কক্সবাজারে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি’র (ইউএনডিপি) সঙ্গে কাজ করবে জাপান সরকার।

ঢাকায় অবস্থিত জাপান দূতাবাসে সোমবার (মার্চ ১০) এই উদ্দ্যেশ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই পক্ষ।  

“সাস্টেনেবল সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট” নামে এই প্রকল্পটি কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মাঝে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবস্থার উন্নতি সাধন করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে এবং এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবে।

স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ ও ৬০ হাজার স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ১.

৫ মিলিয়ন আর্থিক সহায়তা করবে জাপান সরকার। তাকাহাশিনাওকি, জাপানের ভারপ্রাপ্ত চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলারের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও শরণার্থী শিবিরের কাছে অবস্থিত স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই প্রকল্প ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করেন তাকাহাশি নাওকি।

তাকাহাশি আশা ব্যক্ত করেন, “রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে এই প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে। আমি আশা করি, এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে বর্জ্য বিষয়ক জনসচেতনতার পাশাপাশি, জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি হবে এবং তাদের অর্থ উপার্জনের পথও তৈরি হবে। দিনশেষে এটি একটি স্বাস্থ্যকর, লিঙ্গ ও জলবায়ু উপযোগী সামাজিক বাস্তুসংস্থান তৈরিতে সাহায্য করবে। জাপান এই ধরনের টেকসই উদ্যোগে জড়িত থাকতে সবসময় আগ্রহী। তাই নিজেরা সহায়তা করার পাশাপাশি ইউএনডিপি’র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে এসব বিষয়ে সহযোগিতা করে যাবে।”

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার অংশীদারমূলক কাজের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন,  “টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধু মানুষের জন্য না, পরিবেশের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাপান-ইউএনডিপি’র অংশীদারমূলক কাজ শুধুমাত্র বর্তমান সময়ে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের জন্য না, বরং ভবিষ্যতেও মানুষ কিভাবে পরিবেশের ক্ষতি না করে বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেইটা নিয়ে কাজ করবে। কক্সবাজারে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় জনগণের পরামর্শ অনুযায়ী নতুন নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আমরা কাজ করব।”

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই জাপান বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। নতুন এই আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি দেশটি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকার, ইউএনডিপি ও জাতিংসঘের অন্যান্য সংস্থার ও নানা জাতীয় সংস্থাকে ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে সহায়তা করেছে।

ঢাকা/হাসান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউএনড প ক জ করব

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ