অভিনন্দন, আজ শুধু তোমাদের শিক্ষাজীবনের বিশেষ দিনটিরই উদ্‌যাপন হচ্ছে না, আজ শুরু হতে যাচ্ছে তোমাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়। চেনা এই প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যে অপার সম্ভাবনার জগতে তুমি পা রাখতে যাচ্ছ, মনে রেখো এটাই হবে তোমার জীবনের সব অধ্যায়ের মধ্য থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এই সফরের শক্তি হবে তোমার বলিষ্ঠ কণ্ঠ। যখন আওয়াজ তুলবে, সেটা যেন এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য হয়, যেখান সত্য ও সততা তোমাকে পথ দেখাবে। ভয়কে কখনো কণ্ঠরোধের সুযোগ দেবে না। সামনের পথ যত কঠিন আর অনিশ্চিতই হোক না কেন, নিজের প্রত্যয়কে দৃঢ় রেখো। তোমার কণ্ঠই তোমাকে ও অন্যদের অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথ দেখাবে।

একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমি সব সময় গল্প বলতে চেয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নারী, পুরুষ, শিশুর গল্প তুলে এনেছি। এই গল্পগুলো তুলে আনতে গিয়ে আমি তাদের জীবনকে কাছ থেকে দেখেছি। পেয়েছি কিছু সহজ-সরল শিক্ষা, আজ সেগুলোই তোমাদের বলব।

নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকো

মাত্র ১৪ বছর বয়সে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। ১৭ বছর বয়সে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিই। ঠিক করি এমন এক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করব, যে বিষয়টা কেউ ঘাঁটতে চায় না। স্পষ্ট মনে আছে, এক ঈদের দিনে আবিষ্কার করলাম বাড়ির আশপাশে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে কেউ আমার বিরুদ্ধে গ্রাফিতি এঁকেছে। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা, আমাকে চুপ করানো আর ভয় দেখানোই ছিল এই গ্রাফিতির উদ্দেশ্য। কারণ, আমি শহরের কিছু প্রভাবশালীর বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছিলাম। আমার অনুসন্ধান তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। আমার বাবা, যাঁর প্রভাব আমার জীবনে অসামান্য, আমাকে সেদিন একটি কথাই শুধু বলেছিলেন, ‘তোমার কথাগুলো যদি সত্য হয়, আমি তোমার সঙ্গে আছি।’ এরপর নিজ হাতে সেদিন প্রতিটা দেয়াল পরিষ্কার করেছিলেন। সেদিন সেই মুহূর্তে শিখেছিলাম, পৃথিবী যতই তোমাকে ভয় দেখাক, ন্যায়ের জন্য সাহস করে দাঁড়িয়ে গেলে সেটাই হবে সবচেয়ে শক্ত হাতিয়ার। আজ যখন তুমি ভবিষ্যতের দোরগোড়ায়, মনে রেখো তোমার একেকটা সিদ্ধান্ত, একেকটা সৎ ও সাহসী পদক্ষেপ তোমাকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলবে। এবার তুমি তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো, অথবা গতানুগতিক ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করো। যে পথই বেছে নাও না কেন, মাথায় রেখো—তোমার সিদ্ধান্ত শুধু তোমার একার নয়, পুরো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকেও বদলে দিতে পারে।

আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অদম্য আর জেদি স্বপ্নগুলো আগলে রাখো

‘প্যাশন’ হলো সেই চালিকা শক্তি, যা তোমাকে জীবনের চড়াই–উতরাইগুলো পার হতে সাহায্য করবে। আমার জীবনে বরাবরই গল্প বলা আর সত্যকে তুলে ধরার অদম্য আকাঙ্ক্ষা ছিল। অনেক প্রত্যাখ্যানের পরও আমি সম্ভবের সীমানা পেরিয়ে অসম্ভবকে অর্জনের স্বপ্ন দেখতাম।

অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও ২০০২ সালে সিদ্ধান্ত নিই—তথ্যচিত্র নির্মাতা হব। প্রথম চলচ্চিত্র বানানোর জন্য প্রস্তাবপত্র লিখে বিশ্বের নানা দেশের ৮০টি টেলিভিশন চ্যানেল ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে পাঠাই। এরপর তাদের জবাবের অপেক্ষা করতে থাকি। আসতে থাকে একের পর এক প্রত্যাখ্যান। আমি লড়তে থাকি নিজের সঙ্গে। নিজের অশ্রু, আক্ষেপ আর মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে।

বুঝতে পারছিলাম না, কেন কেউ ২১ বছর বয়সী একজন নবীন নারী নির্মাতা, যে ঠিকমতো ক্যামেরা ধরতে পারে না, যার সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা নেই, ডিগ্রি নেই, তাকে কাজ দিতে চাইছে না! স্পষ্টত, মানুষ আমার ধারণার চেয়েও বেশি বাস্তববাদী ছিল তখন, যার জন্য এত এত প্রত্যাখ্যান! কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। লেগেই থাকলাম। এরপর একদিন কোনো কারণ ছাড়াই নিউইয়র্ক টাইমস টেলিভিশনের প্রেসিডেন্ট বরাবর একটা অযাচিত ই–মেইল লিখে বসলাম। সঙ্গে দিলাম আমার প্রস্তাবপত্রটিও। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এল ফিরতি ই–মেইল। তাতে লেখা ছিল, আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব সশরীর শোনানোর জন্য আমাকে নিউইয়র্কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

নিউইয়র্কের ট্রেন ধরলাম, আর একদল অভিজ্ঞ সাংবাদিকের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। খুব জলদিই আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব পাস হয়ে গেল। আমাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণও দেওয়া হলো। অবশেষে সফল হলো আমার ৮১তম চেষ্টা। সামনে খুব সহজ দুটি পথ ছিল—হাল ছেড়ে দাও, অথবা নিজের স্বপ্নের পেছনে লেগে থাকো। জীবনে এমন মুহূর্ত অনেক আসবে, যেখানে হতাশ হয়ে মনে হবে হাল ছেড়ে দিই। আমি অনুরোধ করব, তোমরা বড় স্বপ্ন দেখো। প্রতিদিন যেন ঘুম ভেঙে সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটার তাড়না তোমাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুনব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্লকচেইন একাডেমি০৩ নভেম্বর ২০২৪এই পরিচালকের জন্ম পাকিস্তানে, তবে থিতু হয়েছেন কানাডায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য র জ বন জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা

প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।

চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।

আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।

নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।

চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।

চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।

শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সফর ২২ সেপ্টেম্বর, সঙ্গী মির্জা ফখরুলসহ চার রাজনীতিক
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরে সঙ্গী হচ্ছেন ফখরুল, তাহেরসহ চার রাজনীতিবিদ
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মামলা করবেন ট্রাম্প
  • ইসরায়েলি বন্ডে আর বিনিয়োগ নয়—ঘোষণা দিলেন জোহরান মামদানি