কোনো বন্দী—হোক বিচারাধীন কিংবা দণ্ডপ্রাপ্ত, তিনি যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে। পুরোনো কারাগারগুলোর চেয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা অধিক জোরদার হওয়ার কথা। তারপরও এই কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ ২০২ জন বন্দী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক।

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছেন—এমন খবর প্রকাশ পায় ২৫ ফেব্রুয়ারি। আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজের ফেসবুক পোস্ট থেকে জেমির পালানোর বিষয়টি সামনে আসে।

এরপরই আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগারের কনডেমড সেল থেকে পলায়নের ঘটনায় মুখ খুলেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো.

জান্নাত-উল ফরহাদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দী কারাগার থেকে পলায়ন-সংক্রান্ত সংবাদ কারা কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছে যে সংশ্লিষ্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদি মুনতাসির আল জেমি গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দীর সঙ্গে একত্রে (৮৭ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দীসহ) কারাগারের দেয়াল ভেঙে পলায়ন করে।’

প্রশ্ন হলো, ওই আসামি যদি গত বছরের ৫ আগস্টের পর অন্য বন্দীদের সঙ্গে কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকেন, কর্তৃপক্ষ এত দিন খবরটি চেপে রাখল কেন? কারা কর্তৃপক্ষ কতজন পলাতক বন্দীকে ফের আটক করেছে, সেই বর্ণনা দিয়েছে। কিন্তু কাদের গাফিলতির কারণে তাঁরা পালাতে পারলেন, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেননি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সদস্য। মুনতাসির আল জেমি এই হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কারাগারে ছিলেন। তিনি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

কারা প্রশাসন বলছে, আবরার হত্যা মামলার আসামি জেমি পালিয়েছেন। কিন্তু তাঁর বাবা মো. আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দুই দফা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে মুনতাসিরের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ কিছু বলেনি। এখন পালানোর খবর পেলেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘সে গেল কোথায়?’

কারা কর্তৃপক্ষ ‘চাপে’ আছে বলে একজন বন্দীর হদিস দেওয়া যাবে না বলে যে কৈফিয়ত দিয়েছে, সেটা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে গেলেন আর কারাগারের কেউ টের পেলেন না, এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

জেমির পালিয়ে যাওয়ার খবরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষুব্ধ হয়েছেন ন্যায়বিচারপ্রার্থী সব মানুষ। একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছয় মাস পর কেন কারা কর্তৃপক্ষ খবরটি জানাল? এতে সংশ্লিষ্টদের দুর্বলতা, গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা প্রকাশ পায়। এদের জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনা কি সরকারের দায়িত্ব নয়?

৫ আগস্টের আগে–পরে বিভিন্ন কারাগার থেকে পালানো আসামিদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত জঙ্গিরাও আছেন, যঁারা জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি তৈরি করতে পারেন। তাঁদের আটক করতে সরকারের কাছে জোরদার অভিযানই প্রত্যাশিত। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে কারাগার থেকে কোনো আসামি পালাতে না পারেন, সে জন্য আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে কারা কর্তৃপক্ষকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ