ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবীদের ভিড়ে কিছু পেশার অবদান সবসময়েই রয়ে যায় পর্দার আড়ালে। এমনই এক খাতে বছরের পর বছর নীরবে কাজ করে চলেছেন সাবিহা সুলতানা স্বপ্না। বিগত ১৬ বছর যাবত তিনি কাজ করে চলেছেন পরিবহন খাতে লজিস্টিকস নিয়ে। পুরুষপ্রধান এই খাতে শক্ত হাতে পরিচালনা করে চলেছেন নিজ মালিকানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- শাওনশন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। 

বগুড়ায় জন্ম নেওয়া সাবিহা সুলতানা ২০০৯ সালে যোগ দেন লজিস্টিকস ইন্ডাস্ট্রিতে। সেই থেকে তিনি এগিয়ে চলছেন। কাজ করেছেন ইউনিলিভারের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বর্তমানে ভাবছেন দেশের বাইরেও ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা। 

অগ্রগামী হিসেবে নিজের ভাবনা নিয়ে সাবিহা বলেন, সততার সঙ্গে পথ দেখাও, নিজের কাজের মাধ্যমে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করো এবং প্রতিটি প্রতিকূলতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে আরও শক্ত করে গড়ে তোলো।  

তিনি বলেন, নেতৃত্ব দেওয়া মানে শুধু শক্তি প্রদর্শন নয়, ক্ষমতার ব্যবহার নয়, বরং নিজের প্রকৃত ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। এর মাধ্যমে শুধু অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার মনোভাব থাকলে হবে না বরং গড়ে তুলতে হবে এমন উদাহরণ যাতে অন্যরাও নেতৃত্ব প্রদানে উৎসাহিত হয়।

পুরুষপ্রধান ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গিয়ে বার বারই প্রত্যাখ্যানের মুখ দেখেছেন সাবিহা সুলতানা। শুরুটা করেন মাত্র দুটি ট্রাক, আর অল্প কিছু সেবাগ্রহীতা এবং বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি আকারের ব্যবসায়ীদের উপকারে ঝামেলাবিহীন উপায়ে পণ্য পৌঁছে দেওয়াই ছিল তার লক্ষ্য। তিন বছরের মাঝে তার ব্যবসার পরিধি বাড়ে। দুইটি থেকে দশটি ট্রাক নিয়ে তিনি ব্যবসা চালাতে থাকেন প্রায় ত্রিশটি শহরে। এতে দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়, কমে আসে খরচ, আরও বেড়ে যায় তার ব্যবসার আওতা। উদ্যোক্তা হিসেবে তা ছিল তার জন্য বড় এক স্বপ্নপূরণ। 

শুধু নিজের লক্ষ্যপূরণ নয়, বরং নারী নেতৃত্বে চালিত অন্যান্য ব্যবসার উপকারেও কাজ করতে চান সাবিহা সুলতানা। যেসব নীতিমালা ব্যবসা, সমাজ ও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে, সেসব নীতিমালা প্রণয়নে নারীর কণ্ঠস্বর উঠে আসবে, এই আশা করেন তিনি। বর্তমানে প্রযুক্তি অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এই প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেন নারীর জন্য আরও নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করে, তা নিশ্চিত করতে হবে, তিনি বলেন।

এই যুগেও নারী ও পুরুষের মাঝে অনেক বৈষম্য রয়ে গেছে। চাকরির ক্ষেত্রে বেতনের পরিমাণে, পদোন্নতি এবং নেতৃত্বস্থানে আজও পেছনে পড়ে আছেন নারীরা। ঘুচিয়ে দিতে হবে এই বৈষম্য। ব্যবসা ক্ষেত্রে আরও বেশি নারীকে এগিয়ে আসতে হবে, পরিবর্তন আসতে হবে তাদের হাত ধরেই বলে মনে করেন সাবিহা সুলতানা স্বপ্না।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ‘এক্সেলারেট অ্যাকশন-এম্পাওয়ার্ড ওমেন, এম্পাওয়ারিং দ্য ফিউচার’ ক্যাম্পেইনের অধীনে সাবিহা সুলতানার সংকল্প ও ইচ্ছা শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

সাবিহা সুলতানার মতো অগ্রগামী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে আরও অনেক নারীর। তাদের উদ্দেশ্যে সাবিহার উপদেশ, ‘সামনে আগাতে থাকো। প্রতিটি প্রতিকূলতা তোমাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। একাগ্রতা থেকেই আসে উন্নতি, আর সাফল্য তো তারই প্রাপ্য যে সহজে সন্তুষ্ট হয় না। নিজের অবস্থানে দৃঢ় থাকো, লক্ষ্যে নিবিষ্ট থাকো, পরিশ্রম অব্যাহত রাখো। তোমার অগ্রযাত্রাই তোমার শক্তি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবস ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে: তারেক রহমান

করিডর দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জনগণের কাছ থেকে আসতে হবে বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মহান মে দিবসে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে ‘করিডর’ নিয়ে কথা বলেন তারেক রহমান। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর জন্য ‘মানবিক করিডর’ স্থাপন নিয়ে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, করিডর দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে। সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।’

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এই সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে লিপ্ত মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার নাকি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি।

দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না কিংবা নেওয়া উচিত কি না, এই মুহূর্তে সেই বিতর্ক তুলতে চান না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট—বিদেশিদের স্বার্থ নয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার আগে দেশের জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।

ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর এ বছর রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে সহনীয় থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান। তবে তিনি বলেন, রমজান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার চাল ও তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চাল–তেলের দাম বেড়েছে কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। তাহলে জনগণ এখন তাদের এমন ভোগান্তির কথা কার কাছে, কোথায় কীভাবে বলবে?

নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে সমাবেশে নেতা-কর্মীদের একাংশ। ঢাকা, ১ মে

সম্পর্কিত নিবন্ধ