কুমিল্লায় ৪৮ ঘণ্টায় ৩ ঘটনা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থায় ‘ঘাটতি’
Published: 10th, March 2025 GMT
সামাজিক সংকট হিসেবে বিভৎষরূপে প্রকাশ্যে আসতে থাকা ধর্ষণের ঘটনাগুলো নিয়ে যখন দেশজুড়ে তোলপাড়াড চলছে, তখন কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জেলাটিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ধর্ষণ ও একটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা সামনে এসেছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান নিজেই এই তথ্য দিয়ে বলেছেন, এসব ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত তারা একজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছেন।
নাজির আহমেদ বলছেন, কুমিল্লায় গত শুক্র ও শনিবার দুইটি ধর্ষণ ও একটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে ৩ মোটরসাইকেল চালক নিহত
৮ পর্যটককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ, নারীসহ গ্রেপ্তার ৪
ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘এইড কুমিল্লা’ এর সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালী।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে কুমিল্লায় প্রায় সাতটি ধর্ষণ এবং ইভটিজিংয়ের আরো কয়েকটি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, বিচার না পাওয়ার সংস্কৃতি ও সামাজিক লজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকেই অভিযোগই করেন না। থানায় অভিযোগ গ্রহণে গড়িমসির অভিযোগসহ নির্যাতনকারী পক্ষের হুমকি-ধমকিও ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পথে বড় বাধা।
মাগুরায় আট বছরের শিশুর ওপর নির্মম যৌন নির্যাতনের ঘটনায় নড়ে গেছে পুরো দেশ। সেই আঁচ পড়েছে কুমিল্লায়। জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সোমবার (১০ মার্চ) নেমে আসে রাস্তায়। স্লোগান তোলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে, ধর্ষকের বিচার দাবিতে আওয়াজ তোলে তারা।
নারী নির্যাতন রুখে দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীদের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করার দাবিতে ‘কুমিল্লা’নামে শিক্ষার্থী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে।
শনিবার (৮ মার্চ) কুমিল্লা সদর দক্ষিণে এক নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ওই নারীকে দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। ধর্ষণ চেষ্টায় বাধা দেওয়ায় মারধরের শিক্ষার হন ভুক্তভোগীর স্বামী।
একই দিন লালমাই উপজেলার ভুশ্চি গ্রামে সাত বছরের এক শিশুকে কুকুর দিয়ে কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে তিনবার ধর্ষণ করেছে আবাদ উল্লাহ নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। গ্রামের মাতব্বররা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে। তবে, যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করে এবং শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
এর আগের দিন, শুক্রবার (৭ মার্চ) লালমাই উপজেলায় বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে চিপস কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। নির্মাণাধীন ভবনের ওই কিশোরীকে নির্যাতন করা হয়। স্থানীয় এক নারী অভিযুক্তদের দেখে ফেললে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। পুলিশ প্রধান অভিযুক্তকে আটক করলেও বাকিরা পলাতক।
কুমিল্লা জেলার নারী অধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা থাকলে অপরাধীরা এতটা সাহসী হয়ে উঠতে পারত না।
এইড কুমিল্লার সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, “অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছি। এক মাসের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ধর্ষণকারীদের। ধর্ষকদের বিচার নিয়ে তদন্ত করার কিছু নেই। তারা যে ধর্ষণ করেছে এটা তারা স্বীকার করেছে।”
“তাই তাদেরকে প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে।”
জেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় রবিবার কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, নারী নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি লালমাইয়ে এক ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
“তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই নয়, আমাদের সাধারণ মানুষদেরকেও সচেতন হতে হবে। অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে জেলার আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে,”বলেন নাজির আহমেদ।
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ন জ র আহম দ ব যবস র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস