শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে শিক্ষা বিভাগ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, এবার বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু এই দেরি এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। শিক্ষাবর্ষের দুই মাস পেরিয়ে তৃতীয় মাস শুরু হলেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৬ কোটি ৩৮ লাখের বেশি বই সরবরাহই করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই ৬ কোটি ২২ লাখের মতো।

অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থী সব বই পাবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দিতে কমপক্ষে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বই পেতে যতই দেরি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতিও বাড়ছে।

এরই মধ্যে পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিদ্যালয়গুলোতে লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সব পাঠ্যবই হাতে পেতে অপেক্ষাও দীর্ঘ হচ্ছে। কারণ, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সব বিদ্যালয়ে অবশিষ্ট বই সময়মতো দেওয়া যাবে কি না, সে প্রশ্নও আছে।

অবশ্য এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যালয় ছুটি হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া যাবে। তাঁরা উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠাচ্ছেন। সেখান থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বই সংগ্রহ করে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করবেন।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই ছাপিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে বই ছাপার কাজ দেরি হবে, তা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু দরপত্র, অনুমোদন, চুক্তির মতো কাজগুলোও যথাসময়ে না করায় এবং কাগজসংকটের কারণে তা আরও বেশি দেরি হচ্ছে।

এনসিটিবির সূত্রমতে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ২ মার্চ পর্যন্ত মাধ্যমিকের ২৭ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার বই ছাপা হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহের অনুমোদন (পিডিআই) দেওয়া হয়েছে ২৪ কোটি ১৭ লাখ ৭২ হাজারের মতো পাঠ্যবই। এই হিসাবে ৬ কোটি ২২ লাখ ২৮ হাজারের মতো পাঠ্যবই এখনো সরবরাহই করতে পারেনি এনসিটিবি।

প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। এর মধ্যে ৯ কোটি ৩ লাখ ৪৪ হাজারের মতো বই সরবরাহের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখনো ১৬ লাখের মতো বই সরবরাহ হয়নি।

প্রসঙ্গত, পাঠ্যবই ছাপা হওয়ার পর সেগুলোর মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ওবাইদুল্লাহ প্রথম আলোকে জানান, এখনো নবম শ্রেণির দু-একটি বিষয়ের বই পেতে বাকি। তবে বাকি শ্রেণিগুলোর বই পেয়েছেন।

এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন দেরির কারণ হলো কাগজের সংকট। মুদ্রণকারীরা চীন থেকে আট হাজার টন কাগজের বুকিং দিয়েছেন। দুই হাজার টন কাগজ পাওয়া গেছে। আর দুই হাজার টন আজ-কালের মধ্যে পাওয়া যাবে। এরপরও চার হাজার টনের মতো কাগজ আসতে বাকি। এ রকম অবস্থায় মুদ্রণকারীরা অন্য জায়গা থেকেও কাগজ কিনতে চাইছেন না। কারণ, তাতে তাঁদের লোকসান হবে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন ১০ মার্চের মধ্যে সব বই দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে মুদ্রণকারীদের আন্তরিকতা প্রয়োজন। তাঁরা যদি ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজটি দ্রুত করে দেন, তাহলে এটি সম্ভব। ইতিমধ্যে মুদ্রণকারীদের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। তাই যাঁরা পূর্ণ ও আংশিক সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের বিষয়ে এক রকম ব্যবস্থা এবং যাঁরা অসহযোগিতা করছেন, তাদের বিষয়ে আরেক রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুদ্রণকারী বলেন, কাগজসংকটের কারণে ১০ মার্চও সব

বই দেওয়া সম্ভব হবে না। এ ছাড়া এবার এনসিটিবির কর্মপরিকল্পনায় ভুল ছিল। ফলে বই দিতে দেরি হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র র মত ম দ রণক র এনস ট ব র হ জ র টন প ঠ যবই বই ছ প পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের
  • বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি অসম্ভব উদ্বেগের জায়গায় যাচ্ছে