জামালপুরের বৃক্ষপ্রেমী লেবু মাস্টার রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে
Published: 9th, March 2025 GMT
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় সড়কের পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে বটগাছ লাগানো, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, বিয়েতে গাছের চারা উপহার দেওয়া স্কুলশিক্ষক এস এম জুলফিকার আলী ওরফে লেবু মাস্টারকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপির একটি কার্যালয়ে নাশকতার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জুলফিকার আলী উপজেলার কে জি এস মহর সোবহান মফিজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাড়ি উপজেলার ছবিলাপুর গ্রামে। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখক, কথাসাহিত্যিক ও পরোপকারী হিসেবে পরিচিত। বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে জেলাজুড়ে খ্যাতি আছে তাঁর। তিনি উপজেলা পর্যায়ে ‘সেরা শিক্ষক’ নির্বাচিত হয়েছেন।
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ আছে। তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের জামালপুর জেলা শাখার সহসভাপতি ও উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২০১৩ সালের কমিটিতে সদস্য ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার তথ্যপ্রমাণও আছে। উপজেলার মালঞ্চ নতুন বাজারের বিএনপি কার্যালয়ে নাশকতার মামলায় তাঁকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ ও মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মালঞ্চ নতুন বাজারে বিএনপির কার্যালয়ে নাশকতার অভিযোগে গত বছরের ২৯ অক্টোবর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো.
জানতে চাইলে মামলার বাদী ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. মনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি ওই শিক্ষককে চেনেন না। তিনি কোনো দল করেন কি না, তা–ও জানেন না। উনি যে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, সেটা তিনি এখন জানলেন। ওই শিক্ষককে কেন এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, উল্টো সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক জুলফিকার আলী কোনো বিয়ের দাওয়াতে গেলে উপহার হিসেবে চারাগাছ নিয়ে যেতেন। তিনি নিজের টাকায় গত ৪২ বছরে সড়কের পাশে, হাটবাজারে, গ্রামের মোড়ে, ঈদগাহ মাঠে, সরকারি খালি জায়গা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে গাছের চারা লাগিয়েছেন। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পাঠাগারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকার মানুষ তাঁকে পরোপকারী হিসেবে চেনেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকে নানা সমালোচনা করেছেন।
ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘স্যারকে সব সময় দেখেছি মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে। তিনি শিক্ষক হিসেবেও ভালো। ভালো কবিতা লেখেন। গাছ লাগানো, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ নানা সামাজিক কাজ করেন। সমাজে এ ধরনের মানুষ এখন খুব কম। তাঁর রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি শুনে অবাক হয়েছি। আমার মনে হয়, স্যারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’
শিক্ষক জুলফিকার আলীর ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জের বেগম আনোয়ারা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই ছোটবেলা থেকেই একজন সাদামনের মানুষ। এলাকার সবাই চেনেন ও জানেন। তাঁর পুরো জীবনটাই অসহায়-দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। তাঁর ঠিকমতো দিন চলে না। অথচ যে টাকা বেতন পান, সেটাও অসহায়-দরিদ্র মানুষের জন্য খরচ করেন। আমরা কখনোই তাঁকে প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখি নাই। কী কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বুঝতে পারছি না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন ত র জন ত ক উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে