সিরিয়ায় ইসলামবাদী পুনরুত্থানের ইঙ্গিত
Published: 10th, March 2025 GMT
এটি স্পষ্ট করে বলা গুরুত্বপূর্ণ– ইসলামবাদ ও ইসলাম এক বস্তু নয়; দুটি আলাদা। ইসলামবাদ এমন এক রাজনৈতিক মতাদর্শ, যা শরিয়াকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে চায় এবং ইসলামের নামে রাজনৈতিক শক্তি গড়ার লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলনে তৎপর থাকে।
গত দশকে আরব বসন্তের দ্বিতীয় তরঙ্গে (২০১৮-১৯) ইসলামপন্থিদের জনপ্রিয়তার ক্রমাগত হ্রাস স্পষ্ট হয়েছে, যা সুদান, ইরাক, লেবানন এবং কিছুটা কম পরিমাণে আলজেরিয়ায় ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়ে। এটি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ধর্মীয় পরিসরের মধ্যকার পার্থক্য আরও স্পষ্ট করে তোলে। তবে সিরিয়ার অগ্রগতি নতুন মাত্রার সূচনা করে, যা এ অঞ্চলে ইসলামবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুনভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার চাহিদা তুলে ধরে।
২০২১ সাল থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে অপমানজনকভাবে বিদায় নিতে তালেবানের সাফল্য; ২০২৩ সালের অক্টোবরে আল-আকসা ফ্লাড অপারেশন এবং গত বছরের শেষে দামেস্কে এইচটিএসের সশস্ত্র প্রবেশ।
এসব ঘটনা ইসলামবাদী তৎপরতার তিনটি মূল বিষয় তুলে ধরে। এক.
সিরিয়ার নতুন সরকার গভীরভাবে পোক্ত বৈষম্য দূর না করেই বাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছে। এ সিদ্ধান্তের লক্ষ্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে দ্রুত একীভূতকরণ। তবুও দীর্ঘস্থায়ী অসম বণ্টন সমস্যা মোকাবিলায় এখানে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। এটি এমন এক জটিলতা, যা বাজার অর্থনীতির কারণে আরও বাড়তে পারে। তদুপরি দখলদারিত্ববিরোধী সংগ্রাম, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে সম্পর্কগুলো এখনও সুস্পষ্ট করা হয়নি।
একাধিক বিষয় ঘিরে জনপরিসরে বিতর্ক চলমান; বিশেষ কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীভূত নয়। কারও কারও মতে, আসাদ সরকারের পতন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ ঘাঁটির পতন, যা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য ক্ষুণ্ন করবে। কেউ কেউ যুক্তি দেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের মুক্তির পথে অটল থাকাও জরুরি।
যেসব রাষ্ট্র ইসলামবাদকে তাদের পথের দিশারি হিসেবে গ্রহণ করেছে, যেমন বিপ্লবী (ইরান), নির্বাচনী (২০১২-পরবর্তী তুরস্ক), অভ্যুত্থানের মাধ্যমে (সুদান) অথবা ঐতিহ্যবাহীরূপে (সৌদি আরব), তাদের অতীতের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। তবু আজও এ অঞ্চলে ইসলামের শক্তিশালী আবেদন রয়েছে। তা ছাড়া আগামী বছরগুলোতে এ অঞ্চলের আসন্ন বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলন যেভাবে বহুমুখী সংকট মোকাবিলা করবে, তা ধর্মের দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকাকে উৎসাহিত করবে।
আমার দৃষ্টিতে চারটি মূল বিষয় ঘিরে ইসলামবাদ এবং এ অঞ্চলের বাস্তবতার মধ্যে সম্পর্ক গড়াবে। জাতীয় স্বাধীনতা, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ, সব ধরনের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সম্পদ, সুযোগ ও সম্পত্তির সুষ্ঠু বণ্টন বিবেচনায় নিয়ে একটি অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের সক্ষমতা।
এগুলোসহ নিকট ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন কিছু ঘটনা আরব যুবকদের ধর্মীয় ভাবধারায় ক্রমবর্ধমান আস্থা তুলে ধরে, যদিও কোনো স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। আল-আকসা প্লাবন, যেমনটি আমি আগে লক্ষ্য করেছি, ৩০ বছরের কম বয়সী আরবদের মধ্যে ধর্মের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা স্পষ্ট করে। আমি বিশ্বাস করি, সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে আরও জোরদার করতে পারে।
এই শাসন ব্যবস্থার আসল সমস্যা হলো জনসাধারণের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত তীব্র ধর্মীয় ভাবধারার উত্থান, যা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এতে অর্থপূর্ণ সংস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিক পথের অভাব রয়েছে।
হেশাম গাফর: ইসলামী চিন্তাভাবনা, আন্দোলন ও সংঘাত নিরসন বিশেষজ্ঞ; মিডল ইস্ট আই থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যু যেখানে রমরমা ব্যবসা হয়ে উঠছে
দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দর নগরী বুসানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে কফিন। দেশটিতে ভবিষ্যতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালকদের প্রশিক্ষণের জন্য এগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ফলে মৃত্যুর ব্যবসায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক লোক কাজ খুঁজে পাচ্ছে। কারণ দেশটিতে জন্মহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ৫০ বা তার বেশি।
বুসান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাপড়ে সাবধানে একটি পুতুল জড়িয়ে, কাপড়টিকে আসল চামড়ার উপর মসৃণ করে, তারপর আলতো করে কফিনে নামিয়ে দিচ্ছিল।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রশাসনের শিক্ষার্থী ২৭ বছর বয়সী জ্যাং জিন-ইয়ং বলেন, “আমাদের সমাজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে, আমি ভেবেছিলাম এই ধরণের কাজের চাহিদা আরো বাড়বে।”
আরেক ছাত্র, ২৩ বছর বয়সী ইম সে-জিন তার দাদীর মৃত্যুর পর মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি বলেন, “তার (দাদীর) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমি দেখেছি পরিচালকরা তাকে শেষ বিদায়ের জন্য কতটা সুন্দরভাবে প্রস্তুত করেছেন। আমি গভীর কৃতজ্ঞ বোধ করছি।”
দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ক্রমশ একাকী জীবনযাপন করছে এবং নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাচ্ছে। এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির প্রায় ৪২ শতাংশ এখন একাকী জীবনযাপন করে।
এই পরিসংখ্যান দেশটিতে একটি নতুন পেশার আবির্ভাবকে প্রতিফলিত করছে।
উন্নত দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। এই ‘একাকী মৃত্যু’-তে সেইসব ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত যারা আত্মহত্যা করেছেন।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবসায়ের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি কিম ডু-নিয়ন বলেন, তার ২০ বছর বয়সী ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছে।
তিনি বলেন, “মানুষ যখন একসাথে থাকে, তখন তারা জিনিসপত্র ভাগ করে নেয়... এমনকি যদি একজন ব্যক্তি মারা যায়, সেই জিনিসপত্রগুলি থেকে যায়। কিন্তু যখন কেউ একা মারা যায়, তখন সবকিছু পরিষ্কার করতে হবে।”
তবে নিজের পেশা নিয়ে ভয়ও পান কিম।
তিনি বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি। আপনি যতই প্রস্তুতি নিন না কেন, একজন মৃত ব্যক্তির মুখোমুখি হওয়া ভীতিকর।”
ঢাকা/শাহেদ