দেশে ক্যানসার চিকিৎসার উন্নত গবেষণার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থায়ন
Published: 1st, March 2025 GMT
‘২০১৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বব্যাপী ক্যানসার প্রতিরোধ মাস হিসেবে পালন করা হয়। সারা বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ক্যানসারকে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া ক্যানসারে আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে ক্যানসার নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা, সেমিনার, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ইত্যাদি চোখে পড়ার মতো।’ অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলছিলেন উপস্থাপক নাসিহা তাহসিন।
সবার মধ্যে ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এসকেএফ অনকোলজি আয়োজন করে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা। এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.
শুরুতেই উপস্থাপক জানতে চান এবারের বিশ্ব ক্যানসার দিবসের প্রতিপাদ্য সম্পর্কে। উত্তরে ডা. শাহিদা আলম বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ইউনাইটেড বাই ইউনিক’। এখানে ইউনিক মানে ভিন্নতা বা স্বতন্ত্রতা বোঝানো হয়েছে। কারণ, প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন। এ ভিন্নতা হতে পারে বয়সে, অর্থনৈতিক অবস্থানে এবং নারী-পুরুষে। কিন্তু লক্ষ্যের জায়গা থেকে সবাই কিন্তু এক বা ইউনাইটেড। তাই ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সবাই মিলে সেরা যত্নটা নিতে হবে।’
ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পর্কে ডা. শাহিদা আলম বলেন, সাধারণত যত ধরনের ক্যানসার আছে, তার ৯০ শতাংশেরই মূল চিকিৎসা সার্জারির মাধ্যমে টিউমার অপসারণ করা। এর সঙ্গে কিছু চিকিৎসা রয়েছে, যেগুলো সার্জারিটাকে ফলপ্রসূ করে। সেগুলো হলো কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোনথেরাপি, ইমিনোথেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপি। রোগীর প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসক এ চিকিৎসাগুলো নিশ্চিত করেন।
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ‘টেইলর চিকিৎসাপদ্ধতি’ সম্পর্কে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. শাহিদা আলম বলেন, এটার আরেকটি নাম আছে, সেটা হলো ‘প্রিসিশন মেডিসিন’। এটি হলো ডিএনএ বা জিনের সমন্বয়ে চিকিৎসাপদ্ধতির আধুনিক রূপ। অর্থাৎ নির্ভুলভাবে ওষুধের সুপারিশ, সঠিক মাত্রা, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ পরিহার, অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসার খরচ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে চিকিৎসা। এ পদ্ধতির মূল লক্ষ্য একজন রোগীকে প্রথাগত ওষুধের পরিবর্তে রোগীর নিজস্ব জেনেটিক মেকআপ, মলিকুলার প্রোফাইল এবং তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য বিবেচনা করে রোগনির্ণয় এবং সে অনুসারে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চিকিৎসায় উপকারের পাশাপাশি ঝুঁকিও রয়েছে। ‘স্টেম সেল প্রতিস্থাপন’ প্রসঙ্গে ডা. শাহিদা আলম বলেন, স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট রক্ত এবং অস্থিমজ্জার রোগের চিকিৎসা করে। যেমন লিউকোমিয়া, লিম্ফোমা এবং মাল্টিপল মায়লোমা। স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টের মূল লক্ষ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত বা অসুস্থ অস্থিমজ্জাকে সুস্থ স্টেম কোষ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা, যা পরবর্তী সময়ে নতুন, সুস্থ রক্তকণিকা তৈরি করে। তাই রোগীর প্রয়োজন অনুসারে যদি চিকিৎসাটা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ঝুঁকির চেয়ে উপকারই বেশি পাওয়া যাবে।
বিশ্ব ক্যানসার দিবস, বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা ও চিকিৎসাপদ্ধতি এবং রোগ নির্ণয়ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. শাহিদা আলমউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি
গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
আরো পড়ুন:
নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত
গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের
এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।”
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, “কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ