পরিত্যক্ত রান্নাঘরে ‘বিশুদ্ধ’ পানির কারখানা
Published: 10th, March 2025 GMT
প্রতিষ্ঠানটির বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, এটি একটি পরিত্যক্ত ঘর। ওই ঘরের ভেতরেই ‘জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার’ নামে পানি সরবরাহের কারখানা গড়ে তুলেছেন সাখাওয়াত হোসেন নামে এক ব্যক্তি। কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে গড়ে ওঠা ওই কারখানাটিতে নোংরা পরিবেশে পানি জারে ভরে তা ‘বিশুদ্ধ’ খাবার পানি হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। উপজেলার বারবাজার, মান্দারতলা, সূবর্ণসারা, সাতমাইল, চুড়ামনকাঠিসহ বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত
এই পানি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাবার পানি সরবরাহের কারখানাটি নির্মাণে কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। মানা হয়নি কোনো বিধিমালা। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যাব বা কেমিস্ট নেই। বিশুদ্ধ বোতলজাত পানি সরবরাহের কারখানা নির্মাণে সায়েন্স ল্যাবরেটরি, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতার সনদ, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও কলকারখানার সনদের বিধান রয়েছে। কিন্তু জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার কর্তৃপক্ষের এগুলোর কোনোটাই নেই।
সরেজমিন কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত একটি রান্নাঘরের মধ্যেই গড়ে উঠেছে জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার। ঘরটির ওপরে অর্ধেক ভাঙাচোরা টিন ও অর্ধেক টালির ছাউনি দেওয়া। নিচে পুরোনো পাকা মেঝে। ঘরের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন পোকামাকড়। কারখানাটির পাশেই রয়েছে গোসলখানা ও শৌচাগার, যা একেবারেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পানির কারখানার মেঝেতে বাধ্যতামূলক টাইলস বসানোর নিয়ম থাকলেও তা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। কারখানায় নিয়োজিত দু’জন শ্রমিক কাজ করলেও দেখা গেছে, তাদের হাতে গ্লাভস, পায়ে স্যান্ডেল বা শরীরে কোনো অ্যাপ্রোন নেই। এ ছাড়া বোতল জার পরিষ্কারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহারের কথা থাকলেও, সেটি মানা হচ্ছে না।
কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক বছর ধরে পানি বাজারে বিক্রি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জার পানি বিক্রি করা হয়। গ্রাহকদের কাছে ২০ লিটারের একজার পানি সরবরাহ করে ৪০ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে কখনও এর চেয়ে বেশি দামেও পানি বিক্রি করা হয়।
কারখানাটিতে নোংরা পরিবেশে খাবার পানি বোতলজাত করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটারের মালিক সাখাওয়াত কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজ সম্পর্কে অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রেড লাইসেন্সসহ কিছু কাগজ আছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় অন্যান্য অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
কারখানাটির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা নিশাত মেহের বলেন, নোংরা পরিবেশে খাবার পানি বোতলজাত হতে পারে না। শিগগিরই কারখানাটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ার উপজেলা বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক (সিএম) দেবব্রত বিশ্বাস জানান, কালীগঞ্জে বোতলজাত খাবার পানি সরবরাহের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নেয়নি। বিএসটিআইর পক্ষ থেকে শিগগির এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালন করা হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকলে কেউ কোনোভাবেই ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্টের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না জানিয়ে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ কর্মকর্তা মুনতাসিরুল রহমান বলেন, ওই কারখানার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.
কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম জানান, কোনো প্রতিষ্ঠানের নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পানি বাজারজাতকরণের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত সরবর হ র ব যবস থ ব তলজ ত পর ব শ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।