Samakal:
2025-05-01@09:50:36 GMT

ইফতারির খরচ দ্বিগুণ

Published: 2nd, March 2025 GMT

ইফতারির খরচ দ্বিগুণ

গত বছর প্রতিটি পেঁয়াজু ২-৩ টাকায় কেনা যেত। এবার দাম পড়বে ৬ থেকে ১০ টাকা। গত বছর ১০ টাকায় এক প্লেট ছোলা কিনে ইফতার করার সুযোগ ছিল, এবার গুনতে হবে ২০ টাকা। প্রতিটি বেগুনির দাম পড়বে ৬-১০ টাকা, যা গতবার ছিল ৩-৫ টাকা। একটি জিলাপির দাম পড়বে ১০-১৫ টাকা, গতবার যা ছিল ৬-৮ টাকা। এতদিন প্রতিটি বাংলা কলা ৮-১০ টাকায় কেনা যেত। দুই দিন আগে দাম বেড়ে ঠেকেছে ১৫-২০ টাকায়।  কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ইফতারের অন্যতম সামগ্রী মুড়ি, চিড়া, লেবু, শসা, কাঁচামরিচসহ বেশকিছু পণ্যের।

এর ফলে চিন্তায় পড়েছেন কম আয়ের মানুষ। তারা সাধারণত পেট ভরে ইফতার করেন। এ অবস্থায় ৫০ টাকার ইফতারেও পেট ভরবে না বলে আশঙ্কা করছেন দিনমজুরসহ নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে গতকাল শনিবার দেখা যায়, রিকশার নিচে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন চালক নাজমুল ইসলাম শিমুল। বছর ঘুরে রমজান আসায় মনে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব করছেন তিনি। তবে এর চেয়ে দুশ্চিন্তার পাল্লাটা কিছুটা ভারী তাঁর। কারণ রোজগারের আয়ের সঙ্গে মেলাতে পারছেন না নিত্যদিনের খরচ। পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা ও জিলাপি কিনতে হিমশিম খেতে হবে তাঁকে। সেখানে ফিরনি, সেমাই, কলা দিয়ে দই-চিড়া খাওয়ার ইচ্ছা শিমুলদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়।

গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বেশির ভাগ খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ এমনকি ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলোতে সরেজমিন রমজানে ইফতারির প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। দোকান মালিক ও বিক্রয় ব্যবস্থাপকরা জানান, এবার বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তির প্রভাব পড়ছে ইফতারির ওপর। দোকানের চারপাশে দামসহ ইফতারি বিক্রয়ের ব্যানারে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

নগরের ঝাউতলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘রোজা রেখে রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। এর পরও প্রতিবছর রোজা রাখি। এবারও সব রোজা রাখার ইচ্ছা আছে। তবে দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাড়তি খরচ নিয়ে। গতবারের তুলনায় এবার প্রায় সবকিছুর দাম বেশি। বর্তমান বাজারে ৫০ টাকা কিছুই না। অথচ এই টাকা আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অনেক কিছু। দুই-তিন প্রকারের ইফতারি কিনতেই শেষ হয়ে যাবে এই টাকা। যে কারণে পেটভরে ইফতারি খাওয়া অসম্ভব।’

চকবাজার মোড়ে কথা হয় দিনমজুর রফিকুল মওলার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন আগের মতো কাজ নেই। আয়ের চেয়ে ব্যয় কয়েক গুণ হওয়ায় সবাই কম টাকায় বেশি কাজ করার লোক নিতে চায়। কিন্তু কাজ একেবারে না থাকায় দৈনন্দিন খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। বাড়িতে বউ-বাচ্চার জন্য কোনো টাকা পাঠাতে পারছি না। রোজা চলে এলেও বাজারে দামের উত্তাপ কমেনি। উল্টো কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় কম টাকা দিয়ে কীভাবে প্রতিদিন ইফতার করব? আমার পক্ষে তো ১০০-২০০ টাকা দিয়ে পেট ভরে ইফতারি করার সুযোগ নেই।’

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ প্রায় ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। কয়েক মাস আগে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। একই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকার ওপরে। কয়েক মাস ধরে বাজারে মিলছে না চাহিদা মতো ভোজ্যতেল। সরকার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। সংকটের কারণে কিছু স্থানে তেল মিললেও লিটারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা। এতদিন প্রায় সবজির দাম 

কম ছিল। তবে রোজার দু’দিন আগে বেগুন, শসা, টমেটোসহ প্রায় সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা। কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি বেগুন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হতো, দু’দিন ধরে তা ৫০-৬০ টাকা। প্রায় এক মাস ধরে পাঁচ কেজি টমেটো ১০০-১২০ টাকা ছিল, দু’দিন ধরে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। ইফতারে সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত ছোট শসা প্রতি কেজি ছিল ৩০-৪০ টাকা; এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ লেবুর। এতদিন লেবুর ডজন ছিল ছোট ৬০-৮০ টাকা, বড় ১০০-১২০ টাকায়। কিন্তু রোজা শুরুর দু’দিন আগে থেকে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এক ডজন লেবুর দাম ২০০ টাকার উপরে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘নতুন সরকার এলেও পণ্যের বাড়তি দামের নাভিশ্বাস থেকে মুক্তি মেলেনি ভোক্তার। উল্টো কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। কয়েক মাস ধরে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবারের ইফতারের বাজারে। তাই কম আয়ের মানুষ এবার কম টাকায় পেটভরে ইফতার করার সুযোগ পাবে না। প্রশাসনের তদারকির অভাবে যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছেন।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র ইফত র র ইফত র ক ২০০ ট ক ১০ ট ক ২০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ