শেখ হাসিনার শাসনামলজুড়ে নির্যাতন, সহিংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। জুলাই ও আগস্ট মাসের রক্তাক্ত কয়েক সপ্তাহে তাঁর দমনমূলক শাসনের প্রতিবাদে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হন। জাতিসংঘের মতে, পুলিশের এ সহিংস দমননীতি ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হতে পারে। তবে শেখ হাসিনা সব ধরনের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 
গতকাল সোমবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ড.

ইউনূস যখন গত আগস্টে বাংলাদেশে ফেরেন, তখন বিধ্বস্ত এক দেশ তাঁকে স্বাগত জানায়। রাস্তাগুলো তখনও রক্তে লাল; মর্গে স্তূপীকৃত হাজারো প্রতিবাদী ও শিশুর লাশ, যাদের গুলি করে হত্যা করেছিল পুলিশ। ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর ছাত্র নেতৃত্বাধীন এক বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা।

দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছিলেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে তিনি রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হন এবং বছরের পর বছর অপপ্রচার ও নিপীড়নের শিকার হন। বেশির ভাগ সময় তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন। কিন্তু যখন ছাত্ররা তাঁকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান, তিনি রাজি হন। 
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন, তা বিশাল। এটি একটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ ছিল, যেন আরেকটি গাজা। তবে এখানে ভবন নয়, পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস করা হয়েছে।’ 

ইউনূসের বাংলাদেশে ফেরাকে দেশটির নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হয়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর ছয় মাসে শেখ হাসিনার আশ্রয়হীন বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা  হয়। শেখ হাসিনার সমালোচকদের নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ ওঠা গোপন আটককেন্দ্র খালি করা হয়। ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের  মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে দশকের মধ্যে প্রথম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। এর পর তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। 
ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদিও ব্যাপকভাবে সম্মানিত, তাঁর শাসন ক্ষমতা ও প্রতিশ্রুত সংস্কারের গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় ফিরতে আগ্রহী এবং ইউনূসের ওপর নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের জন্য চাপ বাড়াচ্ছে, যা তাঁর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররাও নিজস্ব দল গঠন করেছে। বিএনপি 
নেতা আমীর খসরু বলেছেন, নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব আয়োজন করা উচিত। এ সরকার শুধু একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা। তাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব, ম্যান্ডেট ও সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য জনসমর্থন নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জনরোষ ও ফৌজদারি অভিযোগের মুখে পুলিশ তাদের দায়িত্বে ফিরতে অনিচ্ছুক। এতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় গুন্ডাবাহিনীর অপরাধ বেড়েছে। নতুন গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান ও বিশিষ্ট ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা অসম্ভব। 

ইউনূস দেশের সমস্যাগুলোকে শেখ হাসিনার শাসনের ফলাফল হিসেবে দেখাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসন কোনো সরকার ছিল না, এটি ছিল একদল ডাকাতের পরিবার।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির মাত্রা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করে। তাঁর আত্মীয়দের মধ্যে যারা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স র জন য ইউন স ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ