টেকনাফের ছয়টি ট্রলারের মাছ ও মালামাল লুট করেছে ‘মিয়ানমারের নৌবাহিনী’
Published: 6th, March 2025 GMT
কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় বাংলাদেশের জেলেদের ছয়টি ট্রলারের মিয়ানমারের নৌবাহিনী লুটপাট চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার সেন্ট মার্টিন উপকূলে মাছ ধরার সময় ৬টি ট্রলারসহ প্রায় ৫৬ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ছেড়ে দেন মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা। তবে তাঁদের ছেড়ে দিলেও ট্রলারের মাছ, তেল, জাল ও খাদ্যসামগ্রী সে দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা লুট করে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিরে আসা জেলেরা।
জেলেরা জানান, বুধবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে জেলেরা মাছ ধরার সময় তাঁদের ট্রলারসহ মিয়ানমারের নৌবাহিনী সে দেশের জলসীমায় ধরে নিয়ে যায়। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে সেন্ট মার্টিনের ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার জলসীমানা থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ তথ্য জেনেছেন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, স্থানীয় জেলে ও ট্রলার মালিক সমিতির লোকজন ছয়টি ট্রলার ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি তাঁকে নিশ্চিত করেছেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়া ঘাটে এসে নোঙর করেছে ট্রলারগুলো। তবে ট্রলারের ১০-১২ লাখ টাকার রূপচাঁদা, ইলিশ, তেল, জাল ও খাদ্যসামগ্রী কেড়ে নিয়েছেন মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা। কয়েকজন জেলেকে মারধরও করা হয়েছে।
ওই ছয়টি ট্রলারের মালিক হলেন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা বশির আহমদ, মো.
ফেরত আসা ট্রলারের কয়েকজন জেলে বলেন, বুধবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মৌলভীর শীল নামের এলাকায় মাছ ধরছিলেন তাঁরা। এ সময় হঠাৎ করে চারটি স্পিডবোট নিয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের ধাওয়া করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। সে সময় ছয়টি ট্রলারে ৫৬ জন জেলে ছিলেন। সবাইকে ধরে নৌবাহিনীর জাহাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কয়েকজন জেলেকে মারধরও করা হয়। পরে ট্রলারে থাকা ১০-১২ লাখ টাকার রূপচাঁদা, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, তেল, জাল ও খাদ্যসামগ্রী কেড়ে নেয় মিয়ানমারের নৌবাহিনী।
শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়ার ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, ‘সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেদের মাধ্যমে ওই ঘটনা জানতে পেরেছি। এরপর বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে জানানো হয়। জেলেরা নিরাপদে ফিরে এলেও ট্রলারে থাকা মাছ, জাল, তেল ও খাদ্যদ্রব্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
ট্রলারে লুটপাট ও জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন জেলে তাঁকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাঁদের ট্রলারের মাছ ও মালামাল লুট করেছে। তবে ৬টি ট্রলারসহ ৫৬ জেলেদের ধরে নেওয়ার পর আবার ছেড়ে দিয়েছে তারা। বর্তমানে শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়া ঘাটে অবস্থান করছেন জেলেরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তাঁরা বাংলাদেশি জেলেদের ছেড়ে দিয়েছে।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য আরাকান আর্মি গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে হামলা চালিয়ে রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৩টির নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে সে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপসহ সীমান্তের অধিকাংশ এলাকায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল। রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তে বর্তমানে অনেকটাই কোণঠাসা মিয়ানমারের সেনা ও নৌবাহিনী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।