জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় সড়কের পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে বটগাছ লাগানো, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, বিয়েতে গাছের চারা উপহার দেওয়া স্কুলশিক্ষক এস এম জুলফিকার আলী ওরফে লেবু মাস্টারকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপির একটি কার্যালয়ে নাশকতার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জুলফিকার আলী উপজেলার কে জি এস মহর সোবহান মফিজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাড়ি উপজেলার ছবিলাপুর গ্রামে। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখক, কথাসাহিত্যিক ও পরোপকারী হিসেবে পরিচিত। বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে জেলাজুড়ে খ্যাতি আছে তাঁর। তিনি উপজেলা পর্যায়ে ‘সেরা শিক্ষক’ নির্বাচিত হয়েছেন।

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ আছে। তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের জামালপুর জেলা শাখার সহসভাপতি ও উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২০১৩ সালের কমিটিতে সদস্য ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার তথ্যপ্রমাণও আছে। উপজেলার মালঞ্চ নতুন বাজারের বিএনপি কার্যালয়ে নাশকতার মামলায় তাঁকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ ও মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মালঞ্চ নতুন বাজারে বিএনপির কার্যালয়ে নাশকতার অভিযোগে গত বছরের ২৯ অক্টোবর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো.

মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়। তবে এজাহারে শিক্ষক জুলফিকার আলীর নাম নেই। গতকাল দুপুরে পুলিশ তাঁকে গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সন্ধ্যার দিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

আরও পড়ুনশিক্ষকের বটের ছায়ায়১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জানতে চাইলে মামলার বাদী ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. মনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি ওই শিক্ষককে চেনেন না। তিনি কোনো দল করেন কি না, তা–ও জানেন না। উনি যে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেটা তিনি এখন জানলেন। ওই শিক্ষককে কেন এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, উল্টো সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক জুলফিকার আলী কোনো বিয়ের দাওয়াতে গেলে উপহার হিসেবে চারাগাছ নিয়ে যেতেন। তিনি নিজের টাকায় গত ৪২ বছরে সড়কের পাশে, হাটবাজারে, গ্রামের মোড়ে, ঈদগাহ মাঠে, সরকারি খালি জায়গা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে গাছের চারা লাগিয়েছেন। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পাঠাগারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকার মানুষ তাঁকে পরোপকারী হিসেবে চেনেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকে নানা সমালোচনা করেছেন।

ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘স্যারকে সব সময় দেখেছি মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে। তিনি শিক্ষক হিসেবেও ভালো। ভালো কবিতা লেখেন। গাছ লাগানো, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ নানা সামাজিক কাজ করেন। সমাজে এ ধরনের মানুষ এখন খুব কম। তাঁর রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি শুনে অবাক হয়েছি। আমার মনে হয়, স্যারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’

শিক্ষক জুলফিকার আলীর ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জের বেগম আনোয়ারা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই ছোটবেলা থেকেই একজন সাদামনের মানুষ। এলাকার সবাই চেনেন ও জানেন। তাঁর পুরো জীবনটাই অসহায়-দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। তাঁর ঠিকমতো দিন চলে না। অথচ যে টাকা বেতন পান, সেটাও অসহায়-দরিদ্র মানুষের জন্য খরচ করেন। আমরা কখনোই তাঁকে প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখি নাই। কী কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বুঝতে পারছি না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত র জন ত ক উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল

১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।

১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।

১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।

মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।

বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে  গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।

আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে

২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।

কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।

ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি

সম্পর্কিত নিবন্ধ