মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে কানাডায়। কানাডাবাসীদের ক্ষোভের কারণে সে দেশে মার্কিন কোম্পানির ব্যবসা মার খাবে বলে আশঙ্কা।

কানাডার পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাময়িক স্থগিত রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ইতিমধ্যে কানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পণ্য, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের পানীয়ের বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। খবর সিএনবিসির

আশঙ্কা করা হচ্ছে, কানাডার ক্রেতাদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য, মাংস ও গাড়ি। মার্কিন হোটেল ও বিমান পরিবহন কোম্পানিগুলোও চাপের মুখে পড়তে পারে। এর ফলে কানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসী পণ্যের বিক্রি মার খেতে পারে। বহুল পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কানাডার বিতরণ থেকে মার্কিন পণ্যের ব্র্যান্ডগুলো সরানোর সিদ্ধান্ত ‘বাই কানাডীয় সেন্টিমেন্ট বা কানাডার পণ্য কিনুন—এই অনুভূতির পালে হাওয়া দেবে।

জ্যাক ড্যানিয়েলসের মূল কোম্পানি ব্রাউন ফরম্যানের প্রধান নির্বাহী লসন হুইটিং জানিয়েছেন, কানাডার অনেক বিপণিবিতানের তাক থেকে এই হুইস্কি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করছেন, এই ঘটনা পাল্টা শুল্ক আরোপের চেয়ে বেশি খারাপ। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, এটা বিক্রি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া ২৫ শতাংশ শুল্কের প্রতিবাদে যা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

জ্যাক ড্যানিয়েলসের মোট বিক্রির মাত্র ১ শতাংশ হয় কানাডায়। তাই এই প্রতিক্রিয়া সামলে নেওয়া যাবে বলে জানিয়েও হুইটিং বলছেন, ‘কানাডার কিছু ক্রেতা জ্যাক ড্যানিয়েলসের বোতল কিনতে পারবেন না। কানাডায় জ্যাক ড্যানিয়েলস বড় ও জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। তাই দেখতে হবে, এটা কীভাবে ও কত দিন চলে। ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন শিল্পও কানাডার গ্রাহকদের প্রত্যাঘাত নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।

ওয়াইন ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রবার্ট পি কচ বলেন, মার্কিন ওয়াইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার হচ্ছে কানাডা। কানাডায় বছরে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলারের বেশি খুচরা ওয়াইন বিক্রি হয়। শুল্ক ও শুল্কের হুমকি এমন কঠিন সময়ে এসেছে, যখন এই শিল্প নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

পরামর্শক সংস্থা কিয়ার্নির জ্যেষ্ঠ অংশীদার গ্রেগ পর্টেল জানিয়েছেন, কানাডার পণ্য বয়কট অন্যান্য মার্কিন কোম্পানিও চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘উদ্ভূত বাণিজ্যযুদ্ধের পরিস্থিতিতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে অস্বস্তি তৈরি করছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কখনোই ভালো নয়। আর তা যদি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের বাইরে অন্য কারণে হয়, তা আরও সমস্যার।

তথ্যানুসারে, কানাডার মোট ভোগ্যপণ্য আমদানির একটা বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলেও বেশির ভাগ মার্কিন কোম্পানির মোট রপ্তানিতে কানাডার অংশীদারি তেমন একটা নয়। এখন কানাডার মানুষ রেগে গিয়ে কোলগেট টুথপেস্ট বয়কট করলে গ্রিন বেভারের মতো কানাডীয় ব্র্যান্ড লাভবান হবে। তবে কোলগেট-পালমোলিভেরর মোট ব্যবসার মাত্র ২৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা উত্তর আমেরিকা থেকে আসে। তাই কোনো একটি দেশে বয়কটের ডাক দেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভোগ্যপণ্য কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় খুব একটা প্রভাব পড়ার কথা নয়।

তবে অনেক দেশ একযোগে মার্কিন পণ্য বয়কটের রাস্তায় হাঁটলে বা শুল্ক বাড়ালে মার্কিন কোম্পানিগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ য ক ড য ন য় লস ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

আফ্রিদি-জয় শাহর ভাইরাল ভিডিওটি এশিয়া কাপের নয়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাসছে। স্টেডিয়ামে বিশেষ অতিথিদের গ্যালারিতে পাশাপাশি বসে বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এবং পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। বেশ হাসিমুখে কথা বলছেন দুজন। জয় শাহর পাশেই বসে পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। মাঝে একটি আসন দূরে বসে বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংসদ সদস্য অনুরাগ ঠাকুর। তিনিও জয় শাহ ও আফ্রিদির সঙ্গে বেশ হাসিমুখে কথা বলছিলেন।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ এশিয়া কাপে কয়েকবারের ‘চ্যাম্পিয়ন’, ভেবেছিলেন আফগানিস্তান কোচ১০ ঘণ্টা আগে

দুবাইয়ে গত পরশু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই দাবি করেন, এই ভিডিও চলমান এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের। সমালোচনা করে অনেকেই বলেন, ভারতে যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বয়কটের দাবি উঠেছে, সেখানে তাঁদের মধ্যে এত হৃদ্যতা আসে কোত্থেকে? একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর জনতার ক্ষোভের মধ্যেই এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে জয় শাহ ও অনুরাগ ঠাকুরকে শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। গোটা দেশ যখন ম্যাচটি বয়কটের ডাক দিয়েছে, তখন বিজেপির নেতা অনুরাগ ঠাকুর ও জয় শাহ শহীদ আফ্রিদি ও মহসিন নাকভির সঙ্গে মজা করছেন ও সময়টা উপভোগ করছেন।’

ভিডিওটির সত্যতা পরীক্ষা করে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও গত পরশু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের নয়। এটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারির ভিডিও। তখন দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। সেই ম্যাচের এই ভিডিও নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই এটাকে গত পরশুর ম্যাচের ভেবে ভুল করেছেন। ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত ২২ এপ্রিল। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার আগে।

আরও পড়ুনকেন পাকিস্তানের এমন হার—ব্যাখ্যা দিলেন আকরাম, আফ্রিদি ও গাভাস্কার১০ ঘণ্টা আগে

ভিডিওটি আরেকটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় মাঠের হোর্ডিংয়ে ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫’ লেখা। পাশাপাশি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক ‘এক্স’ ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লেখেন, ‘দুবাই স্টেডিয়ামে শহীদ আফ্রিদি ও জয় শাহ একসঙ্গে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ দেখছেন।’ ক্যাপশনের নিচে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ভারত–পাকিস্তান ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি লেখা। গত ফেব্রুয়ারি–মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচিতেও দেখা যাচ্ছে, দুবাইয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। ম্যাচে ৬ উইকেটে জেতে ভারত।

এশিয়া কাপে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের সহজ জয় পায় ভারত। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ বয়কটের দাবি তুলেছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররাই। দেশটির সাবেক অফ স্পিনার হরভজন সিং ও সাবেক ক্রিকেটার কেদার যাদবরা এই ম্যাচ বয়কটের আহ্বান জানান। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস (ডব্লুসিএল) টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত। এর পর থেকে এশিয়া কাপের ম্যাচটি বয়কটের ক্যাম্পেইন আরও বেশি করে শুরু হয় ভারতে। এমনকি ম্যাচটি বাতিলে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) আবেদন করা হয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। যদিও জরুরি ভিত্তিতে তা শুনানির জন্য রাজি হননি আদালত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার সংবাদ সম্মেলন বয়কট করে পাকিস্তানের প্রতিবাদ
  • আফ্রিদি-জয় শাহর ভাইরাল ভিডিওটি এশিয়া কাপের নয়