অস্কার মঞ্চে আলোর ছড়াছড়ি। তবুও মিলনায়তনজুড়ে প্রখ্যাত সব তারকার ঔজ্জ্বল্যে ম্লান হয়ে যায় সেসব আলোর রোশনাই। এমনই আলো ঝলমল জমকালো মঞ্চে একে একে এসে সোনালি রঙা খাম খুলে বিখ্যাত তারকারা বলছেন, ‘অ্যান্ড দ্য অস্কার গোজ টু...’। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানের এই চেনা চিত্র আবারও দেখতে আরও কয়েক ঘণ্টা বাকি।
আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় আবারও দেখা যাবে এই চিত্র। তাইতো পুরো পৃথিবীর বিনোদনপ্রেমীদের নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। এখানেই ২৪টি বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র শিল্পী-কুশলীকে দেওয়া হবে অস্কার পুরস্কার। জাঁকজমক আয়োজনের মাধ্যমে গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রের সেরা কাজগুলোকে এবারের আসরে স্বীকৃতি দেবে একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। বরাবরের মতো মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে হেভিওয়েট তারকারা নজরকাড়া পোশাক পরে লালগালিচায় পা মাড়াবেন। অস্কার অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার করবে যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি চ্যানেল। অনুষ্ঠান চলবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা।
ওয়াল্ট ডিজনির মালিকানাধীন এবিসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে সরাসরি দেখানো হবে জমকালো এই আয়োজন। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় স্টার মুভিজ এসডি, স্টার মুভিজ এইচডি, স্টার মুভিজ সিলেক্ট এসডি, স্টার মুভিজ সিলেক্ট এইচডি চ্যানেলে উপভোগ করা যাবে অনুষ্ঠানটি। ফলে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক টিভি সেটের সামনে বসে উপভোগ করবেন ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের জমকালো মহাযজ্ঞ।
৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসকে ঘিরে এখন চলছে নানান জল্পনা। চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি কার কার ভাগ্যে জুটবে তা নিয়ে গোটা দুনিয়ার সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই হলিউডের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এই পুরস্কার নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এবারের আয়োজনের কিছু তথ্য।
কার হাতে অস্কার!
২৪টি ক্যাটেগরিতে অস্কার ঘোষণা করা হলেও সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দেয় বেস্ট পিকচার, বেস্ট অ্যাকটর, বেস্ট অ্যাকট্রেস ও বেস্ট ডিরেক্টর– এই চার ক্যাটেগরি। এবার বেস্ট পিকচার বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে গেল বছরের আলোচিত ১০ সিনেমা। এ ছাড়া বাকি তিন বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচজন করে। প্রতি বছর অস্কার ঘোষণার আগে ভবিষ্যদ্বাণীর অন্ত থাকে না। ২০২৪ সালের মার্চের ১ তারিখ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো থেকে সেরা ছবি তথা বেস্ট পিকচার ক্যাটেগরিতে সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১০টি সিনেমা।
চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মাঝে এখন একটাই প্রশ্ন–কে হবে এবারের বিজয়ী? পুরস্কারপ্রাপ্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকা নামগুলো নিয়ে একটি অনুমান করাই যায়। এবারের অস্কারে ‘সেরা ছবি’র দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে এডওয়ার্ড বার্গার পরিচালিত ‘কনক্লেভ’। এরইমধ্যে সিনেমাটি গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা ও এসএজি পুরস্কার জিতেছে। শন বেকারের ‘আনোরা’ এবং ব্র্যাডি করবেটের ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ও জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
পরিচালনা বিভাগে এগিয়ে রয়েছেন শন বেকার (আনোরা)। গোল্ডেন গ্লোব ও নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিক সার্কেল অ্যাওয়ার্ড জেতার পর অনেকেই মনে করছেন এবার তিনি অস্কারও জিতে নিতে পারেন। তবে ব্র্যাডি করবেট (দ্য ব্রুটালিস্ট) ও জাস্টিন টারটেল (দ্য নিট-পিকার) পেয়ে যেতেন পারেন অস্কার।
‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ ছবির জন্য অড্রিয়েন ব্রডির নাম শীর্ষে থাকলেও, আ কমপ্লিট আননোন ছবিতে বব ডিলানের চরিত্রে অভিনয় করা টিমোথি শ্যালামে শেষ মুহূর্তে আলোচনায় উঠে এসেছেন। শ্যালামে যদি বিজয়ী হন, তবে তিনি হবেন ৩০ বছরের কম বয়সী দ্বিতীয় সেরা অভিনেতা।
সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ডেমি মুর (দ্য সাবস্ট্যান্স) এবং ফার্নান্দা তোরেস (আই অ্যাম স্টিল হিয়ার) শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। মুর ইতোমধ্যে এসএজি পুরস্কার জিতেছেন, যা তাকে এক ধাপ এগিয়ে রাখছে। শেষ মুহূর্তে কোনো চমক আসতে পারে।
সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা বিভাগে আ রিয়াল পেইন ছবিতে অভিনয়ের জন্য কিয়েরন কলকিন এগিয়ে রয়েছেন। দ্য ব্রুটালিস্ট ছবির গাই পিয়ার্সও আছেন জনপ্রিয়তার তালিকায়। সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রী বিভাগে এমিলিয়া পেরেজ ছবির জোয়ে সালদানা এগিয়ে রয়েছেন, যিনি ইতোমধ্যে গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা ও এসএজি পুরস্কার জিতেছেন। তবে কনক্লেভ ছবির ইসাবেলা রোজলিনি যদি বিজয়ী হন, এটি হতে পারে বড় চমক।
সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য বিভাগে আনোরা ছবির চিত্রনাট্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন সমালোচকের প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং এটি অস্কারও জিততে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ‘নিকেল বয়েজ’ ছবির চিত্রনাট্যও দারুণ। সেরা অ-ইংরেজি ভাষার ছবি গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটায় সাফল্য পাওয়া ফরাসি ছবি এমিলিয়া পেরেজ এই বিভাগে এগিয়ে রয়েছে। ব্রাজিলের আই অ্যাম স্টিল হিয়ার ছবির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। আপনার কি মনে হয়, এই পূর্বাভাস মিলবে? নাকি আমরা দেখতে পাবো অবিশ্বাস্য কিছু চমক?
এবারের আসরের সঞ্চালক
আমেরিকান টিভি তারকা কোনান ও’ব্রায়েন একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৯৭তম আসর সঞ্চালনা করবেন। এবারই প্রথম এই দায়িত্বে দেখা যাবে তাঁকে। এমি অ্যাওয়ার্ড জয়ী কোনান ও’ব্রায়েন একাধারে টেলিভিশন সঞ্চালক, গল্পকার, প্রযোজক ও কমেডিয়ান। ‘‘লেট নাইট উইথ কোনান ও’ব্রায়েন’’, ‘‘দ্য টুনাইট শো উইথ কোনান ও’ব্রায়েন’’ ও ‘কোনান’ অনুষ্ঠান তিনটির সঞ্চালক হিসেবে কোনান ও’ব্রায়েনের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি রয়েছে। দুই দশকের সঞ্চালনা ক্যারিয়ারের আগে ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ ও ‘দ্য সিম্পসনস’ অনুষ্ঠানের লেখক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে ‘‘কোনান ও’ব্রায়েন নিডস অ্যা ফ্রেন্ড’’ পডকাস্ট সঞ্চালনা করছেন তিনি। এছাড়াও ৬১ বছর বয়সী এই গল্পকার সম্প্রতি শুরু করেছেন ভ্রমণবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘‘কোনান ও’ব্রায়েন মাস্ট গো’’। অস্কারের দুই নির্বাহী প্রযোজক রাজ কাপুর ও কেটি মুল্যান কোনান ও’ব্রায়েনকে নিয়ে বলেন, ‘দুর্দান্ত অস্কার সঞ্চালনার সমস্ত গুণ আছে কোনানের। তিনি অসাধারণ রসিক, ক্যারিশম্যাটিক ও মজার মানুষ। নিজেকে টেলিভিশন লাইভ অনুষ্ঠানের জন্য পূর্ণ দক্ষ হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। হলিউডের সবচেয়ে তাৎপর্যময় রাতে নতুন, রোমাঞ্চকর ও উদযাপনময় একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আমরা মুখিয়ে আছি।’
লালগালিচার জৌলুস
আয়োজকেরা এবার ৯০০ ফুট দীর্ঘ লালগালিচা রেখেছেন। বরাবরের মতো পুরস্কার বিতরণ শুরুর আগে বিশ্বের নামিদামি তারকারা বলগাউন ও প্যান্টস্যুটসহ নজরকাড়া পোশাকে ও দামি অলঙ্কারে জৌলুস ছড়াবেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুভূতি জানতে ডলবি থিয়েটারের বাইরে ‘রেড কার্পেট শো’ সঞ্চালনা করবেন আমেরিকান নৃত্যশিল্পী-অভিনেত্রী জুলিয়ান হাফ এবং জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জেসি পামার। বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাত ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে এ আয়োজন। জেসি পামার এবারই প্রথমবারের মতো এবং জুলিয়েন হাফ এই নিয়ে টানা দুই বছর ধরে এ শোটি সঞ্চালনা করছেন। ৩০ মিনিটের এই বিশেষ আয়োজনে থাকবে অস্কারের মনোনীত অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী এবং পারফরমারদের নানা বিষয়।
মঞ্চ মাতাবেন সংগীতশিল্পীরা
৯৭তম অস্কারে মনোনীত সেরা পাঁচটি মৌলিক গানের পরিবেশনা থাকছে অনুষ্ঠানে। এবারের আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করবেন দোজা ক্যাট, সিন্থিয়া এরিভো, আরিয়ানা গ্র্যান্ডে, ব্ল্যাকপিংকের লিসা, কুইন লতিফা এবং রায়ে। এ ছাড়া দলীয় পরিবেশনায় থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের কোরাস দল ‘লস অ্যাঞ্জেলেস মাস্টার কোরাল’। এরিবো ও গ্রান্দে এবারের অস্কারে মনোনয়নও পেয়েছেন।
‘উইকেড’ ছবির জন্য এরিবো পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী বিভাগে এবং গ্রান্দে রয়েছেন সেরা পার্শ্ব চরিত্রের দৌড়ে। শোনা যাচ্ছে, অস্কারের অনুষ্ঠান শুরু হবে তাদের পরিবেশনা দিয়ে। তারা ‘উইকেড’ ছবি থেকে একটি বা দুটি গান পরিবেশন করবেন। কুইন লতিফা অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ২০০৩-এ, ‘শিকাগো’ ছবির জন্য। এছাড়া গত একবছরে যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের সম্মান জানানো হবে ‘ইন মেমোরিয়াম’ পর্বে। এছাড়াও আরও অনেক তারকাশিল্পী মঞ্চ মাতাবেন।
কোটি টাকার উপহার
৯৭তম অস্কারে মনোনীত ২০ জন অভিনয়শিল্পী ও পাঁচ পরিচালকের জন্য থাকছে উপহারের ব্যাগ। এতে থাকছে প্রায় ৬০টি উপকরণ! সব মিলিয়ে এগুলোর দাম ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার (১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা)।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র অন ষ ঠ ন র জন য এক ড ম করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
ডলার ও বিদেশিদের ব্যাংক হিসাবে আমানত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ
হঠাৎ করে দেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশিরাও দেশের ব্যাংকগুলোতে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা জমা রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে বিদেশি মুদ্রার যে হিসাব আছে, সেটিও বাড়ছে অন্যান্য আমানত হিসাবের চেয়ে বেশি। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় রক্ষিত আমানত বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও বিদেশি মুদ্রার বাইরে দেশীয় মুদ্রার আমানত হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব হিসাবে অর্থ জমা বেশি বেড়েছে। এর ফলে ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এটা শুরু হয়েছে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব ও বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কারণে।
আমানত কতটা বাড়ল
দেশের ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের আমানত পণ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশি ও বিদেশিদের জন্য পৃথক আমানত পণ্য। বিদেশি মুদ্রার জন্য রয়েছে পৃথক আমানত পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিদেশিরা সাধারণত বিদেশি মুদ্রাকে টাকায় রূপান্তর করে এই ধরনের হিসাব পরিচালনা করেন, ব্যাংকের ভাষায় এসব হিসাবকে কনভার্টেবল টাকা অ্যাকাউন্ট অব ফরেনার্স বা বিদেশিদের জন্য টাকায় রূপান্তরযোগ্য হিসাব বলা হয়। ২০২৪ সালের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।
একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবেও (এফসিএ) জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। গত ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই সাধারণ এফসিএ হিসাব খুলে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের হিসাব খুলতে পারেন।
এ ছাড়া শুধু প্রবাসীদের জন্য আলাদা আমানত হিসাবও রয়েছে, তাতে স্থিতি খুব বেশি বাড়েনি। গত বছরের মার্চে প্রবাসীদের আমানত হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে (আরএফসিডি) আমানতও বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে আমানত ছিল ২৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত সেভাবে বাড়েনি। ২০২৪ সালের মার্চে পুরো খাতে আমানত ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয় ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।
কেন বাড়ছে ডলার ও বিদেশিদের জমা অর্থ
দেশে ডলার–সংকট দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মানুষের ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই ধরনের হিসাব খুলতে শুরু করে। বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি এবং দেশীয় মালিকানাধীন ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।
সুদ বৃদ্ধিসহ ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে ঘরে থাকা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এসব হিসাবে জমা বিদেশি মুদ্রার ওপর সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি এই ধরনের হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়া যায়। হিসাবধারী এবং তার ওপর নির্ভরশীলদেরও প্রয়োজনে বিদেশে কয়েকটি খাতে অর্থ খরচের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে খরচ। এসব খাতে খরচের কোনো সীমা রাখেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে শুধু হিসাবধারীরা নিজ প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ নেওয়া ও খরচের সুবিধা পেতেন।
এদিকে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে প্রবাসীদের জন্য। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের নামে খোলা বৈদেশিক হিসাবের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এত দিন শুধু অনুমোদিত চারটি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের হিসাব খোলার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েন। কিন্তু এখন অনুমোদিত মুদ্রার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য সব বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারছেন প্রবাসীরা।
এ ছাড়া যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত ও বসবাস করছেন, তাঁদের যে টাকার হিসাব রয়েছে, তাতেও আমানত বেড়েছে। এ ধরনের হিসাবে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেশ কমে যায়, তবে ডিসেম্বরে আবার তা বেড়ে যায়। আর গত মার্চ শেষে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টে বড় পরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে বিদেশিরা সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে ও এই ধরনের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক হিসাবে ডলার জমা রাখলে এখন সুদ পাওয়া যায়, এ ছাড়া রয়েছে নানা সুবিধা। যাঁরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাঁরাও এখন নিজ নিজ হিসাবে ডলার জমা রাখছেন। এতে মুদ্রার মান কমলেও কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া চীনের বিনিয়োগকারীরা দেশে আসছেন। এই কারণে বিদেশিদের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর। কারণ, অন্য আমানতে যখন এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, তখন ডলার হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।