জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এর পর সাভার থেকে রায়েরবাজারে গিয়ে অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করবেন এনসিপির নেতারা। এর মধ্য দিয়ে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

সাভার ও রায়েরবাজারের কর্মসূচিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো.

নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন আজ সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে দলের নির্বাহী কমিটির পরিচিতি সভা হতে পারে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে এনসিপির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর পর শনিবার গভীর রাতে ২১৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে বাম ও ডানপন্থী সাবেক ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ জায়গা পেয়েছেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা মানুষের পাশাপাশি নতুন এই দলের কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন দলিত-হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও।

জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এখন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। কার্যালয় ঠিক হওয়ার আগপর্যন্ত আপাতত রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেই এনসিপির দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

দল ঘোষণার পর এনসিপি এখন নিবন্ধনের শর্ত পূরণের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছে। সে জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কার্যালয় করার কথা ভাবছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা।

এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।’

এনসিপিকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে থাকা সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গটি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তৈরি করেছে।
দল ঘোষণার পরদিন ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘যারা গণপরিষদের বিষয় সামনে আনছে, যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয় সামনে আনছে, হয় তারা বোঝে না অথবা বুঝেও আমাদের এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।’

সর্বশেষ গত রোববার রাজধানীতে এক ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি এখনো বুঝি নাই সেকেন্ড রিপাবলিক কী। কী বোঝায়, আপনারা বুঝেছেন কি না, জানি না? অর্থাৎ, একটা অছিলা ধরে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। দয়া করে খেয়াল রাখবেন।’

বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ নিয়ে নানা বক্তব্য দেওয়া হলেও এনসিপি এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক ন ড র প বল ক এনস প র ব এনপ র আম দ র কম ট র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’

টাঙ্গাইলের কালিহাতীর নারান্দিয়ার বাসিন্দা শেফালী বেগম। সাভারের বাইপাইল এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন তিনি। ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হওয়ায় শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে প্রায় চার ঘণ্টা কালিহাতীর এলেঙ্গায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন এই নারী। বাসে উঠতে না পেরে কর্মস্থলে যেতে তাকে উঠতে হয় পিকআপ ভ্যানে। ২০০ টাকার জায়গায় ৩৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে রওনা হন গন্তব্যে। 

যাত্রা শুরুর আগে শেফালী বলেন, “গরম ও সড়কের ধুলাবালিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সড়কে চার ঘণ্টা দাঁড়িয় থেকে উপায় না পেয়ে পিকআপে করে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।” 

শুধু শেফালী নয়, তার মতো লাখ লাখ মানুষ আজ দিনভর ভোগান্তি নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শত শত মানুষকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কেউ ২ ঘণ্টা, কেউ ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন গণপরিবহনের জন্য।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ

সিরাজগঞ্জে গাড়ির অপেক্ষায় কর্মস্থলে ফেরা মানুষ

জুলেখা বেগম বলেন, “আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। উত্তরবঙ্গ থেকে শত শত বাস আসছে, কিন্তু কোনো বাসেই পা ফেলানোর মতো জায়গা নাই। গরমও সহ্য হচ্ছে না।”

কর্মস্থলে ফিরতে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের একাংশ 

ইকবাল আলী বলেন, “মহাসড়কে ভোগান্তি ছাড়া কিছুই দেখছি না। পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।”

হারুন মিয়া নামে এক ট্রাক চালক বলেন, “সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। স্বাভাবিক সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।”

এর আগে, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল হওয়ায় যমুনা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তা কমে ১৪ কিলোমিটারে আসে। এছাড়া, মহাসড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক ও পিকআপে গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ। সব মিলিয়ে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন যমুনা সেতা পারাপার করেছে। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।” 

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’