কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের জোরালো দাবি উঠেছে। তবে ২০০৬ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোন বিধান যুক্ত করা হয়নি। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে একাট্টা। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় বছরের পর বছর তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে ছাত্র সংসদ না থাকায় দক্ষ নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না বলে ভাবছেন শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীরা জানান, লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ছাত্র সংসদ গঠন করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। 

আরো পড়ুন:

ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী কণ্ঠ

কুবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের দাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর সাধারণ শিক্ষার্থীরা আট দফা দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, গণতন্ত্রের চর্চা, সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতার বিকাশ, ক্যাম্পাসের শান্তি বজায় রাখা, লেজুড়বৃত্তিক ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে মুক্তি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করা। 

উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেওয়ার প্রায় ২ মাস পেরিয়ে গেলেও ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোন উদ্যোগ। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইভা বলেন, “দেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও নোংরা রাজনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। বর্তমানে বলা হয়ে থাকে, কুবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। আদতে কতটুকু নিষিদ্ধ আমি জানি না।”

তিনি বলেন, “হয়তো আমার মতো অন্যরাও এমনটাই ভাবে! নির্বাচন হয়ে গেলেই দেখা যাবে ক্ষমতা আবার একটা পক্ষের কাছে কুক্ষিগত হয়ে যাবে। এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা হলে নেতৃত্বের দক্ষতা, সমস্যার সমাধান, ডেমোক্রেটিক প্রক্রিয়ার চর্চা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।”

থিয়েটার কুবির সাধারণ সম্পাদক হান্নান রহিম বলেন, “প্রতিটা ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরাজনীতির কণ্ঠরোধ করবে। রাজনৈতিক দলগুলো কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না, তা বোঝার জন্য রকেট সাইন্টিস্ট হওয়ার দরকার নেই। তাদের থাকে হীন উদ্দেশ্য।”

তিনি বলেন, “প্রতিটা ক্যাম্পাসেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে জোর আওয়াজ তোলা উচিত, এটা সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীরা তাদের নেতৃত্ব সিলেক্ট করবে। এতে উঠে আসা নেতৃত্ব অধিকতর ছাত্রবান্ধব হবে, তারা কারো উপর বসগিরি-দাদাগিরি চালাবে না। হল-ক্যাম্পাস হয়ে উঠবে নির্মল শান্তির জায়গা।”

কুবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে প্রশাসন থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি একটি সাংবিধানিক অধিকার। এটা বন্ধ হওয়া কখনো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে আসতে পারে না। কুবি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”

প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। 

তিনি বলেন, “আমরা ছাত্র সংসদের বিপক্ষে না। প্রশাসন যদি সব ছাত্র সংগঠনগুলোকে উন্মুক্তভাবে কাজ করার স্বাধীনতা দিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে, তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে ক্রিয়াশীল কোন ছাত্র সংগঠনকে যদি রুদ্ধ রেখে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়, তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হব।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

হায়দার আলী বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ বছর ছাত্র সংসদ নিয়ে কেউ ভাবেনি। তবে এখন চিন্তা করতে হবে। আমি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। অন্য যারা আছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে বসতে হবে।”

ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ যেমন, কুবির ছাত্র সংসদও তেমন হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র স গঠন র জন ত সমস য গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবির ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর নিন্দা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষণিকা’ বাসে মঙ্গলবার দুপুরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরা আজমপুর এলাকায় টঙ্গী-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। হামলায় বাসচালকসহ পাঁচ–ছয়জন আহত হন। আহত ব্যক্তিরা বর্তমানে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ভিসি চত্বর ঘুরে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে তাঁরা সমাবেশ করেন।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মাহমুদ হামলাকারীদের দুর্বৃত্ত উল্লেখ করে বলেন, কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সারা দেশে বায়বীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকের ঘটনায় শিক্ষার্থী সেজে কারা হামলা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ক্ষণিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। অভ্যুত্থানের ৮ মাস পার হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে একদল স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হলে তারা হঠাৎ গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটিও ভাঙচুর করা হয়। এতে সাতজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। হামলার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তারা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একটি কুচক্রী মহল জুলাই গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী রেজিমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপণের এমন চেষ্টা আমরা দেখেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন বাংলাদেশে এমন যেকোনো কূটচাল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’

হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুধু শিক্ষার পরিবেশকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরও ইঙ্গিত করে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব ঘটনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানায় দলটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসলামী শ্রম আইন বাস্তবায়নের দাবি
  • ঢাবির ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর নিন্দা