মার্কিন পদার্থবিদ ও দার্শনিক টমাস কুন (১৯২২-১৯৯৬) তাঁর ‘দ্য স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভলিউশন’ (১৯৬২) বইয়ে প্রথম ‘প্যারাডাইম শিফট’-এর ধারণা দেন। কুনের মতে, বিশেষ ঐতিহাসিক অবস্থায় একটি আদিকল্পকে আশ্রয় করে বিজ্ঞানের নানা শাখায় মৌলিক অগ্রগতি হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে জ্ঞানকাণ্ডে নতুন কিছু প্রশ্ন ওঠে, যা সেই আদিকল্প সুরাহা দিতে পারে না। এ অবস্থায় নতুন আদিকল্পের দরকার পড়ে। প্রগতির দাবি মেটাতে পারে না বলেই পুরোনো আদিকল্পের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে আসে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘নতুন আদিকল্প তার অগ্রজকে হটিয়ে দিয়ে নেতৃত্বের ভূমিকাতে নামে’ (রণজিৎ গুহ, দেখুন: গৌতম ভদ্র সম্পাদিত নিম্নবর্গের ইতিহাস, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮)। 

টমাস কুন তাঁর ধারণাটি বিজ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেও অনেকে তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। যেমন মশহুর ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহ (১৯২৩-২০২৩) ভারতবর্ষের ইতিহাসচর্চায় কুনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। একইভাবে রাজনীতি শাস্ত্র কিংবা রাজনীতির মাঠে এমন কিছু মৌলিক পরিবর্তন কিংবা জিজ্ঞাসার উদ্রেক হয়, যা বিদ্যমান আদিকল্পকে চ্যালেঞ্জ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা’ উপড়ে ফেলার যে ডাক উঠেছে, তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি ‘প্যারাডাইম শিফট’, যা নতুন একটি আদিকল্প হিসেবে হাজির হয়েছে। 

ইতিহাসবিদ জোসেফ কনবিটজ মনে করেন, বিশেষ কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ‘এক শতাব্দীতে একবার বা দু’বার একটি বড় সংকট পরিবর্তনকে উস্কে দেয়।’ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মতোই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। জ্ঞানকাণ্ডের মতোই রাজনীতিতে পুরোনো ব্যবস্থা ভেঙে নতুন কোনো কাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয় কিংবা যুগ যুগ ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা বিশেষ কোনো পরিবার, বংশ কিংবা গোষ্ঠীর পতন ঘটতে পারে। জোসেফের মতে, একটি প্যারাডাইম শিফট ঘটতে অন্তত বিশ-ত্রিশ বছরের একটি বিপর্যয়কর প্রক্রিয়া হাজির থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমরা সে রকমই একটি প্যারাডাইম শিফট দেখছি। অন্তত গত পাঁচ দশকের রাষ্ট্র কাঠামো কিংবা গণতন্ত্রের মিথ্যা বুলি বা আদিকল্প ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে এই দাবি উঠেছে।  
টমাস কুনের কয়েকশ বছর আগে ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬) তাঁর মুকাদ্দিমা (১৩৭৭) গ্রন্থে প্যারাডাইম শিফটের মতোই আসাবিয়ার ধারণা দিয়েছিলেন। খালদুন দেখিয়েছেন, ইতিহাসের চক্রে আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি গড়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে তার শক্তি হারিয়ে পতনও ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় বিপুল সাম্রাজ্যের অধিকারী রাজবংশ ক্ষমতা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। একটি আদিকল্প উদ্ভবের মধ্য দিয়ে পুরোনো আদিকল্প ক্ষীণ হয়ে পড়ে। জ্ঞানবিদ্যায় যেভাবে পুরোনো ধারণা সেকেলে হয়ে পড়ে, তেমনিভাবে রাজনীতিতেও পুরোনো বন্দোবস্ত কিংবা ব্যবস্থা আকর্ষণ হারায়। 

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামো গুটিকয়েক মানুষের সংহতি নিয়ে গড়ে ওঠে, যেখানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। গত অর্ধশত বছরের সামাজিক বঞ্চনা ও বৈষম্য তারই পরিণতি। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে আদিকল্প ঘিরে সংহতি গড়ে উঠেছিল, তা সম্প্রতি ভয়াবহভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনেকেই এই রাষ্ট্র কাঠামোতে কেবল ক্ষমতার হাতবদল ঘটে বলে চিহ্নিত করেছেন। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও নতুন আদিকল্পের উত্থান ঘটেছে, যার চূড়ান্ত প্রকাশ জাতীয় নাগরিক পার্টি।   
নতুন আদিকল্পের মূল ভিত্তি ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা’র বিলোপ ঘটানো। অর্থাৎ বিশেষ কোনো পরিবার কিংবা গোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত থাকতে পারে না। অতীতে রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র উপড়ে ফেলতে এত শক্তিশালী আওয়াজ কখনও দেখা যায়নি। এরই মধ্য দিয়ে প্রজন্মগত ফারাকের ব্যাপারটিও পরিষ্কার হয়েছে। কুন যেভাবে বলেছেন, ‘নতুন আদিকল্প তার অগ্রজকে হটিয়ে দিয়ে নেতৃত্বের ভূমিকাতে নামে।’ এই অভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে তার প্রভাব পড়বে।

লুটেরাতন্ত্র থেকে পুরোপুরি শ্রেণিগত রূপান্তর না ঘটায় নতুন আদিকল্পের সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কাও কম নয়। তবে আদিকল্পটি যতটা আশঙ্কার, তার চেয়ে বেশি সম্ভাবনার। নতুন আদিকল্পে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান শ্রেণি-গোষ্ঠীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবেই এবং নতুন শ্রেণি-গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। ফলে এখানে অর্থনৈতিক, আদর্শিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ কারণে নিকট ভবিষ্যতে শ্রেণিস্বার্থের দ্বন্দ্বে সংঘাত, খুনোখুনি বাড়তে পারে। বিশেষত নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে ততই সংঘাতের আশঙ্কা বাড়বে। তবে এসব ঘটনায় নতুন সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নাকচ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। জ্ঞানকাণ্ডে যেমন একটি আদিকল্প জায়গা নেওয়ার আগে বহু তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনার ঝড় ওঠে; তেমনি রাজনৈতিক মাঠে বিদ্যমান ব্যবস্থা উপড়ে ফেলতে বহু সংঘাত, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নতুন আদিকল্প যতটা সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতে পারবে, ততটাই সংঘাত ও সহিংসতার মাত্রা কমে আসবে। সম্প্রতি রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রবক্তা অধ্যাপক মুসতাক খান নতুন বন্দোবস্ত কায়েমে সামাজিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে তরুণদের মাঠে হাজির থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন। 

আদিকল্পের শক্তি যেমন তার পাটাতনের ওপর নির্ভর করে– যা বিভিন্ন প্রতিকল্প, ধারণা ও বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়; তেমনি রাজনীতিতে আদিকল্পের শক্তি নির্ভর করে সামাজিক সংহতির প্রশ্নে তা কতটা শক্তিশালী। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সামনে রেখে যে অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেই আদিকল্পের শক্তির ওপরই নির্ভর করছে আগামী দিনের রাজনীতি। সামাজিক সুবিচার তথা ইনসাফ কায়েম, বৈষম্য নিরসন এবং জনগণকে ক্ষমতায়িত করার মধ্য দিয়ে একমাত্র ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সম্ভব। সেই লক্ষ্যে অটুট থাকলে নতুন আদিকল্প শক্তিশালী হবে। আর বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিনের পরিবারতন্ত্র, বণিকতন্ত্র ও সব ধরনের গোলামি থেকে বেরিয়ে এসে একটি নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে হাজির হবে।  

ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল 
Iftekarulbd@gmail.

com 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র জন ত ত র র জন ত ব যবস থ বন দ ব পর ব র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ