২০ লাখ পাউন্ড লভ্যাংশ বিতরণের মাইলফলক স্পর্শ করল সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড (এসবিইউকে)। বাংলাদেশের শেয়ারহোল্ডার অর্থ মন্ত্রণালয় ও সোনালী ব্যাংক পিএলসিকে এই লভ্যাংশ যথাক্রমে ৫১ ও ৪৯ শতাংশ বিতরণ করেছে অ-ব্যাংক আর্থিক এই প্রতিষ্ঠানটি। এসবিইউকের এমন উন্নতি প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্থিতিশীলতা, কৌশলগত পুনর্বিন্যাস, বাংলাদেশের প্রতি আস্থার প্রমাণ ও নিয়মিত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মুবারেকের সঙ্গে বৈঠক করেন এসবিইউকের চেয়ারপারসন মো, আশাদুল ইসলাম ও সোনালী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারপারসন মো.

মুসলিম চৌধুরী। বৈঠকে সচিব নাজমাকে লভ্যাংশ অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া এসবিইউকের প্রতিনিধিরা ব্যাংকিং লাইসেন্স হারানোসহ অতীতের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। তারা ব্যাংক হিসেবে এসবিইউকের ঐতিহাসিক অধিকার পুনরুদ্ধার নিয়ে আলাপ করেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংক পিএলসির সিইও ও এমডি মো. শওকত আলী খান, এসবিইউকের সিইও মাসুম বিল্লাহ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস ও যুগ্ম সচিব শেখ ফরিদ।

এসবিইউকের নেতৃত্ব সোনালী ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে এই বৈঠকটি এসবিইউকে এবং বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

অন্যদিকে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এসবিইউকের চেয়ারপারসন মো. আসাদুল ইসলাম। এ সময় তারা এসবিইউকের কৌশলগত দৃষ্টি এবং যুক্তরাজ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের আর্থিক চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে পূর্ণসেবা ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় এসবিইউকে। প্রতিষ্ঠার পর ব্যাংকটি থেকে খুচরা বা ডিটেইল ব্যাংকিং, বাণিজ্যিক আর্থিক সেবা এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধা দেওয়া হতো। তবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ওঅপারেশনাল আনয়মের কারণে ১৯৯৯ সালে বিদেশি শাখার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ফলে এটি সোনালী ট্রেড অ্যান্ড ফাইন্যান্স ইউকে লিমিটেড হিসেবে পুনর্গঠিত হয়।

২০০০১ সালে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড একটি নতুন ব্যাংকিং লাইসেন্সের অধীনে কাজ শুরু করে। যেটি ইস্যু করে ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস অথোরিটি (এফএসএ)। এরপর ব্যাপক রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এসবিইউকে। ফ্রেমওয়ার্কে ত্রুটির কারণে ২০১৬ সালে ব্যাংকটিকে ৩ দশমিক ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা করে ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথোরিটি অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল)। পরবর্তীতে নতুন জমা গ্রহণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ও এএমএলের ওয়াচলিষ্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ব্যাপক পুনরুদ্ধার উদ্যোগের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন পাউন্ড মূলধন প্রবাহিত হওয়ায় ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি ওয়াচলিস্ট থেকে বের হয়।

তবে চলমান রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথোরিটির (পিআরএ) মাধ্যমে সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেডের ব্যাংকিং লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এই রেগুলেটরি জটিলতার মধ্যেও, এসবিইউকে ‘প্রজেক্ট ফিনিক্স’ এর অধীনে একটি কৌশলগত রূপান্তরে যাত্রা শুরু করে। ফলে ট্রেড ফাইন্যান্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসেবার দিকে মনোনিবেশ করে। ফলে এটি একটি নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনষ্টিটিউশনে (এনবিএফআই) পরিণত হয়। এই পরিবর্তনটি ২০২২ সালের আগষ্টে ব্যাংকিং অনুমোদন বাতিলের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হয় এবং পরবর্তীতে এটি সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড নামে রূপান্তরিত হয়।

রূপান্তরের পর থেকে এসবিইউকে অসাধারণ আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে প্রি-ট্যাক্স মুনাফা হিসেবে ১ দশমিক ৫ পাউন্ড মিলিয়ন রিপোর্ট করে, যা ২০২৩ সালে ৮ মিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছেছে। এটি তার কৌশলগত পুনর্গঠন, ব্যয়-কার্যকরী ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রমাণ। ২০২৩ সালে ট্রেড ফাইন্যান্স থেকে আয় প্রতি মাসে ১ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়, যা প্রতিষ্ঠানটিকে মোট ১ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন পাউন্ড আয় করতে সহায়তা করেছে। এটি বছরে ১০৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিফলন।

এছাড়াও অপারেটিং খরচ ২০২৩ সালে কৌশলগতভাবে ৩৭৭ মিলিয়ন পাউন্ডে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা পূর্বাভাসকৃত বাজেটের তুলনায় ৪ শতাংশ কম এবং বছরে ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই আর্থিক উন্নতির কারণে এসবিইউকে তার শেয়ারহোল্ডারদের ২ মিলিয়ন পাউন্ড ডিভিডেন্ড দিতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে স্টেকহোল্ডারদের জন্য টেকশই মান দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে করেছে শক্তিশালী।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প উন ড এসব ইউক এসব ইউক র ফ ইন য ন স আর থ ক প র আর থ ক ক শলগত

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিপাক্ষিক কাজ করবে বেসিস-কোরিয়া

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ এবং কোরিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে বেসিস কোরিয়া ডেস্ক ঘোষণা করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া উদ্ভাবনমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি দেশ, যেখানে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের জন্য রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশি আইসিটি খাতের সব প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কার্যকর অংশীদারিত্ব বাড়াতে পারবে। বেসিস কোরিয়া ডেস্ক হবে কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় ও যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ সহজ ও বাজার সম্প্রসারণের দ্বার উন্মোচিত হবে।

নতুন ডেস্ক প্রসঙ্গে বেসিস সহায়ক কমিটির সদস্য (অর্থ) ফৌজিয়া নিগার সুলতানা বলেন, বেসিস কোরিয়া ডেস্কের সদস্যরা এখন থেকে উদ্ভাবনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যার মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘কোরিয়া ডে’ পালন, কোরিয়ান বাজারে প্রবেশে নীতিগত সহায়তা, কোরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার সঙ্গে সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যৌথ উদ্যোগ বা ফ্র্যাঞ্চাইজিংয়ের সুযোগ তৈরি হবে।

উদ্যোক্তারা বলেন, নতুন ডেস্কের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রাপ্ত ব্যবসায়িক অনুসন্ধান বা লিড সদস্যের মধ্যে শেয়ার করা হবে, কোরিয়াভিত্তিক কয়েকটি আইসিটি ইভেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। অন্যদিকে কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে নেটওয়ার্কিং ও বিটুবি সেশনের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে প্রকল্প গ্রহণ ও কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কয়কা), কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন এজেন্সির (কট্রা) মতো কোরিয়ান উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক দুদেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধা উপস্থাপন করে বলেন, বেসিস কোরিয়া ডেস্ক আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের মাইলফলক হবে। বেসিস-কোরিয়া ডেস্ক কোরিয়ার রপ্তানি বাজারকে সমৃদ্ধ করবে। নতুন উদ্যোগ দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা ফলপ্রসূ হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্মসচিব (আইসিটি প্রমোশন ও গবেষণা অনুবিভাগ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো: তৈয়বুর রহমান বলেন, বেসিস কোরিয়া ডেস্ক শুধু প্ল্যাটফর্ম নয়: বরং বেসিস সদস্যসহ বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য অপার সম্ভাবনার ইঙ্গিত করছে। বেসিস-কোরিয়া ডেস্কের উদ্যোগ বাংলাদেশকে শক্তিশালী আইটি হাব রূপান্তরে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

বেসিস-কোরিয়া ডেস্কের চেয়ারম্যান অ্যাডওয়ার্ড কিম বলেন, বাংলাদেশি ও কোরিয়ান প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে কৌশলগত বন্ধুত্ব তৈরিতে কাজ করবে ডেস্কটি। নতুন ডেস্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যেকার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের সেক্টরে পারস্পরিক ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রিলিয়ন-ডলারের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি ও ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) কৌশলগত সহযোগিতার জন্য আদর্শ মডেল তৈরি করেছে। বাংলাদেশ তার দৃঢ়, প্রাণবন্ত তরুণ জনগোষ্ঠী ও সংস্কারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্ভাবনী প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।

সভাপতির বক্তব্যে বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির বলেন, বেসিস-কোরিয়া ডেস্ক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে কোরিয়ার বিশাল বাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করা। ফলে প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা আমাদের আইটি পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ দ্রুত বাস্তবায়ন যে কারণে জরুরি
  • দ্বিপাক্ষিক কাজ করবে বেসিস-কোরিয়া
  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • দুই হাজারি ক্লাবে গিয়ে মিরাজের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি
  • এবার হাজার কোটি টাকার মুনাফার ক্লাবে সিটি ব্যাংক
  • হাজার কোটি টাকা নিট মুনাফার মাইলফলকে সিটি ব্যাংক
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • খাল-ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়
  • আইপিএলে আরও ম্যাচ বাড়ানোর পরিকল্পনা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে