দলীয় প্রতীকে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাদের নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হতে হয়। এ নিবন্ধন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করার বিধান আছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এসব শর্ত কিছুটা সহজ করার সুপারিশ করেছে।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করা হয়। এ জন্য জাতীয় নির্বাচন–সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়।

ওই আইন অনুযায়ী, কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক–তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় থাকতে হবে এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।

এসব শর্তে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। অন্তত এক–দশমাংশ জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয় এবং অন্তত ৫ শতাংশ উপজেলায় বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর কার্যালয় থাকতে হবে। দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম পাঁচ হাজার ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে দেশের অন্তত ২২টি জেলায় জেলা কার্যালয় এবং ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় থাকতে হয়। আর সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নিবন্ধন পেতে হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে অন্তত ৭টি জেলায় এবং ৬১টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকলেই হবে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সময় বিদ্যমান শর্তগুলো কতটা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তখন নিবন্ধনের জন্য ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ১২টি দলের মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের দুটি ‘ভুঁইফোড়’ দলকে।

জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় ছাড়াও নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান থাকতে হয়। যেমন কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা, সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ নারীদের জন্য নির্ধারিত রাখা এবং পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষমাত্রা অর্জন করা, শিক্ষক–শিক্ষার্থী বা শ্রমিক ও অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না থাকা ইত্যাদি।

সংস্কার কমিশনও নিবন্ধন পেতে গঠনতন্ত্রে কিছু বিধান রাখার শর্ত দেওয়ার কথা বলেছে। সেগুলোর মধ্যে আছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য গোপন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা; দলের সব সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের তালিকা দলের ওয়েবসাইটে দেওয়া; রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও শ্রমিক সংগঠন, ভাতৃপ্রতিম বা অন্য যেকোনো নামে না রাখা; ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্টের অধীন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিক/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা, অর্থ পাচার) মামলায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য করা ইত্যাদি।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলেছে, বিদ্যমান আইনে নিবন্ধনের শর্ত অনেক কঠিন। কেউ কেউ নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই বলেও মত দিয়েছিলেন। সংস্কার কমিশনও মনে করেছে, বিদ্যমান আইনে নিবন্ধনের শর্ত কঠিন। তাই নিবন্ধনের শর্ত কিছুটা সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সদস য ন বন ধ পর য য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ

দুই মাসের মধ্যে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা’ পরিবর্তন করল সরকার। সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সংশোধিত বিধিমালা গেজেটে প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ -এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এতে অন্যান্য বিষয়বস্তুর পাশাপাশি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল।

এরপর ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন সভা, সেমিনার, বিক্ষোভ সমাবেশে সংগীত শিক্ষকের বদলে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি করেন। সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করা না হলে তাঁরা আন্দোলনেরও হুমকি দেন।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে কেন সংগীত শিক্ষক, বিরোধিতায় কারা, কী বলছেন শিক্ষকেরা২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গত আগস্টে জারি করা বিধিমালায় চার ধরনের শিক্ষকের কথা বলা ছিল। সেগুলো ছিল প্রধানশিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক (সংগীত) ও সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা)। সংশোধিত বিধিমালায় কেবল প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ