ছাত্রদের নেতৃত্বে যে নতুন রাজনৈতিক দলের সূচনা হয়েছে, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’, এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তাদের ভূমিকা থাকবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন যে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে, সেই সংসদে সবারই প্রত্যাশা অনুযায়ী বর্তমান অগণতান্ত্রিক সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে, সংশোধনী হবে। সেটাতে তারাও ভূমিকা রাখবে, আমরাও রাখব, সে প্রত্যাশা আমাদের আছে। 

তবে ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দলটি প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, একটি নতুন রিপাবলিক (প্রজাতন্ত্র), সেকেন্ড রিপাবলিক তারা চায়। সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদের মাধ্যমে তারা একটি নতুন সংবিধান রচনা করতে চায়। আমরা মনে করি, এ কথাগুলো পরস্পরবিরোধী। কারণ, আমাদের একটি সংবিধান আছে। আমরা নতুন করে একটি রাষ্ট্র হিসেবে এখন আত্মপ্রকাশ করিনি।

১৯৭১ সালে আমরা এ রাষ্ট্র পেয়েছি। যেখানে রাষ্ট্র নতুনভাবে স্বাধীন হয় এবং সংবিধান রচিত থাকে না, সেখানে সংবিধান নতুনভাবে রচনা করার জন্য গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। এখানে আমাদের একটি রাষ্ট্র আছে, যা স্বাধীন-সার্বভৌম। এখন সেই রাষ্ট্র পুরোপুরি গণতান্ত্রিক কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।

আমাদের এ রাষ্ট্রের প্রথম রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা হয়েছে সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে। সেটা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে, আমাদের বিজয় অর্জনের পরে যে গণপরিষদ ঘোষণা করা হয়েছিল আগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে। সেই গণপরিষদের মাধ্যমে একটি সংবিধান গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের রিপাবলিক (প্রজাতন্ত্র) রচনা হয়ে যায়। 

রিপাবলিকের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আবার নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন হবেন। সেই রাষ্ট্রের হেড অব স্টেট থাকবে। সেটা নমিনেটেড (মনোনীত) হোক বা ইলেকটেড (নির্বাচিত) হেড অব দ্য স্টেট হোক। সে চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য এ রাষ্ট্রের আছে। অর্থাৎ আমরা একটা রিপাবলিকের মধ্যেই আছি। 

এই রিপাবলিকের মধ্যে অনেক সময় অনেক রকমের সিস্টেম পরিবর্তন হয়েছে। যেমন একদলীয় শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব এই রিপাবলিকের চরিত্র পরিবর্তন করেছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেবের সময় পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য পুনঃস্থাপন করা হয়। তখন বিচার বিভাগের ওপর যে হস্তক্ষেপ বাকশালের মধ্য দিয়ে হয়েছিল, সেটাকে আবার সংশোধিত করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল স্থাপন করা হয় সংবিধানের ৯৬ ধারায়, যেটা এখনো বহাল। 

.

..এভাবে পরবর্তীকালে আমরা প্রেসিডেনশিয়াল সিস্টেম থেকে ১৯৯২ সালে সংসদীয় ব্যবস্থায় এলাম। তো এগুলো রিপাবলিকের মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন ও সংশোধনী আসে। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন হয়েছে। এগুলো সবই ন্যাচারাল পরিবর্তন হয় সংবিধানের। রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের চাহিদা অনুসারে এসব পরিবর্তন ও সংস্কার আনতে হয়। 

কিন্তু প্রতিবারই যদি আমরা এই সংবিধান সংশোধনগুলোয় একটা রিপাবলিকের ক্রমিক নম্বর দিই, সেটা অসুবিধা। কারণ, এতে রিপাবলিকের পরিবর্তন হয় না। রিপাবলিকের যে চরিত্র, যে বৈশিষ্ট্য, তার মধ্যে কিছু সংস্কার, কিছু সংশোধনী আসে। কিন্তু আমরা একটি রাষ্ট্রে আছি এবং সেই রাষ্ট্র স্বাধীন-সার্বভৌম। তাকে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে আসার জন্য আমরা রিপাবলিকের চলনের মধ্যে, ধরনের মধ্যে, পরিচালনার মধ্যে বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন করি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী। 

জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী এটা করতে গেলে যেমন বিভিন্ন আইন লাগে, সংবিধানেও সে রকম পরিবর্তন আনতে হয়, আনব। কিন্তু সেটার জন্য গণপরিষদের প্রয়োজন নেই; যেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্র নই, একটা প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র। দ্বিতীয় রিপাবলিক বলতে তারা (ছাত্রনেতৃত্ব) যেটা বোঝাচ্ছে, তারা সেটা না বুঝে হয়তো নামকরণ করছে। আমাদের এই রিপাবলিকের পরিচালনার জন্য বিভিন্ন রকমের সাংবিধানিক ও আইনি সংশোধনী যেগুলো প্রয়োজন, সেটা আমরা আনব।

আরেকটি হচ্ছে নতুন সংবিধান, আসলে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে যে সংবিধান আমরা হাতে পাব সামনে। সেটাও অনেকটা ব্যাপক সংস্কারযুক্ত, সংশোধনীযুক্ত সংবিধান আমরা পাব। যেটাকে আমরা বলব একটা বৃহত্তর কনসাশনেসের (সচেতনতা) মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে আমাদের সংবিধানের। সেটা আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, আমাদের ৩১ দফায়ও ছিল, বর্তমানে সংস্কার কমিশনগুলোর গঠনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সে উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাসহ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে প্রস্তাব দিয়েছি। এ ব্যাপারে এখনো আলাপ-আলোচনা চলছে। সেই সংবিধানকে আমরা নতুন সংবিধান বলতে পারি। 

এখন যদি আমরা সংশোধিত সংবিধানকে নতুন সংবিধান নামে অভিহিত করতে চাই, তাতে আমাদের আপত্তি নেই, সেটা বলা যায়। কিন্তু এখন সেই নতুন সংবিধানের জন্য যদি আমরা এটাকে দ্বিতীয় রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করতে চাই, সেটা একটা বাক্যবিলাস ছাড়া আর কিছু হবে না।

এখনো আমরা যদি আবেগপ্রবণ হয়ে বাক্যবিলাসের মধ্যে থাকি, সেটা জাতির জন্য সুসংবাদ নয়। আমি আশা করব, আমাদের নতুন বন্ধুরা, যাঁরা পরিবর্তনের জন্য রাজনীতিতে এসেছেন—সমাজের পরিবর্তনের জন্য এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের জন্য, একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য—তাঁদের আমরা অনুরোধ করব, আমরা যেন সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে এ জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। ঐক্যের মধ্যে যেন কোনোভাবে ফাটল সৃষ্টি হতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখি।

সালাহ উদ্দিন আহমদ স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র প বল ক র ন র জন য আম দ র এ

এছাড়াও পড়ুন:

তিন দিনের পর্যটন মেলায় ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা

তিন দিনের পর্যটন মেলায় এবার প্রায় ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। মেলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রায় তিন কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে ১৩তম বারের মতো তিন দিনের এই মেলায় প্রায় ৪০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। গত শনিবার তিন দিনের এই মেলার শেষ দিন ছিল।

বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) নামে ১৩তম বারের মতো আয়োজিত এই মেলা গত বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হয়েছিল। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার আয়োজক ছিল ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে মেলার ব্যবসাসংক্রান্ত এসব তথ্য জানিয়েছে টোয়াব।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মেলার শেষ দিনে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলোকে স্মারক ও সনদ প্রদান করা হয়। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুজহাত ইয়াসমিন। আরও উপস্থিত ছিলেন টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান, পরিচালক (বাণিজ্য ও মেলা) মো. তাসলিম আমিন প্রমুখ।

* মেলায় প্রায় তিন কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। * দেশের পর্যটন খাতে অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয় তিন সাংবাদিকসহ ১৩ জনকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশে পর্যটনশিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশেও পর্যটনশিল্প রয়েছে। তবে আমরা এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারিনি। এর মানে এই নয় যে আমাদের সম্ভাবনা নেই। বরং আমরা এখনো তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারিনি।’

বিজ্ঞপ্তিতে টোয়াব আরও জানায়, এবারের মেলায় এয়ারলাইন, হোটেল, রিসোর্ট, ট্যুর অপারেটর, হাসপাতাল, ক্রুজ লাইনসহ বিভিন্ন ভ্রমণ ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ৮০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সব মিলিয়ে মোট ১৫০টি স্টল ছিল এবারে মেলায়। মেলায় হোটেল ও রিসোর্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ ছাড়ে রুম এবং ভ্রমণ প্যাকেজ বিক্রি করেছে। ছয়টি হোটেল ও রিসোর্ট মেলায় তাদের শেয়ার বিক্রি করেছে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ইতিবাচক ইঙ্গিত।

বিজ্ঞপ্তিতে টোয়াব জানায়, মেলার প্রথম দিনে বাংলাদেশ ও নেপালের ট্রাভেল ট্রেড শিল্পের সংযোগ স্থাপন শীর্ষক বিটুবি নেটওয়ার্কিং আয়োজিত হয়। এ ছাড়া ফিলিপাইন, মালদ্বীপ, ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—এসব দেশের মধ্যে বিটুবি সেমিনার আয়োজন করা হয়। মেলায় দেশের পর্যটন খাতে অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন তিন সাংবাদিকসহ ১৩ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ