গাছের গল্প বলো, নতুন গল্প বলো, নতুন গল্প দিদুন। ইভুর আদুরে জেদি আবদার।
দিদুন মুচকি হেসে ইভানকে পাশে বসিয়ে শুরু করলেন গল্প। ‘শোন ইভু বলছি তোকে আগরগাছের কথা। সিলেটের মৌলভীবাজারের বড়লেখার সুজানগর। এর আশপাশে এই দামি গাছের বিপুল চাষবাস হয়। পাড়া মহল্লায় উঠোনে আনাচে কানাচে আগরগাছের ছড়াছড়ি। কী আদর! কী আদর! এই গাছের নির্যাস থেকে তৈরি হয় মহামূল্যবান আতর। জানিস, দেশ বিদেশে বাংলাদেশের আতরের সুনাম আছে। এই আতরশিল্প আমাদের গৌরব। এর আর এক নাম তরল সোনা।’
ইভানের চোখ ঘুরছে লাটিমের মতো। উজ্জ্বল চনমনে ছোট্ট মুখটা। ‘দিদুন, কেমন করে গাছ থেকে আতর হয়?’
‘বলছি রে পাগলা লম্বা চওড়া ইতিহাস! নিষ্ঠুর কায়দায় আগরগাছের সারা শরীর ফানা ফানা করে আতর সুবাস নিঙড়ে নেওয়া হয় ইভু। গাছের বয়স ছয়-সাত বছর হলে ওর শরীরে এক ইঞ্চি পর পর পেরেক ঠুকে দেওয়া হয় রে। ব্যথায় বাকলের করুণ দশা হয়। এইভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পাঁচ থেকে সাত বচ্ছর। আহা, গাছপালা আমাদের বন্ধু না? তারপর গাছটিকে কুড়াল মেরে মেরে ফানা ফানা করা হয়। পেরেকগুলো ফেলে কাঠের সাদা কালো টুকরোগুলো আলাদা করা হয়। সাদা টুকরো দিয়ে সাধারণ আতর আর কালোগুলো থেকে দামি আতর তৈরি হয়।’
ইভু দাঁড়িয়ে পড়ে। ‘ইস দিদুন!’ ইভুর আদুরে মুখটা লালচে দেখায়।
দিদুন এক খিলি পান মুখে দিয়ে বাকি ইতিহাস বলতে লাগলেন, ‘শোন, তারপর কাঠের টুকরোগুলা মাস দুই পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর বড়ো বড়ো চুল্লিতে সেদ্ধ করা হয় টানা দশ-পনেরো দিন। অবশেষে বাষ্পের মতো আতর নল বেয়ে জমতে থাকে আরেকটি পাত্রে। একরকমের ঘন তেল ভাসতে থাকে, সেই তেলই মহামূল্যবান সেরা সুগন্ধি আতরের নির্যাস।’ দিদুন খানিক দম নিয়ে আবারও শুরু করেন, ‘দাদু আর কি বলি? বৃক্ষ, লতাপাতা আমাদের কত উপকারে লাগে। আর ওদের তাজা শরীরে পেরেক গেঁথে দিয়ে কষ নিঙড়ে নিই। মোটা টাকা-কড়িও পাই। আগরগাছের কাঠের টুকরোগুলোর বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল চাহিদা। চড়া দামে রপ্তানি হয়। ধূপ, ভালো মানের আতরের সুনাম দেশে বিদেশে। আগরগাছের মালিক লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন।
প্রাচীনকালের নানা দেশের বই-পুস্তকে আগরের পরিচয় পাওয়া যায়। শুধু মনোরম সুবাস নয়, চিকিৎসায়েও এর কদর ছিল।
জানিস তো, শীতের খেজুর গুড়, অতি সাধের জিরান কাটা পাটালি গুড়ের পেছনের ইতিহাসও করুণ। ঝাঁকড়া চুলের খেজুরগাছের বাকল কায়দা করে চেঁছে পেরেক, নল গাঁথা হয়। সারারাত কাঁদে গাছ। সেই ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুই টলটলে খেজুরের রস। দক্ষ গাছিরা ভোরের আলো ফোটার আগে রসের টুবুটুবু হাঁড়ি নামায়। শরীরে ক্ষত নিয়ে গাছ দাঁড়িয়ে থাকে। পিঠেপুলির সুবাসে মানুষের রসনা উথলে ওঠে বটে।
রাবারগাছের বাকল কেটে সাদা দুধ বের করা হয় রে; যা মানুষের নানা কাজে লাগে। রাবারগাছও বোবা!
বহুকাল আগে মিসর ও অন্যান্য দেশে প্যাপিরাসগাছের আঁশ থেকে কাগজ তৈরি হতো।
বড়ো হয়ে আরও অনেক ইতিহাস জানতে পারবি ইভু। আজ এইটুকুই। নটেগাছটি মুড়োলো, আমার কথা ফুরোলো।’
ইভান দিদুনকে জড়িয়ে ধরে, ‘দিদুন, সেরা কাহিনি আজ শুনলাম। তাহলে গাছপালাকে সম্মান করা উচিত। ওরা আমাদের বিশুদ্ধ বাতাস দেয়। কতো উপকারে লাগে। আর আমরা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ব্যথা দিই। আবার গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে ব্যানার লাগানো হয়। বাকলে নাম লেখে কেউ কেউ। ইস! মায়ের ছাদবাগানে ফুল ফোটে, সবজি হয়। রাগী বাবাও বাগানে গিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে থাকেন। ভালো না?’ তখন ব্যালকনির গ্রিলের ফাঁকে বিকেলের তেরছা রোদের ঝিলিমিলি। n
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সায়েমের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের জয়ে শুরু
জয়ের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকায় শেষ টি-টোয়েন্টি জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতেও জয় পেয়েছে তারা।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক সায়েম আইয়ুব। তার ৩৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান লাডারহিলে ৬ উইকেটে ১৭৮ রান করে। জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে ১৬৪ রানের বেশি করতে পারেননি। দারুণ ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে সায়েম ২০ রানে ২ উইকেট নেন। ১৪ রানের জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে পাকিস্তান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান শুরুতে শাহিবজাদা ফারহানের উইকেট হারায়। ১২ বলে ১৪ রান করে আউট হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তিনে নেমে ফখর সায়েমকে সঙ্গ দেন। দুজন ৮১ রানের জুটি গড়েন। এ সময়ে ফখর ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ বলে ২৮ রান করেন। বাকি রান আসে সায়েমের ব্যাটে। এ সময়ে তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। হোল্ডারের বলে এলবিডব্লিউ হলে থেমে যায় তার ইনিংস।
এরপর হাসান নওয়াজের ১৮ বলে ২৪, সালমান আগার ১০ বলে ১১, ফাহিম আশরাফের ৯ বলে ১৫ রানে পাকিস্তান লড়াকু পুঁজি পায়। শেষ দিকে ১ বল খেলার সুযোগ পান হারিস। ছক্কায় উড়িয়ে পাকিস্তানের শেষটা ভালো করেন তিনি।
বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সেরা ছিলেন শামার জোসেফ। ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট।
লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৭২ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর হঠ্যাৎ ছন্দপতন। ৫ রান পেতেই ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ওই ধাক্কার পর তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। জনসন চার্লস ও জুয়েল অ্যান্ড্রু ৩৫ রানের দুটি ইনিংস খেলেন। শেই হোপ (২), গুদাকেশ মোটি (০), শেফরন রাদারফোর্ড (১১) ও রস্টন চেজ (৫) দ্রুত আউট হন। শেষ দিকে পরাজয়ের ব্যবধান কমান হোল্ডার ও জোসেফ। হোল্ডার ১২ বলে ৪ ছক্কায় ৩০ রান করেন। ১২ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২১ রান করেন জোসেফ ।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন হাসান নওয়াজ। ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার। সায়েমের ২ উইকেট বাদে ১টি করে উইকেট পেয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি ও সুফিয়ান মুকিম।
আগামীকাল একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা/ইয়াসিন