Samakal:
2025-06-16@08:18:27 GMT

গাছের জন্য মায়া

Published: 7th, March 2025 GMT

গাছের জন্য মায়া

গাছের গল্প  বলো, নতুন গল্প বলো, নতুন গল্প দিদুন। ইভুর আদুরে জেদি আবদার। 
দিদুন মুচকি হেসে ইভানকে পাশে বসিয়ে শুরু করলেন গল্প। ‘শোন ইভু বলছি তোকে আগরগাছের কথা। সিলেটের মৌলভীবাজারের বড়লেখার সুজানগর। এর আশপাশে এই দামি গাছের বিপুল চাষবাস হয়। পাড়া মহল্লায় উঠোনে আনাচে কানাচে আগরগাছের ছড়াছড়ি। কী আদর! কী আদর! এই গাছের নির্যাস থেকে তৈরি হয় মহামূল্যবান আতর। জানিস, দেশ বিদেশে বাংলাদেশের আতরের সুনাম আছে। এই আতরশিল্প আমাদের গৌরব। এর আর এক নাম তরল  সোনা।’
ইভানের চোখ ঘুরছে লাটিমের মতো। উজ্জ্বল চনমনে ছোট্ট মুখটা। ‘দিদুন, কেমন করে গাছ থেকে আতর হয়?’ 
‘বলছি রে পাগলা লম্বা চওড়া ইতিহাস! নিষ্ঠুর কায়দায় আগরগাছের সারা শরীর ফানা ফানা করে আতর সুবাস নিঙড়ে নেওয়া হয় ইভু। গাছের বয়স ছয়-সাত বছর হলে ওর শরীরে এক ইঞ্চি পর পর পেরেক ঠুকে দেওয়া হয় রে। ব্যথায় বাকলের করুণ দশা হয়। এইভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পাঁচ থেকে সাত বচ্ছর। আহা, গাছপালা আমাদের বন্ধু না? তারপর গাছটিকে কুড়াল মেরে মেরে ফানা ফানা করা হয়। পেরেকগুলো ফেলে কাঠের সাদা কালো টুকরোগুলো আলাদা করা হয়। সাদা টুকরো দিয়ে সাধারণ আতর আর কালোগুলো থেকে দামি আতর তৈরি হয়।’ 
ইভু দাঁড়িয়ে পড়ে। ‘ইস দিদুন!’ ইভুর আদুরে মুখটা লালচে দেখায়। 
দিদুন এক খিলি পান মুখে দিয়ে বাকি ইতিহাস বলতে লাগলেন, ‘শোন, তারপর কাঠের টুকরোগুলা মাস দুই পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর বড়ো বড়ো চুল্লিতে সেদ্ধ করা হয় টানা দশ-পনেরো দিন। অবশেষে বাষ্পের মতো আতর নল বেয়ে জমতে থাকে আরেকটি পাত্রে। একরকমের ঘন তেল ভাসতে থাকে, সেই তেলই মহামূল্যবান সেরা সুগন্ধি আতরের নির্যাস।’ দিদুন খানিক দম নিয়ে আবারও শুরু করেন, ‘দাদু আর কি বলি? বৃক্ষ, লতাপাতা আমাদের কত উপকারে লাগে। আর ওদের তাজা শরীরে পেরেক গেঁথে দিয়ে কষ নিঙড়ে নিই। মোটা টাকা-কড়িও পাই। আগরগাছের কাঠের টুকরোগুলোর বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল চাহিদা। চড়া দামে রপ্তানি হয়। ধূপ, ভালো মানের আতরের সুনাম দেশে বিদেশে। আগরগাছের মালিক লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন। 
প্রাচীনকালের নানা দেশের বই-পুস্তকে আগরের পরিচয় পাওয়া যায়। শুধু মনোরম সুবাস নয়, চিকিৎসায়েও এর কদর ছিল।
জানিস তো, শীতের খেজুর গুড়, অতি সাধের জিরান কাটা পাটালি গুড়ের পেছনের ইতিহাসও করুণ। ঝাঁকড়া চুলের খেজুরগাছের বাকল কায়দা করে চেঁছে পেরেক, নল গাঁথা হয়। সারারাত কাঁদে গাছ। সেই ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুই টলটলে খেজুরের রস। দক্ষ গাছিরা ভোরের আলো ফোটার আগে রসের টুবুটুবু হাঁড়ি নামায়। শরীরে ক্ষত নিয়ে গাছ দাঁড়িয়ে থাকে। পিঠেপুলির সুবাসে মানুষের রসনা উথলে ওঠে বটে। 
রাবারগাছের বাকল কেটে সাদা দুধ বের করা হয় রে; যা মানুষের নানা কাজে লাগে। রাবারগাছও বোবা! 
বহুকাল আগে মিসর ও অন্যান্য দেশে প্যাপিরাসগাছের আঁশ থেকে কাগজ তৈরি হতো।
বড়ো হয়ে আরও অনেক ইতিহাস জানতে পারবি ইভু। আজ এইটুকুই। নটেগাছটি মুড়োলো, আমার কথা ফুরোলো।’
ইভান দিদুনকে জড়িয়ে ধরে, ‘দিদুন, সেরা কাহিনি আজ শুনলাম। তাহলে গাছপালাকে সম্মান করা উচিত। ওরা আমাদের বিশুদ্ধ বাতাস দেয়। কতো উপকারে লাগে। আর আমরা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ব্যথা দিই। আবার গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে ব্যানার লাগানো হয়। বাকলে নাম লেখে কেউ কেউ। ইস! মায়ের ছাদবাগানে ফুল ফোটে, সবজি হয়। রাগী বাবাও বাগানে গিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে থাকেন। ভালো না?’ তখন ব্যালকনির গ্রিলের ফাঁকে বিকেলের তেরছা রোদের ঝিলিমিলি। n  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা

চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।

কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ

বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।

মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ