যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল এবং এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব লিগের বিকল্প প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। সৌদি আরবের জেদ্দায় শনিবার ওআইসির এক জরুরি বৈঠক শেষে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ সময় ওআইসির পক্ষ থেকে আঞ্চলিক উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মিসরের কায়রোতে গত মঙ্গলবার আরব লিগের এক সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠনে মিসরের দেওয়া প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর তিন দিন পর জেদ্দায় ৫৭ সদস্যের ওআইসির বৈঠকে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিকল্প মিসরের প্রস্তাবে গাজা পুনর্গঠনে এর ভবিষ্যৎ প্রশাসন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর দখল নেওয়ার বিষয়টিতে ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়েছে।

ওআইসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওআইসি গাজার দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংস্থা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক তহবিল সংস্থাগুলোকে দ্রুত এ পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।

যুদ্ধ–পরবর্তী গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। গাজা জোর করে খালি করার পরিকল্পনাও রয়েছে ট্রাম্পের। ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিসরে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছিল।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি ওআইসির অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, রাশিয়া, চীন এবং আন্তর্জাতিক অন্য পক্ষগুলোর কাছ থেকে সমর্থনের মাধ্যমে একে আন্তর্জাতিক পরিকল্পনায় পরিণত করা। এ লক্ষ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

কায়রোর আল-আহরাম সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাভা সাইফ আল্লাম বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা আরব দেশগুলোকে বিরোধী কাতারে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মিসর তার প্রস্তাবের জন্য আরও বড় পরিসরে সমর্থন চাইছে। রাভা আরও বলেন, এটি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি প্রত্যাখ্যান করে—এমন একটি বিস্তৃত জোট গঠনের একটি প্রচেষ্টা।

জিম্মিদের আহ্বান

হামাসের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ইসরায়েলে ফেরা ৫৬ জিম্মি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজা যুদ্ধবিরতি পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ও হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে বলেছেন। গত শুক্রবার ৫৬ জিম্মি ইনস্টাগ্রামে একটি চিঠি পোস্ট করেন। তাতে তাঁরা লিখেছেন, ‘আমরা যারা সেই নরক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তারা জানি যে যুদ্ধে ফিরে যাওয়া বাকি জিম্মিদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। একবারে একসঙ্গে সব জিম্মিকে মুক্ত করতে চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করুন।’

প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ১ মার্চ শেষ হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা চালানোর সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। এখনো হামাসের হাতে ৫৮ জিম্মি রয়েছে।

গতকাল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ দিয়ে মধ্যস্থতাকারী মিসরের সঙ্গে হামাসের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হওয়ার কথা। হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও গাজায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশের অনুমতিসহ সাম্প্রতিক বিষয়ে আলোচনা হবে। তাঁরা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চান।

ঐতিহ্যবাহী মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে ঐতিহাসিক একটি মসজিদ আংশিক জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, শুক্রবার অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি সেনারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটেছে নাবলুসের ওল্ড সিটির ঐতিহ্যবাহী আল-নাসর মসজিদে। এএফপিটিভিতে এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আংশিক পুড়ে যাওয়া মসজিদের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।

হুতিদের হুঁশিয়ারি

ইয়েমেনের হুতিদের পক্ষ থেকে চার দিনের মধ্যে গাজায় ত্রাণসহায়তা বন্ধের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আবারও নৌপথে হামলা শুরুর হুমকি দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ওআইস র র জন য মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ