গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তুত
Published: 4th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা থেকে লোকজনকে উৎখাত করে এর নিয়ন্ত্রণ নিতে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তার বিকল্প প্রস্তুত করেছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি গত রোববার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মিসরের পক্ষ থেকে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তা আজ মঙ্গলবার কায়রোতে জরুরি আরব সম্মেলনে উত্থাপন করা হবে। এ প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হতে হবে না।
আজ মিসরের কায়রোতে আরব লিগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিকল্প পরিকল্পনা হাজির করতে যাচ্ছে মিসর।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে গাজা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। যুদ্ধপরবর্তী গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। গাজা জোরপূর্বক খালি করার পরিকল্পনাও রয়েছে ট্রাম্পের। তাঁর এমন পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি রিয়াদে বৈঠক করেন আরব নেতারা। তাঁরা গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এ পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কয়েক দশকের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে। সেই সঙ্গে এটা গাজার বাসিন্দাদের অধিকারকে পদদলিত করবে। এটি সহিংসতার আঞ্চলিক চক্রকে স্থায়ী রূপ দিতে পারে। তবে আরব দেশগুলো ট্রাম্পের পরিকল্পনার কূটনৈতিক জবাব দিতে একমত হতে পারছে না।
আজ মিসরের কায়রোয় আরব লিগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিকল্প পরিকল্পনা হাজির করতে যাচ্ছে মিসর।
ইসরায়েল ও হামাসের প্রথম ধাপের নাজুক যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ট্রাম্প ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর পরিকল্পনা সামনে আনেন। এ পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্যনীতি, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান থেকে তিনি সরে আসেন। তাঁর এই নীতি বদল ফিলিস্তিন ও আরব দেশগুলোকে ক্ষুব্ধ করে।
আবদেলাত্তি বলেন, মিসর তাদের পরিকল্পনার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন ও তহবিল চাইবে। এ ছাড়া গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়নে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেবে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) কমিশনার ডুবরাভকা সুইকার সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদেলাত্তি বলেন, ‘আরব শীর্ষ সম্মেলনে পরিকল্পনাটি গৃহীত হওয়ার পর আমরা প্রধান দাতা দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করব।’
ছয় সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে অচলাবস্থা তীব্রতর হওয়ায় গত রোববার গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। আবদেলাত্তি বলেন, ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ আর রাখা হবে না।
আরব শীর্ষ সম্মেলনে পরিকল্পনাটি গৃহীত হওয়ার পর আমরা প্রধান দাতা দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করব।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তিযুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয়। গত শনিবার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের জন্য আলাপ–আলোচনার অর্থ হলো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। অবশিষ্ট সব জীবিত জিম্মির মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো শুরু হয়নি। দ্বিতীয় ধাপ শুরুর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়ে আগামী ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িক বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করেছে ইসরায়েল সরকার। আবদেলাত্তি সম্মত হয়ে মূলত যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এটা কঠিন হবে। তবে সদিচ্ছা ও রাজনৈতিক সংকল্পে এটি অর্জন করা সম্ভব।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আজকের সম্মেলনের পর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যরাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সৌদি আরবে একটি জরুরি বৈঠক করবেন। ট্রাম্পের বিকল্প প্রস্তাব কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা নিয়ে সেখানে আলোচনা করা হবে।
গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধে জাতিসংঘ ও আরব দেশের নিন্দা
গাজায় ত্রাণ ও পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছে মিসর ও কাতার। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করতে কাতার ও মিসর উভয় দেশই সাহায্য করেছিল। জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস মানবিক সহায়তার সরবরাহ চুরি করছিল এবং এগুলোকে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের কাজে ব্যবহার করেছিল। এ কারণেই তাঁর দেশ পদক্ষেপ নিয়েছে। নেতানিয়াহুর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস।
হামাসের এক মুখপাত্র বলেন, গাজায় ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি ‘সস্তা ব্ল্যাকমেল’ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে একটি ‘অভ্যুত্থান’।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে ১৫ মাস ধরে চলা লড়াই বন্ধ হয়েছে। এ চুক্তির অধীনে প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়েছে হামাস।
সৌদি আরব ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা ও সমালোচনা করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তাবিষয়ক প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট: আমাদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহের অনুমতি দিতে হবে।’
ইসরায়েলি হামলা চলছে
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও চলছে ইসরায়েলি হামলা। সর্বশেষ হামলায় গত রোববার আরও চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কয়েকজন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র আবদ ল ত ত ব কল প প ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।