যুবদলের কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, বিএনপি নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ
Published: 6th, March 2025 GMT
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এর মধ্যে এক পক্ষ ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে, অন্য পক্ষ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ওছখালীতে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। কমিটি গঠনে ক্ষুব্ধ অংশের নেতা-কর্মীরা কমিটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান ওরফে শামীমকে হাতিয়াতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। তাঁরা এ সময় বিএনপি নেতা মাহবুবের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, হাতিয়া উপজেলা যুবদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীন, উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুর ইসলাম, হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের বিদায়ী সদস্যসচিব মো.
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর ওই কাজটি করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমানের ইশারায়। কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় নেতাদের কারও সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। যাঁদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাঁরা গত ১৭ বছর দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে ছিলেন না। তাই অবিলম্বে ঘোষিত কমিটি বাতিল করে দলের ত্যাগী ও যোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান ওরফে শামীমকে হাতিয়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
অন্যদিকে একই দিন দুপুর ১২টার দিকে হাতিয়া উপজেলা যুবদলের নবঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ও সদস্যসচিব ফাহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মাহবুবুর রহমান শামীমের অনুসারীরা পাল্টা আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা এ সময় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তবে এ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে বিষয়টি নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। পরে একই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ঘোষিত কমিটির বিপক্ষে বিক্ষোভের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় যুবদলের পক্ষ থেকে হাতিয়া উপজেলা ও হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মো. ইসমাইল হোসেনকে আহ্বায়ক ও ফাহিম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে হাতিয়া উপজেলা যুবদলের কমিটি এবং মোমিন উল্যাহকে আহ্বায়ক এবং কাউসার মোস্তফাকে সদস্যসচিব করে পৌরসভা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক ন দ র য় সদস যসচ ব ঘ ষ ত কম ট য বদল র স কম ট র প রসভ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।