না খেলেও শীর্ষে বার্সা, লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়ন ধরেই বাকি হিসাব
Published: 10th, March 2025 GMT
মৌসুমের শেষ ভাগে এসে ইউরোপের শীর্ষ চার লিগের দুটিতে লড়াইয়ের ইঙ্গিত থাকলেও বাকি দুটিতে শিরোপা–ভাগ্য অনেকটাই চূড়ান্ত। লা লিগায় এবার শেষ মুহূর্তে এসে বাতাস বদলে যেতে পারে যেকোনো দিকে।
একই দৃশ্যপট ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’তেও। তবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চাইলে এখনই লিভারপুলকে বিজয়ী ঘোষণা করা যায়। লিভারপুলের মতো শক্তিশালী অবস্থানে না থাকলেও বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখও শিরোপা জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে আছে।
হেরে বার্সা–রিয়ালের চেয়ে পিছিয়ে আতলেতিকোদলের চিকিৎসকের মৃত্যুর কারণে লা লিগায় ওসাসুনার বিপক্ষে শনিবার রাতের ম্যাচটি স্থগিত করে দেয় বার্সেলোনা। বার্সা মাঠে না নামায় রিয়াল মাদ্রিদের সুযোগ ছিল পয়েন্টের দিক থেকে অন্তত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ছুঁয়ে ফেলার। আর আতলেতিকোর সামনে সুযোগ ছিল বার্সাকে টপকে শীর্ষে ওঠার। রিয়াল নিজেদের লক্ষ্য পূরণে সফল হলেও পারেনি আতলেতিকো।
আরও পড়ুনসুযোগ পেয়ে বার্সাকে ছুঁয়ে ফেলল রিয়াল মাদ্রিদ, শীর্ষ উঠতে পারল না আতলেতিকো১৪ ঘণ্টা আগেগতকাল রাতে হেতাফের বিপক্ষে ২–১ গোলে হেরেছে ডিয়েগো সিমিওনের দল। এই হারে শীর্ষে ওঠার বদলে তিনে নেমে গেছে আতলেতিকো। ২৭ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট তাদের। অন্য দিকে রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে ২–১ গোলের জয়ে বার্সাকে পয়েন্টে ছুঁয়ে ফেলেছে রিয়াল। তবে রিয়াল একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে। তাদের পয়েন্ট ২৭ ম্যাচে ৫৭। আর বার্সার পয়েন্ট ২৬ ম্যাচে ৫৭। গোলব্যবধানে রিয়ালের (+৩১) চেয়ে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে হান্সি ফ্লিকের দল (+৪৬)।
শিরোপা জয়ের পথে আরও এগিয়ে লিভারপুলপ্রিমিয়ার লিগে টানা চার মৌসুম শিরোপা জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। তবে বেশির ভাগ সময়ই শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের মধ্যে থাকতে হয়েছে তাদের। কিন্তু এবার বোধ হয় কোনো ধরনের লড়াই ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে লিভারপুল। লিগে নিজেদের ৯ ম্যাচ বাকি থাকতে দ্বিতীয় আর্সেনালের চেয়ে লিভারপুল এগিয়ে ১৫ পয়েন্টের ব্যবধানে। এ অবস্থায় শেষ ৯–১০ ম্যাচে কেউ লিভারপুলের ১৫ পয়েন্টের ব্যবধান টপকে শিরোপা জিতবে তা প্রায় আকাশ–কুসুম কল্পনা।
আরও পড়ুনসালাহর মাইলফলকের রাতে শিরোপার আরও কাছে লিভারপুল০৮ মার্চ ২০২৫পরশু রাতে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ৩–১ গোলে জয়ের পর লিভারপুলের পয়েন্ট এখন ২৯ ম্যাচে ৭০। আর গতকাল রাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করা আর্সেনালের পয়েন্ট ২৮ ম্যাচে ৫৫। অর্থাৎ এখান থেকে লিভারপুলকে ছুঁতে অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হবে আর্সেনালকে। ফলে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রায় নিশ্চিত। তবে প্রিমিয়ার লিগে শেষ দিকে জমতে পারে শীর্ষ চারে থাকার লড়াই। নটিংহামের কাছে ১–০ গোলে হারের পর শঙ্কায় পড়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যান সিটির শীর্ষ চারে থাকাও।
ইন্টার–নাপোলির সঙ্গে আতালান্তাওত্রিমুখী শিরোপা লড়াইয়ে জমে উঠেছে ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’। বর্তমানে শীর্ষে থাকা ইন্টার মিলানের পয়েন্ট ২৮ ম্যাচে ৬১। যারা সর্বশেষ নিজেদের ম্যাচে ৩–২ গোলে হারিয়েছে মোনৎসাকে। আর ২৮ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকা নাপোলি ২–১ গোলে হারিয়েছে ফিওরেন্তিনাকে। এই দুই দলের সঙ্গে লড়াইয়ে আছে আতালান্তাও। ২৮ ম্যাচে যাদের পয়েন্ট ৫৮। সর্বশেষ ম্যাচে যারা ৪–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে জুভেন্টাসকে।
হেরেও সুবিধাজনক অবস্থানে বায়ার্নবখুমের কাছে ৩–২ গোলে বায়ার্নের অপ্রত্যাশিত হারে লেভারকুসেনের সুযোগ ছিল তাদের কাছাকাছি যাওয়ার। কিন্তু সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি লেভারকুসেন। নিজেদের ম্যাচে ভেরডার ব্রেমেনের কাছে ২–০ গোলে হেরেছে। ফলে দুই দলের পয়েন্টের ব্যবধানটা আগের মতো ৮–ই থাকল।
বায়ার্নের পয়েন্ট ২৫ ম্যাচে ৬১, আর লেভারকুসেনের ২৫ ম্যাচে ৫৩। বুন্দেসলিগায় বাকি আছে ৯ ম্যাচ। এই ৯ ম্যাচে বায়ার্নের সঙ্গে ৮ পয়েন্টের ব্যবধান ঘোচানো অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিনই। ফলে বড় কোনো নাটকীয়তা না হলে বায়ার্ন এখন বেশ ভালো অবস্থানেই আছে।
বুন্দেসলিগা (শীর্ষ পাঁচ)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২৮ ম য চ আতল ত ক অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’