নারীর প্রতি সহিংসতার যে পরিস্থিতি এখন দেশে দেখা যাচ্ছে, তা জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। তাঁরা বলেছেন, দেশে নাগরিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। এ কারণে নারীর নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এনসিপি। ‘জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা ও সাইবার সুরক্ষার দাবিতে’ এই সমাবেশ করা হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিটি ধাপে নারীরা যে ভূমিকা দেখিয়েছেন, অভ্যুত্থানের পরে এটাকে অস্বীকার করার পাঁয়তারা চলছে বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে স্বপ্ন তরুণেরা দেখছে, সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীদের উঠে আসার জন্য জায়গা করে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু পুরো রাজনৈতিক কাঠামো ও ব্যবস্থা এর উল্টো দিকে চলছে।

সামান্তা শারমিন বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার যে পরিস্থিতি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং বিরোধী। দেশে নাগরিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। এ কারণেই নারীর নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানে যে ফ্যাসিস্ট কাঠামোর বিলোপের কথা বলা হয়েছিল, সেই ফ্যাসিস্ট কাঠামো এখনো বিলোপ হয়নি। এই কাঠামো বিলোপের জন্য ধারাবাহিক লড়াইয়ের প্রয়োজন আছে। নারীদের অসংযত হতে বাধ্য করবেন না।

নারী ও পুরুষ সমাজে সমান সুযোগ ও অধিকার পাওয়ার যোগ্য—এ কথা এনসিপি দলীয়ভাবে বিশ্বাস করে বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা এমন চূড়ান্ত রূপে চলে গেছে যে নারীর নাগরিক মর্যাদা, আত্মমর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রশ্নবিদ্ধ। ধর্ষণের মতো ঘটনা এখন সমাজে দৈনন্দিন অপরাধের মতো হয়ে গেছে।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনী বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে, নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশকে একটা ‘অথর্ব রাষ্ট্রে’ পরিণত করছে এই দেশের আইন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে শ্যামলী সুলতানা বলেন, ‘নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের অতি শিগগির আইনের আওতায় আনবেন এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন। যদি আপনারা সেটা না পারেন, তাহলে বাংলাদেশের নারীরা এই দায়িত্ব বুঝে নেবে।’

নারী দিবস পালন করার আগে নারীকে মর্যাদা দেওয়া, সম্মানের আসনে বসানো ও নারীর অধিকারগুলো সুরক্ষিত করার আহ্বান জানান মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ বস্তিবাসীর প্রতিনিধি ময়না।

‘রাষ্ট্র এক জিনিস, ধর্ম আরেক জিনিস’

শাহবাগের এই সমাবেশে অংশ নেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমও। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে নারী নিপীড়ন, হেনস্তা ও ধর্ষণের কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে সারজিস বলেন, শকুনদের দৃষ্টি থেকে বোনদের রক্ষা করা এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘একটি জিনিস স্পষ্ট করে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলি, রাষ্ট্র এক জিনিস, ধর্ম আরেক জিনিস। রাষ্ট্রকে সব ধর্মকে ধারণ করতে হয়। সব চিন্তাধারার মানুষকে ধারণ করতে হয়। এখানে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের মানুষ তার বিশ্বাস, রীতিনীতি ও প্রথাগুলো চাইলেই অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। আরেকজন মানুষ যিনি কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নন, তাঁকেও চাপিয়ে দিতে পারে না।’

জনপরিসর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সারজিস। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বোনেদের এই অভ্যুত্থানে, হাসিনাবিরোধী লড়াইয়ে যেমন সামনের সারিতে পেয়েছি, আমরা আমাদের বোনদের আগামীর রাজনীতিতে নীতিনির্ধারণেও সামনের সারিতে চাই।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, শিক্ষার্থী তাসমিয়া রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল