নেপালের ক্ষমতাচ্যুত রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে কাঠমান্ডুতে হাজারো মানুষের অভ্যর্থনা, রাজতন্ত্র ফেরানোর আহ্বান
Published: 10th, March 2025 GMT
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশটির সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ জানানোর পাশাপাশি বিলুপ্ত রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
জ্ঞানেন্দ্র শাহ গতকাল রোববার পশ্চিমাঞ্চলীয় নেপালে ভ্রমণ শেষ করে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাঁকে স্বাগত জানাতে ১০ হাজারের মতো সমর্থক ত্রিভুবন বিমানবন্দরের প্রধান প্রবেশপথের কাছে জড়ো হয়েছিলেন।
জড়ো হওয়া মানুষেরা বলছিলেন, ‘রাজার জন্য রাজপ্রাসাদ খালি করুন। রাজা ফিরে আসুন, দেশকে বাঁচান। আমাদের প্রিয় রাজা দীর্ঘজীবী হোন। আমরা রাজতন্ত্র চাই।’
মানুষের ভিড়ের কারণে বিমানবন্দর থেকে এবং বিমানবন্দরগামী যাত্রীরা হেঁটে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিমানবন্দর প্রাঙ্গণে প্রবেশে বাধা দিয়েছে শত শত দাঙ্গা পুলিশ।
২০০১ সালে নেপালের তৎকালীন রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহকে সপরিবার হত্যা করা হয়। বড় ভাই বীরেন্দ্র নিহত হওয়ার পর ওই বছরই রাজা হিসেবে জ্ঞানেন্দ্রর অভিষেক হয়। বর্তমানে ৭৭ বছর বয়সী জ্ঞানেন্দ্র ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তখন তাঁর নির্বাহী ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না।
তবে ২০০৫ সালে জ্ঞানেন্দ্র পুরোপুরিভাবে ক্ষমতা দখল করেন। বলেন যে রাজতন্ত্রবিরোধী মাওবাদী বিদ্রোহীদের পরাস্ত করার জন্য তিনি কাজ করছেন। রাজা জ্ঞানেন্দ্র তখন সরকার ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠান। তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং দেশশাসনের কাজে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেন।
এসব পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে ২০০৬ সালে জ্ঞানেন্দ্র একটি বহুদলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মাওবাদীদের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়।
২০০৮ সালে নেপালের ২৪০ বছরের পুরোনো হিন্দু রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করার বিষয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভোট হয়। ভোটাভুটিতে রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে রায় এলে রাজা জ্ঞানেন্দ্র পদত্যাগ করেন। এরপর নেপালে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
তখন থেকে নেপাল ১৩টি সরকারকে পেয়েছে এবং দেশটির অনেকে প্রজাতন্ত্রব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রজাতন্ত্রের সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতির নাজুক অবস্থা এবং ব্যাপক দুর্নীতির জন্যও প্রজাতন্ত্রকে দায়ী করেছেন তাঁরা।
রোববার ত্রিভুবন বিমানবন্দর এলাকায় সমবেত মানুষেরা বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি যেন আরও খারাপের দিকে না যায়, তা ঠেকাতে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের আশা করছেন তাঁরা।
এমনই একজন থির বাহাদুর ভান্ডারি। বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৭২ বছর বয়সী ভান্ডারি বলেন, ‘রাজাকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানাতে এবং তাঁকে রাজসিংহাসনে পুনর্বহাল করার পুরো প্রক্রিয়ায় পাশে থাকার ব্যাপারে তাঁকে আশ্বস্ত করতে আমরা এখানে এসেছি।’
সমবেত মানুষদের মধ্যে আরেকজন ৫০ বছর বয়সী কাঠমিস্ত্রি কুলরাজ শ্রেষ্ঠ। তিনি ২০০৬ সালে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেছেন এবং রাজতন্ত্রকে সমর্থন করছেন।
কুলরাজ এপিকে বলেন, ‘দেশে সবচেয়ে বাজে যে বিষয়টি ঘটছে তা হলো, ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে এবং ক্ষমতায় থাকা কোনো রাজনীতিবিদ দেশের জন্য কিছুই করছেন না। রাজতন্ত্রকে উৎখাতকারী বিক্ষোভে আমি ছিলাম এই আশায় যে এতে দেশের উপকার হবে। তবে আমার ধারণা ভুল ছিল এবং জাতি আরও দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। তাই আমি আমার মত পরিবর্তন করেছি।’
রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এ আহ্বানের বিষয়ে জ্ঞানেন্দ্র কোনো মন্তব্য করেননি। তাঁর প্রতি সমর্থনের হার ক্রমাগত বাড়লেও, জ্ঞানেন্দ্রের ক্ষমতায় ফিরতে পারার সুযোগ কম।
রাজনীতি–বিশ্লেষক লোকরাজ বড়াল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোনো সম্ভাবনাই তিনি দেখছেন না।
লোকরাজ বড়াল মনে করেন, ক্রমে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠা রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতার কারণে কিছু মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। আর এই হতাশা থেকেই এ ধরনের সমাবেশ ও বিক্ষোভ হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জতন ত র র জন ত র জন য ক ষমত করছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।