বাংলাদেশের চরাঞ্চলের মাটি সাধারণত বেলে বা বেলে-দোঁয়াশ প্রকৃতির, যা পানির ধারণক্ষমতা ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম। পাশাপাশি, সেচের সমস্যা, আকস্মিক বন্যা, খরা ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে চরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক কম।

তবে এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক।

গবেষকরা নতুন তিন শস্যবিন্যাস পদ্ধতির মাধ্যমে একই জমিতে বছরজুড়ে তিন ধরনের ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে সাফল্য পেয়েছেন। এতে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের জন্য লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকায় এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

কাশিয়ানীতে ৫ মাসে ২৩ ট্রান্সফরমার চুরি, সেচ ব্যাহত  

‘টমেটো এখন পাখিদের খাদ্য’

গবেষণাটি ‘ফসলের উৎপাদনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরীক্ষণ এবং জলবায়ু সহনশীল ফসল ব্যবস্থার অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চরাঞ্চলের ফসলের উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।

এর নেতৃত্বে রয়েছেন বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.

আহমেদ খায়রুল হাসান। গবেষণা দলে আছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও বাকৃবির পিএইচডি গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইকরামুল হক।

গবেষকরা চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য তিনটি লাভজনক শস্যবিন্যাস পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে, ভুট্টা-পাট-রোপা আমন, আলু-পাট-রোপা আমন এবং মরিচ-চিনাবাদাম-রোপা আমন পদ্ধতি। আধুনিক জাত, উন্নত প্রযুক্তি ও কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতিটি চিহ্নিত করে কৃষকদের জন্য সুপারিশ করা হবে।

প্রধান গবেষক ড. আহমেদ খায়রুল হাসান বলেন, “আকস্মিক বন্যা মোকাবিলায় জলমগ্ন সহনশীল বিনাধান-১১ এবং কম বয়সী চারা ভালো ফলন দিয়েছে। পাশাপাশি ভুট্টা ও মরিচ চাষের সঙ্গে আন্তঃফসল হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, কালোজিরা, মেথি, ধনিয়া ও মটরশুঁটি চাষ করায় একক ফসলের তুলনায় অধিক লাভ হয়েছে।”

তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, মালচিং ও ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটের বীজ প্রাইমিং করায় অঙ্কুরোদগমের হার বেড়েছে। আগাছা দমনে আগাছানাশক ও হ্যান্ড উইডিংয়ের সমন্বিত ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এছাড়াও বারি সরিষা-১৪, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, গম, রসুন, কাউন ও সূর্যমুখীর ফলন সন্তোষজনক ছিল।”

গবেষণার সফল প্রয়োগ ইতোমধ্যে চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকার কৃষাণী নাছিমা খাতুন জানান, গবেষকদের পরামর্শে ৩৩ শতাংশ (১ বিঘা) জমিতে সূর্যমুখী, ভুট্টা ও রোপা আমন চাষ করে তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো বেশি জমিতে এ শস্যবিন্যাসের মাধ্যমে চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি।

গবেষণা দলের সদস্য কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, “নির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ করলে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আগাছার প্রভাব কমে, মাটির পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ইতোমধ্যে গবেষণার ক্ষেতে প্রতি আধা শতাংশ জমিতে ৭৬ কেজি পর্যন্ত আলু উৎপাদনের নজির পাওয়া গেছে, যা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা

বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক, ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায় ভারত। যেখানে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্ক বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। আর দুই দেশের জনগণই হবে অংশীদারত্বের অংশীজন।

গত সোমবার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে ২০২৫ সালে এনডিসি কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

ভারতীয় হাইকমিশনার তাঁর বক্তৃতায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ও উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরেন। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা, বৈশ্বিক শাসনকাঠামোর সংস্কার এবং বৈশ্বিক দক্ষিণের স্বার্থ রক্ষায় ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার পাশাপাশি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও দ্রুত জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।

তিনি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার—‘প্রতিবেশী প্রথমে’, ‘পূর্বমুখী নীতি’, ‘মহাসাগর নীতি’ এবং ভারতের ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় রূপকল্পের আওতায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।

প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং ভৌগোলিক ঘনিষ্ঠতা আরও জোরদার করা উচিত। যাতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষাকে এমন সব সুযোগে পরিণত করবে, যা পারস্পরিকভাবে লাভজনক সহযোগিতা নিশ্চিত করবে।

ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ বিমসটেক কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক সংহতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। বিমসটেকের সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত এবং এটি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে প্রবৃদ্ধির সুযোগগুলোর বাস্তবায়নে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা
  • সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে ‘সহযাত্রী’