সম্মেলন ঘিরে মুখোমুখি দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ
Published: 2nd, March 2025 GMT
তিন বছর পর ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সম্মেলন এপ্রিল মাসে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধের কারণে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জেলা বিএনপির একটি পক্ষে রয়েছেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নেতাকর্মীরা। সম্মেলন ঘিরে তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তাদের কোণঠাসা করতে তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে একমঞ্চে সভা করছেন পদবঞ্চিতরা। তারা হলেন–সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুস, অপরজন কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি জেবা আমিনা খান। তাদের নিয়ে নলছিটি ও রাজাপুরে দুটি সভা করা হয়েছে। এ পক্ষে আছেন সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল মন্টু, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুব আলম খানসহ কয়েকজন। দীর্ঘদিন পর তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এতদিনের নিষ্ক্রিয়তার কারণ হিসেবে তারা আহ্বায়ক কমিটিকে দায়ী করেছেন। তাদের দাবি, বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা জেলার সম্মেলন ও কমিটি করতে পারেনি এখন পর্যন্ত। তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেন।
এ পক্ষের জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে দুই-আড়াইশ কোটি টাকার কাজ সমঝোতা করে জেলায় রাজনীতি করা হচ্ছে। সারাবছর বিদেশে থেকে ৫ তারিখের পরে এসে তারাই এখন বিএনপির বড় নেতা। স্বেচ্ছাসেবক দল জেলা বিএনপির কমিটিকে না জানিয়ে ঝালকাঠি ও নলছিটিতে সভা করছে। এসব কি হচ্ছে।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আহ্বায়ক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না মনিরুল ইসলাম নূপুরের সমর্থকরা। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সংস্কারপন্থিদের নেতা হয়েছেন সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো। যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুব আলম খানের বাবা ওয়ারেচ আলী খান ২০২৩ সালের পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেন। দল তাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। বিনয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতিও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছেন। কোনো আন্দোলন সংগ্রামে পাওয়া যায়নি তাদের। এখন তারাই সম্মেলনের কথা শুনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেন্দ্রের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে তারা পকেট কমিটির অভিযোগ করেছে। তাদের কর্মকাণ্ড পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছি।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা আব্দুল আউয়াল মিন্টু জানিয়েছেন, যারা গত তিন বছর আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন না; তারা কোনো পদে আসতে পারবেন না। এ নির্দেশনার পর থেকেই আমার ও আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে কয়েকজন বেশ তৎপর।
সার্বিক বিষয়ে বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শাহাদাৎ বিএনপি নেতা, পিপি তাঁর ভায়রা, নিজে বারের সভাপতি। এখানে কি আর যোগ্য লোক নেই? এক পরিবার থেকে সবাইকে আসতে হবে কেন? অঙ্গসংগঠনের সভায় জেলা কমিটিকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তাদের দাওয়াত দিলে সভার গুরুত্ব হতো। নেতাকর্মীরা এসব প্রশ্ন করছেন বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল