বেড়াতে আসা বন্ধুকে তুলে দিলেন অপহরণকারীদের হাতে, এরপর যেভাবে উদ্ধার
Published: 4th, March 2025 GMT
বগুড়া জেলার মো. সবুজের সঙ্গে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবদুল আমিন নামের তরুণের পরিচয় হয় দুই বছর আগে। বন্ধুত্বের সূত্রে একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া-আসাও করতেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আবদুল আমিনের আমন্ত্রণে সবুজ তাঁর ভাইয়ের ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে টেকনাফে বেড়াতে আসেন। বেড়াতে আসার পর বন্ধু সবুজ ও তাঁর ভাইপো মেহেদীকে কৌশলে রোহিঙ্গা অপহরণ চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দেন আবদুল আমিন। এরপর অপহরণকারীরা দুজনকে নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও ধারণের পর সবুজের স্ত্রীর কাছে পাঠায়। এ সময় দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। সবুজের স্ত্রী মুক্তিপণ হিসেবে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাঠান। তবে এরপরও দুজনের মুক্তি মেলেনি।
এ ঘটনায় ২ মার্চ মো.
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলম (৩৫), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মো. ইউসুফ (৩০) ও মৌলভীবাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফয়সাল (১৯)।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সবুজ ও মেহেদীকে অপহরণকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়া আবদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় অপহরণকারীর একটি পুরো চক্রকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অপহরণ চক্রের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, অপহরণকারী চক্রের অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেকনাফের বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকার মেরিন ড্রাইভে গাড়িসহ ইজিবাইকের কিশোর চালক মোহাম্মদ ফারুককে (১৬) অপহরণ করা হয়। তাকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফারুক টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের লামার বাজার এলাকার নুরুল হকের ছেলে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ নিয়ে গত ১৪ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২২৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে একই সময়ে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮৭ জনকে অপহরণ করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জ র এল ক র অপহরণক র য় অপহরণ সব জ ও সব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’