোর দাবি করা হলেও ২০২৪ সালে ১৩৫টি দেশে কর্মী গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ দেশে কর্মী গেছেন নামমাত্র। যেমন ১৪টি দেশে কর্মী গেছেন একজন করে। ১৪টি দেশে গেছেন দুজন করে। ১০ হাজার কর্মী গেছেন, এমন দেশ ৮টি। আর লাখের বেশি কর্মী পাঠানো দেশ শুধু সৌদি আরব।
কমিটির নাম ‘বাংলাদেশিদের বিদেশে নিয়োগসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ রাখা হলো কেন এবং ‘নিয়োগ’ শব্দটিই রাখার উদ্দেশ্য কী—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, নিয়োগের বদলে এটা হওয়া উচিত ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’। কিন্তু মন্ত্রীদের বদলে উপদেষ্টাদের নাম বসানো ছাড়া আগের প্রজ্ঞাপন থেকে হুবহু সব নেওয়ার কারণে ঘটনাটি এমন হয়েছে।