বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিসের কাজ, পড়াশোনা, কেনাকাটা, বিনোদন, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রেই স্মার্টফোন এখন অপরিহার্য। তবে সব সময় ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকার এই প্রবণতা আমাদের অজান্তেই মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একদল গবেষক জানিয়েছেন, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখলে মানসিক স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৯১ শতাংশ ব্যক্তি স্মার্টফোনে সাময়িকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার না করায় নিজেদের আগের তুলনায় আরও সুস্থ অনুভব করেছেন।

পিএনএএস নেক্সাস সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘ব্লকিং মোবাইল ইন্টারনেট অন স্মার্টফোনস ইমপ্রুভস সাসটেইন্ড অ্যাটেনশন, মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাবজেকটিভ ওয়েল-বিয়িং’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মাত্র দুই সপ্তাহ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখলেই ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য, মনোযোগের স্থায়িত্ব এবং জীবনমানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে। এ বিষয়ে গবেষকদলের সদস্য এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের মনোবিজ্ঞানী অ্যাড্রিয়ান এফ ওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা দেখেছি, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পর গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি এবং মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গেছে।’

আরও পড়ুনস্মার্টফোনে আড়ি পাতা যেভাবে বুঝবেন, যেভাবে ঠেকাবেন১২ অক্টোবর ২০২৪

গবেষণা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৪৬৭ জন ব্যক্তিকে ‘ইন্টারভেনশন’ ও ‘কন্ট্রোল’ নামের আলাদা দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। ইন্টারভেনশন গ্রুপের অংশগ্রহণকারীদের স্মার্টফোনে একটি বিশেষ অ্যাপ ইনস্টল করা হয়, যা দুই সপ্তাহের জন্য তাঁদের মোবাইল ইন্টারনেট (ওয়াই-ফাই ও মোবাইল ডেটা) সম্পূর্ণ বন্ধ রাখে। তবে ফোনকল, মেসেজ এবং ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে, কন্ট্রোল গ্রুপের সদস্যদের প্রথম দুই সপ্তাহ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। এরপর তাঁদেরও একই ধরনের ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়। এরপর গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের স্থায়ী মনোযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি পর্যালোচনা করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রেখেছিলেন, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য, জীবনমান এবং মনোযোগের স্থায়িত্বে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

আরও পড়ুনস্মার্টফোনে দৈনন্দিন ইন্টারনেট ডেটার খরচ কমাবেন যেভাবে২৯ অক্টোবর ২০২৪

গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল এসেছে মনোযোগ উন্নতির ক্ষেত্রে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা অংশগ্রহণকারীরা স্থায়ী মনোযোগ পরীক্ষায় ভালো করেছেন। তাঁদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেন তাঁদের বয়স ১০ বছর কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শুধু তা–ই নয়, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখলে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার লক্ষণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।

আরও পড়ুনস্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা ভালো রাখার ৭ উপায়২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গবেষকদের মতে, স্ক্রিন টাইম কমে যাওয়ায় অংশগ্রহণকারীরা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নানা কাজে যুক্ত হন। এমনকি এই ইতিবাচক প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে কিছু বিষণ্নতা প্রতিরোধী ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর ছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের জীবনের প্রতি আরও সন্তুষ্ট ও সুখী অনুভব করেছেন। তাঁরা আগের তুলনায় ভালো মেজাজে ছিলেন এবং নেতিবাচক অনুভূতি কম প্রকাশ করেছেন। গবেষকেরা মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকায় মানসিক উন্নতি হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখায় অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি যোগাযোগে বেশি সময় ব্যয় করেছেন। এতে তাঁদের সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে। তাঁরা শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন, যেমন অবসর সময়ে ব্যায়াম করেছেন, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেশি সময় কাটানো, স্ক্রিন টাইম কমানো এবং ঘুমের মান উন্নত হওয়া তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও পড়ুনস্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার থাকার ৬ লক্ষণ১১ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন য গ কর ছ ন ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার আগে ইরানে গোপন অভিযান চালায় মোসাদ

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কমান্ডোরা শুক্রবার হামলার আগে ইরানের মধ্যে বেশ কয়েকটি গোপন অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্র এ কথা জানিয়েছে। 

গতকাল শুক্রবার সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এসব অভিযানের মধ্যে রয়েছে– ইরানের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার কাছাকাছি খোলা জায়গায় নিখুঁত নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র মোতায়েন, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তি এবং তেহরানের কাছে একটি অ্যাটাক-ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন। গতকাল স্থানীয় সময় সকালে ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বড় আকারে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির দাবি, তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বেশ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের তথ্য দিয়েছেন, যার মধ্যে আছে তেহরানের মূল ইউরেনিয়াম পরিশোধন কেন্দ্র। তবে ইসরায়েলি হামলায় কী অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইসরায়েল এই সামরিক অভিযানের নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’ (উদীয়মান সিংহ)। 
মোসাদের গত ২০ বছরের হিসাব এটি। শুধু ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই দুই বছরে চার ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে মোসাদ। এসব হত্যাকাণ্ডে যেসব অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছে মোসাদ, তা সত্যি চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো।

আজকের ইরান-ইসরায়েলের মাঝে যে চরম বৈরী সম্পর্ক, অতীতে কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল না। ইসরায়েলের জন্মলগ্নে ইরান এবং ইহুদিবাদী এ দেশটি ছিল একে অপরের বন্ধু। এমনকি ১৯৪২ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়, তখন তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশটি ছিল ইরান।

১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে এ স্বীকৃতি দেয় তেহরান। ক্রমে দুই দেশের মধ্যে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক এমনকি সামরিক সম্পর্কও। আরও অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে, মোসাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা সাভাক।

দুই দেশের গভীর এ সম্পর্ক ভেঙে পড়ে মূলত ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর। সেই সময় ক্ষমতায় আসা ইরানের বিপ্লবী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। শিয়া সম্প্রদায়ের তৎকালীন আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং তাঁর অনুসারীরা ছিলেন ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পুরোপুরি বিরুদ্ধে।

ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পেছনে দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। প্রথমত, ইরানের দূরপাল্লার মিসাইল তৈরির চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, পরমাণু প্রকল্প গ্রহণ। আসলে দ্বিতীয় কারণটিই যে ইসরায়েলের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইরানের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বিশেষত পরমাণু প্রকল্প ভেস্তে দিতে নানা অন্তর্ঘাতমূলক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে ইসরায়েল। প্রথম পদক্ষেপে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে মোসাদ। পরমাণু প্রকল্পের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা গুপ্তহত্যার শিকার হতে থাকেন একের পর এক। এর পাশাপাশি তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির দিকেও নজর রাখতে শুরু করে তেল আবিব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনবিআরের সভায় ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’,‘ইলন মাস্ক’, ‘মায়ের দোয়া স্যানিটারি’, ‘ডিম ব্যবসায়ী সমিতি’
  • বিশ্ববাজারে আজও বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম
  • ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে থামাইতেই হইবে
  • বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিন, শত্রু নয়
  • ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’
  • একদিনে আয় ৮১ লাখ, ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের তাণ্ডব!
  • ফুসফুসের সুরক্ষায় যা করণীয়
  • লন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো
  • স্বপ্নে হলো দেখা
  • হামলার আগে ইরানে গোপন অভিযান চালায় মোসাদ