Samakal:
2025-08-01@21:55:41 GMT

কাঁঠাল অভিযান...

Published: 28th, February 2025 GMT

কাঁঠাল অভিযান...

বার্ষিক পরীক্ষার পরের ছুটিতে ঢাকা থেকে দূরের কোনো শহরে বেড়াতে যাবার জন্য আপু প্রতিদিন আব্বার কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলো। আব্বা প্রতিদিনই বলেন, এই সময়ে সবাই বেড়াতে যাওয়ায় টিকিট পাওয়া যাবে না; ভালোভাবে কোথাও সময় কাটানো যাবে না। আমার কাছেও মনে হলো একটু ঘুরে এলে কী এমন হয়? শেষ পর্যন্ত আব্বা রাজি হয়ে গেলেন। আগের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা জানতাম না, কোথায় যাবো? আব্বা যখন বললেন, কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে যাবেন, তখন আম্মু বিরক্ত হয়ে বলেন, ‌‘ওটাতো তোমাদের সরকারি অফিসারদের ট্রেনিং সেন্টার, সেখানে বাচ্চারা মজা পাবে না।’ আব্বা মুচকি হেসে বলেন, ‘বাংলার একটি প্রাচীন জনপদে গিয়ে বাচ্চারা অনেক কিছু শিখতে পারবে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি যাকে বার্ড বলে, সেটিও খুব সুন্দর আর নিরাপদ।’
আমরা সকালে মহানগর প্রভাতী ট্রেনে কুমিল্লা রওনা দিয়ে দুপুরের আগেই পৌঁছে গেলাম। এতো সুন্দর পাহাড়, লন টেনিসের কোর্ট, সুইমিং পুল, হাজার হাজার গাছ দেখে মনটা ভরে গেলো। আব্বা একে একে বার্ডের ভেতর ট্রেনিং সেন্টার, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, লাল-গোলাপি অসংখ্য রঙের ফুলের বাগান ঘুরিয়ে দেখালেন। 
আপু মামুন দাদাকে মোবাইল ফোনে জানালো, আমরা বার্ডে এসেছি। মামুন দাদা আমাদের বললেন, ‌‘লালমাইয়ের ময়নামতি বিহার-যাদুঘর, নব শালবন বৌদ্ধ বিহার, রাণীদিঘি, শালবন অবশ্যই ঘুরে আসবে।’ তিনি কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের একটা ছবি তুলে দিতে বলেন। কেননা, সেই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। এই স্কুলটি বর্তমানে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ। ছোটবেলায় মামুন দাদা বার্ডের ঠিক পাশেই কোর্টবাড়িতে থাকতেন। আমরা বার্ডের নীলাচল পাহাড়ে উঠে ক্যাডেট কলেজের ছবি তুলে মামুন দাদাকে পাঠিয়ে দিলাম।            
কয়দিনের বেড়ানোর সময় কুমিল্লার বিখ্যাত মাতৃভাণ্ডারের মজার রসমালাই, ছানামুড়কী খাই। আসার দিন আব্বাকে বললাম, ‘মামুন দাদার জন্য কী নেব?’ একটি বড় গাছের নিচে এসে সবুজ রঙের ফল দেখিয়ে বলেন, ‘বার্ডের এই ফলটি নিয়ে যাও। তোমার মামুন দাদা অনেক খুশি হবেন।’ এটা কী ফল, বলায় আব্বা হাসতে হাসতে বলেন, ‘মুচি’। আপু রাগ করে বলে, ‘তুমি কী আমাদের বাচ্চা পেয়েছো? মুচি, আবার কোনো ফল হতে পারে?’ শেষ পর্যন্ত আব্বা বুঝিয়ে বলেন, কাঁঠালের কচি অবস্থাকে মুচি বলে। আমি একটি আস্ত কাঁঠাল টিস্যুপেপার দিয়ে মুড়িয়ে পকেটে রেখে দিলাম মামুন দাদাকে দেবো বলে। আসলে এটি হচ্ছে আমার কাঁঠাল অভিযান! 

বয়স : ১+২+২+৩+৪ বছর; ষষ্ঠ শ্রেণি, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ