শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নিহত গোলাম জাকারিয়া বাদলের জবানবন্দির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় জড়িতদের নাম ওই জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।

জানা গেছে, নিহত বাদলের সহকর্মীরা যখন বুঝতে পারেন বাদলের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম, ঠিক তখনই হাসপাতালে ওই ঘটনায় জড়িতদের নাম জানতে চাইলে বাদল সবকিছু খুলে বলেন। ওই ভিডিওটি এতটাই মর্মস্পর্শী যে, সেটি শুনে শুধু দলীয় নয়, যে কোনো মানুষের চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন হবে। ভিডিওটি ধারণের পরপরই পরপারে পাড়ি জমান বাদল।

ভাইরাল ভিডিওতে নিহত জাকারিয়া বাদলকে বলতে শোনা যায়, বিএনপি নেতা লুৎফর লালন, তালহা, মেহেদি, শাওন, সৌরভ, আক্কাস, বিপু ও শাহীন ঘটনায় জড়িত। তারা বারবার বলছিলেন কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলমের কথা। তিনি নাকি মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে বাদল হত্যা মামলার আসামি কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হযরত আলী ও সদস্য সচিব ফরহাদ আলী স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ওই পত্রে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির সব নেতাকর্মী তাঁর সঙ্গে কোনো রকম সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

নিহত বাদলের স্ত্রী পপি বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি কারাবন্দি কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী এবং ২ নম্বর আসামি ইউনিয়ন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা লুৎফর রহমান। মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ১০-১৫ জনকে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। 

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম। আজ রোববার তিনি বলেন, পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। শিগগিরই জড়িতরা ধরা পড়বে।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গোলাম জাকারিয়া বাদলকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।

বাদল শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। একই ঘটনায় আহত সোহাগ আলম ও রহুল আমিন চিকিৎসাধীন।

নিহত জাকারিয়া বাদলের স্ত্রী পপি বেগমের ভাষ্য, পরিকল্পিতভাবে তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে তিনি সবকিছু বলে গেছেন। স্বামীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।

নূরে আলম কারাবন্দি এবং লুৎফর রহমান পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র ব দল র ঘটন য় ল ৎফর

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ