কারা প্রশাসন কেন খবরটি ছয় মাস চেপে রাখল
Published: 28th, February 2025 GMT
কোনো বন্দী—হোক বিচারাধীন কিংবা দণ্ডপ্রাপ্ত, তিনি যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে। পুরোনো কারাগারগুলোর চেয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা অধিক জোরদার হওয়ার কথা। তারপরও এই কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ ২০২ জন বন্দী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছেন—এমন খবর প্রকাশ পায় ২৫ ফেব্রুয়ারি। আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজের ফেসবুক পোস্ট থেকে জেমির পালানোর বিষয়টি সামনে আসে।
এরপরই আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগারের কনডেমড সেল থেকে পলায়নের ঘটনায় মুখ খুলেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো.
প্রশ্ন হলো, ওই আসামি যদি গত বছরের ৫ আগস্টের পর অন্য বন্দীদের সঙ্গে কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকেন, কর্তৃপক্ষ এত দিন খবরটি চেপে রাখল কেন? কারা কর্তৃপক্ষ কতজন পলাতক বন্দীকে ফের আটক করেছে, সেই বর্ণনা দিয়েছে। কিন্তু কাদের গাফিলতির কারণে তাঁরা পালাতে পারলেন, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সদস্য। মুনতাসির আল জেমি এই হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কারাগারে ছিলেন। তিনি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
কারা প্রশাসন বলছে, আবরার হত্যা মামলার আসামি জেমি পালিয়েছেন। কিন্তু তাঁর বাবা মো. আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দুই দফা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে মুনতাসিরের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ কিছু বলেনি। এখন পালানোর খবর পেলেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘সে গেল কোথায়?’
কারা কর্তৃপক্ষ ‘চাপে’ আছে বলে একজন বন্দীর হদিস দেওয়া যাবে না বলে যে কৈফিয়ত দিয়েছে, সেটা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে গেলেন আর কারাগারের কেউ টের পেলেন না, এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
জেমির পালিয়ে যাওয়ার খবরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষুব্ধ হয়েছেন ন্যায়বিচারপ্রার্থী সব মানুষ। একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছয় মাস পর কেন কারা কর্তৃপক্ষ খবরটি জানাল? এতে সংশ্লিষ্টদের দুর্বলতা, গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা প্রকাশ পায়। এদের জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনা কি সরকারের দায়িত্ব নয়?
৫ আগস্টের আগে–পরে বিভিন্ন কারাগার থেকে পালানো আসামিদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত জঙ্গিরাও আছেন, যঁারা জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি তৈরি করতে পারেন। তাঁদের আটক করতে সরকারের কাছে জোরদার অভিযানই প্রত্যাশিত। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে কারাগার থেকে কোনো আসামি পালাতে না পারেন, সে জন্য আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে কারা কর্তৃপক্ষকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।
আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।