‘সাহ্রিতে উঠে দেখি পানি নেই, চার দিনেও আসেনি’
Published: 11th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর নতুন বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে সবজি বিক্রেতা তামিম ইকবাল। তার বয়স ১২ বছর। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাকে পাওয়া গেল স্থানীয় ‘রোকেয়া হাইটস’ ভবনের সামনে। ওই ভবন থেকে এলাকাবাসীকে পানি দেওয়া হচ্ছিল।
একে একে পাঁচ কলসি পানি বাসায় পৌঁছে দেয় তামিম ইকবাল। পরে কথা হলো তার সঙ্গে। জানাল, চার দিন ধরে তাদের বাসায় ওয়াসার পানি আসছে না। পানি কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই। ফলে ভবনের গভীর নলকূপ থেকে পানি নিয়ে কাজ সারছে তারা। তবে গোসল করার সুযোগ হয়নি তিন দিনেও।
একই এলাকার বাসিন্দা বিউটি বেগমের অবস্থাও তামিম ইকবালের মতো। তাঁর বাসায় গত শনিবার রাত থেকে পানি নেই। তাঁকেও পাওয়া গেল রোকেয়া হাইটস ভবনের সামনে। বিউটি বলেন, ‘সাহ্রির সময় উঠে দেখি পানি নেই। ঘরে পানি জমা ছিল না। এখন চার দিনেও আসেনি পানি।’
চট্টগ্রামের ২০ এলাকায় চার দিন ধরেই তীব্র পানিসংকট চলছে। গত শনিবার রাতে ‘বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ওয়াসার পাইপলাইন ফুটো হয়ে যায়। এটি ছিল ওয়াসার ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার ব্যাসের প্রধান সঞ্চালন লাইন। প্রকল্পের কাজ করছিল পাওয়া গ্রিড বাংলাদেশ লিমিটেড। এর ফলে আগ্রাবাদ, পশ্চিম মাদারবাড়ী, হালিশহর, বড়পোল, ছোটপোল, ব্যাপারীপাড়া, গোসাইলডাঙ্গা, পানওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, ধনিয়ালাপাড়া, কদমতলী, হাজীপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরীপাড়া, পাহাড়তলী, ঈদগাহ, দেওয়ানহাটসহ সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। আজ দুপুরেও পাইপলাইন মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
তবে পাইপলাইন মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের ঠিকাদারের ভুলের কারণে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খননযন্ত্রের আঘাতে পাইপ ফুটো হয়। এতে হালিশহরের জলাধারটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফুটো পাইপ মেরামতকাজ আজ রাতের মধ্যে শেষ করা চেষ্টা চলছে।
‘রোজার দিনে এত ভোগান্তি নিতে পারছি না’
আজ বেলা একটার দিকে দেখা যায়, নয়াবাজারের রোকেয়া হাইটসের জলাধার থেকে একটি পাইপ টেনে ফটকের সামনে রাখা হয়েছে। পানি নিতে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছেন ৩০ জন নারী ও শিশু। এক কলসি পানি কোমরে তুলে নিয়ে শারমিন আক্তার (৩৫) প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজার দিনে এত ভোগান্তি নিতে পারছি না। রোজা রেখে পানি টেনে নেওয়ার শক্তি নেই। তবু এই কাজ করতে হচ্ছে। নইলে রান্না করা যাবে না।’
ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে পানি পান আনোয়ারা বেগম। তাঁকেও বেশ ক্লান্ত দেখা গেল। চল্লিশোর্ধ্ব এই গৃহকর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাহ্রি শেষ করে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়েছিলাম। তারপর উঠে কাজে চলে যাই। এরপর এসে পানি টানতে হচ্ছে। নইলে ইফতার করা সম্ভব হবে না। ঘরে রান্নার পানি নেই।’
রোকেয়া হাইটসের তত্ত্বাবধায়ক মো.
নগরের ঈদগাহ বউবাজার এলাকার একটি গভীর নলকূপ থেকে ২০ লিটার পানি ৫০ টাকায় কিনে ঘরে ফিরছিলেন গাড়িচালক মোহাম্মদ জসিম। তখন বেলা দুইটা। জসিম জানান, তাঁর বাসায় ছেলেমেয়েসহ পাঁচ সদস্য। দিনে ২০০ লিটার পানি কিনতে হচ্ছে। এ জন্য খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা। এই বাড়তি খরচের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বউবাজারের বিভিন্ন মুদিদোকানে বোতলজাত পানি বিক্রির পরিমাণও বেড়ে গেছে। স্থানীয় মুদিদোকানি রফিক উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, গত চার দিনে কয়েক শ লিটার বোতলজাত পানি তিনি বিক্রি করেছেন। আগে এত বিক্রি হতো না। ওয়াসার পাইপ ফুটো হওয়ার পর বিক্রি বেড়ে গেছে।
ওয়াসা ঘেরাও
পানিসংকটের সমাধান চেয়ে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেন বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক বাসিন্দা। তাঁরা নানা ধরনের স্লোগান দেন। পরে বাসিন্দাদের কয়েকজন গিয়ে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানির অভাবে জনসাধারণ দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। কিন্তু ওয়াসা প্রশাসনের ঘুম ভাঙছে না। দ্রুত এ সংকটের সমাধান করতে হবে।
দেওয়ানহাটের বাসিন্দা আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার রাত থেকে পাইপে কোনো পানি নেই। হঠাৎ করে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে জমা কোনো পানিই ছিল না। বড় বিপদে পড়তে হয়েছে।
২৩ নম্বর পাঠানটুলি চট্টগ্রাম ওয়াসা গ্রাহক কল্যাণ কমিটির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগরবাসীকে পানি সরবরাহে দেড় দশকে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে ওয়াসা। কিন্তু লাভ কী হলো? পানির সংকটের সমাধান তো হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক রকল প হ ইটস
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা