দরিদ্র নারীদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সৌদি আরবে
Published: 9th, March 2025 GMT
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ১৫২ জন অসহায় দরিদ্র নারীর সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের এক উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের নাম শহীদুল ইসলাম। তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না পেয়ে ওই নারীরা ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যাংক এশিয়ার বিভিন্ন এজেন্টের কাছে ঘুরছেন। কিন্তু কেউ তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিতে পারছেন না। টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র ওই নারীরা।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর অসহায় নারী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রামের দরিদ্র নারীদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হতো। একেকজনকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। এর বিপরীতে ওই নারীরা প্রতি মাসে ২২০ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখতেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে টাকা মুনাফাসহ ওই নারীদের ফেরত দেওয়ার কথা। প্রকল্পটি আওতায় দুই বছর করে একেক দলে বিভক্ত করে নারীদের সহায়তা দেওয়া হতো। প্রকল্পের আওতায় শরীয়তপুর জেলায় ১১ হাজার ৫১৯ জন নারীকে এ সহায়তা দেওয়া হতো। যার মধ্যে রামভদ্রপুর ইউনিয়নের ১৫২ জন দরিদ্র নারী খাদ্যসহায়তা পেতেন। প্রকল্পটি গত বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেছে।
খাদ্যসহায়তা গ্রহণ করার আগে একটি পাস বইয়ের মাধ্যমে ওই টাকা জমা দেওয়া হতো ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টের কাছে। রামভদ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা শহীদুল ইসলাম ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার উদ্যোক্তা। তিনি ওই নারীদের টাকা গ্রহণ করার পর ৬ মাস পর্যন্ত তা ব্যাংকের হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। এরপর আর কোনো টাকা তিনি জমা দেননি। ওই নারীদের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়ে পাস বইয়ে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি ওই টাকা ব্যাংকে জমা করেননি। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে শহীদুল ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং বন্ধ করে দিয়ে সৌদি আরবে চলে যান।
ডিসেম্বরে ওই সহায়তার মেয়াদ শেষ হলে নারীরা সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পেতে ইউনিয়ন পরিষদে যান। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁদের ব্যাংকে যোগাযোগ করতে বলা হয়। নারীরা ব্যাংকে গিয়ে দেখেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে মাত্র ৬ মাসের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৮ মাসের টাকা শহীদুল জমা না দিয়ে পালিয়ে সৌদি আরবে গেছেন।
জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুস সোবাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাস বইতে টাকা জমার স্বাক্ষর নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা খাদ্যসহায়তার চাল সরবরাহ করেছি। ওই টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে কেউ আত্মসাৎ করেছেন, তা আমরা বুঝতে পারিনি। এখন আমরা কী করতে পারি?’
গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকের ভেদরগঞ্জ কার্যালয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য আসেন মিতু ও ফাতেমা নামের দুই নারী। তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের হিসাব নম্বরে ১ হাজার ৩২০ টাকা জমা রয়েছে। বাকি টাকা জমা দেওয়া হয়নি। অথচ তাঁরা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ২২০ টাকা করে জমা দিয়েছেন।
মিতু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। স্বামী দিনমজুরি করে যা আয় করে, তা দিয়ে সংসার চালাই। গ্রামে কাজ না পেয়ে কয়েক মাস ধরে ঢাকায় একটি কারখানায় কাজ নিই। দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে সেখানেই থাকি। দুই বছরের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত নিতে এসে দেখি, ব্যাংকে ১৮ মাসের টাকা জমা হয়নি। কেউ টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।’
সঞ্চয়ের টাকা কবে ফেরত পাবেন, তা জানতে দক্ষিণ রামভদ্রপুর এলাকা থেকে ইউনিয়ন পরিষদে এসেছেন রিজিয়া, কল্পনা বেগম ও পেয়ারা বেগম। কে তাঁদের টাকা আদায় করে দেবেন, কবে তাঁরা টাকা পাবেন, তা কেউ বলেননি।
রিজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাসে ৩০ কেজি চাল সহায়তা পেয়েছি। এর বিপরীতে ২২০ টাকা সঞ্চয় জমা রেখেছি। তখন বলা হয়েছিল, টাকা ব্যাংকে থাকবে, মুনাফাসহ ফেরত পাব। এখন মুনাফা তো দূরের কথা, আমাদের আসল টাকাই পাচ্ছি না। ৬ মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরছি, কেউ বলছে না আমাদের টাকা কীভাবে পাব।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসহায় নারী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রামের দরিদ্র নারীদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হতো, তা আপাতত বন্ধ রয়েছে। ওই নারীরা খাদ্যসহায়তা গ্রহণ করার সময় কিছু টাকা সঞ্চয় রাখতেন, তা তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা হতো। রামভদ্রপুর ইউনিয়নে ১৫২ জন উপকারভোগী নারীর সঞ্চয়ের বেশ কিছু টাকা আত্মসাতের খবর পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ওই নারীরা যাতে তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পান, সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক দর দ র ন র প রকল প র ভ দরগঞ জ ড স ম বর ওই ন র র ব ষয়ক আওত য়
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।
আরও পড়ুনযেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি১৯ ঘণ্টা আগেবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উত্তর মাথঅভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে