রংপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা বৈষম্যবিরোধী নেতাদের পক্ষে এবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন, ইকোপার্ক নির্মাণ ও অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে যে জমিটির বিষয়ে আলোচনা উঠেছে, সে জমির মূল মালিক তিনি। তাঁর জমি দখল হওয়ায় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা অপ্রচার; বরং ওই নেতারা অর্থের প্রলোভন অগ্রাহ্য করে সেখান থেকে চলে আসেন।

আজ রোববার রংপুর নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদেরও প্রশ্নের জবাব দেন আজহারুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার সকালে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে শোনা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা চাইছেন। নাহিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে সংগঠন থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নাহিদ হাসান।

আজহারুল ইসলাম রংপুর নগরের কেরানিপাড়ার বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গঙ্গাচড়ার পূর্ব খলেয়া মৌজায় তাঁর ৪ একর ৫৯ শতাংশ জমি আছে। ২০১৯ সালে তাঁর ভাই আতিকুল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম গং জাল রিটের মাধ্যমে জমিটি দখল করেন। জাল চুক্তি সংগ্রহ করে তিনি আদালতে মামলা করলে আদালত সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য সিআইডিতে প্রেরণ করেন। পরবর্তী সময়ে সিআইডির তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁর ভাইয়েরা জমি থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তিনি কয়েক দফা প্রশাসনে অভিযোগ করেছেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে কয়েক দফা জরিমানাও করা হয়। কিন্তু তিনি জমি উদ্ধার করতে পারেননি। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।

আরও পড়ুনচাঁদা দাবি করে বৈষম্যবিরোধীদের নেতা বললেন, ‘ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে’৮ ঘণ্টা আগে

আজহারুল ইসলামের দাবি, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের নেতাদের দ্বারস্থ হন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে যান। আজহারুলের ভাষ্য, আতিকুল ইসলাম তাঁর গুন্ডা বাহিনী দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বিভিন্ন অনৈতিক অর্থের প্রলোভন দেখান। বৈষম্যবিরোধী নেতারা তাঁদের প্রলোভন অগ্রাহ্য করে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় গোপন কথোপকথনের দৃশ্য ধারণ করে, যা এডিটিং করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঁদাবাজির ভিডিও বলে প্রচার করে।

সংবাদ সম্মেলনের পর আজহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন কোন নেতার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে পারেননি। আজহারুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি কারও দ্বারা প্রভাবিত সংবাদ সম্মেলন করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজহারুলের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তাঁর ছোট ভাই আতিকুল ইসলাম। পারিবারিক ঘটনা হওয়ায় এসব প্রকাশ করতে চাননি উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ হাসান ওখানে চাঁদা দাবি করতে গিয়েছিলেন। তিনি পুলিশ সুপারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। শিগগির আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই কথোপকথনের ভিডিওটি এক সপ্তাহ আগের। রংপুর নগরের হাজিরহাট এলাকায় একটি ইকোপার্কের নামে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। কথোপকথনের কথা স্বীকার করে ইকোপার্কের পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, নাহিদ তাঁর কাছে এক লাখ টাকা চাচ্ছিলেন। তিনি জেলা প্রশাসকের ভয় দেখান, এর ভয় দেখান, ওর ভয় দেখান। ভিডিওটি তাঁরাই করেছিলেন এবং পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে ভিডিওটি তাঁরা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেননি, তা দাবি করেন বেলাল।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, ‘ছয় থেকে সাত দিন আগে অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কারও কাছ থেকে এক টাকাও নিইনি। তাঁরা কোনো প্রমাণও দিতে পারবেন না। এটা পুরোটাই যুবলীগের একটি অংশ সাজিয়েছে। পুরোটাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।’

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না উল্লেখ করে সংগঠন থেকে নাহিদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখ্য সংগঠক আলী মিলনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিন দিনের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজহ র ল ইসল ম অব ধ ব ল কর ছ ন নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিমান দুর্ঘটনার পরই কেন ‘ব্ল‍্যাক বক্স’ খোঁজা হয়, কী থাকে এই যন্ত্রে

সম্প্রতি ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্তের পর বিমানে সংরক্ষিত ‘ব্ল‍্যাক বক্স’টি উদ্ধার করা হয়েছে। যেকোনো বিমান দুর্ঘটনার পর তদন্তের জন্য প্রথমেই ব্ল‍্যাক বক্সের খোঁজ করা হয়। কারণ এই ব্ল‍্যাক বক্সে ফ্লাইটের যাবতীয় তথ্য এবং ককপিটে পাইলট, কো-পাইলট ও অন্যদের কথোপকথন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হয়ে থাকে। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)—এ দুটি ব্ল‍্যাক বক্স থাকে প্লেনের পেছনের দিকে। পাইলটদের হেডসেট ও ককপিটের মাঝামাঝি স্থানে থাকে প্রায় চারটি মাইক্রোফোন। ওদের কাজ হলো সেখানকার কথোপকথন ধারণ করে পেছনের ব্ল‍্যাক বক্সে জমা করা। আধুনিক মডেলের সিভিআরে শেষ দু ঘণ্টা পর্যন্ত কথাবার্তা রেকর্ড থাকে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ব্ল‍্যাক বক্সের বিভিন্ন তথ্য থেকে শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি জানা যায়। এভাবে দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনের মাধ্যমে পরবর্তীকালে ওই ধরনের বিপর্যয় এড়ানোর উপায় বের করা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া সম্ভব ব্ল‍্যাক বাক্স তাই খুব জরুরি।

২০২২ সালে চীনে বিধ্বস্ত একটি বিমান থেকে উদ্ধার করা ব্ল্যাক বাক্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেটা এআই অ্যাপের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের সুবিধা কী গোপনীয়তা উদ্বেগ তৈরি করছে?
  • বিমান দুর্ঘটনার পরই কেন ‘ব্ল‍্যাক বক্স’ খোঁজা হয়, কী থাকে এই যন্ত্রে