শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। গতকাল সোমবার তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়ে নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার চার মাসের মধ্যে পদত্যাগ করলেন তিনি।
জানতে চাইলে পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে কোনো কিছু জানাতে রাজি হননি আমিনুল ইসলাম। শুধু বলেন, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। কী কারণে পদত্যাগ করেছি, তা নিয়ে কিছু জানাতে চাচ্ছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শ অনুযায়ীই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য। 
গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। একই সঙ্গে তাঁকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতদিন শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে যান তিনি। ওই দিন নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী ড.

চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)।‌
এর আগের দিন আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, নতুন উপদেষ্টা হিসেবে তিনি শপথ নিতে যাচ্ছেন। এটি নিয়ে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেন। তাঁর এ বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দেয়। পরদিন নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা যোগ দিলেও সেই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।

পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়ার পর গতকাল ড. আমিনুল ইসলামকে অনেকটা বিষণ্ন মনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ত্যাগ করতে দেখা যায়। মন্ত্রণালয়ের রীতি অনুযায়ী, কোনো উপদেষ্টা বা মন্ত্রী পদত্যাগ বা দায়িত্ব হস্তান্তর করলে তাঁকে মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কিন্তু গতকাল তাঁর বিদায় ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মন্ত্রণালয়ে তাঁর বিদায়ের শেষ মুহূর্তে শিক্ষা উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, পিএস, এমনকি তাঁর দপ্তরের কোনো কর্মকর্তাও আসেননি। 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রণালয়ে তিনি গত চার মাসে অনেকটা হতাশা বোধ করছিলেন। আমিনুল ইসলামকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাঁর কাছে কোনো ফাইল দেওয়া হতো না। মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণে তাঁর কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল না। বিভিন্ন সময়ে তিনি এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আক্ষেপও করেছেন। এসব নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলতে গেলে তাঁকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এসব কারণেই তিনি পদত্যাগ করেন।

সরকারের আরেকটি সূত্র বলছে, গত সপ্তাহে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বেচ্ছায় শিক্ষা উপদেষ্টার পদ ছাড়তে চাইলে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ভেবেছিলেন, তাঁকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এটা তার জন্য একটা অপমান। এই কষ্ট থেকে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারকে যেদিন মন্ত্রণালয়ে বরণ করা হয়, সেদিনও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
তবে পদত্যাগ করলেও কোনো না কোনোভাবে শিক্ষার সঙ্গে থাকবেন বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী গতকাল প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার নতুন বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গতকালই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগদান করেছেন। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, উপদেষ্টাকে সহায়তা দেওয়ার জন্য তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড সাইকোলজি এবং অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্স একাডেমি, ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের স্কুল অব বিজনেসে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদত য গ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ