চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর নতুন বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে সবজি বিক্রেতা তামিম ইকবাল। তার বয়স ১২ বছর। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাকে পাওয়া গেল স্থানীয় ‘রোকেয়া হাইটস’ ভবনের সামনে। ওই ভবন থেকে এলাকাবাসীকে পানি দেওয়া হচ্ছিল।

একে একে পাঁচ কলসি পানি বাসায় পৌঁছে দেয় তামিম ইকবাল। পরে কথা হলো তার সঙ্গে। জানাল, চার দিন ধরে তাদের বাসায় ওয়াসার পানি আসছে না। পানি কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই। ফলে ভবনের গভীর নলকূপ থেকে পানি নিয়ে কাজ সারছে তারা। তবে গোসল করার সুযোগ হয়নি তিন দিনেও।

একই এলাকার বাসিন্দা বিউটি বেগমের অবস্থাও তামিম ইকবালের মতো। তাঁর বাসায় গত শনিবার রাত থেকে পানি নেই। তাঁকেও পাওয়া গেল রোকেয়া হাইটস ভবনের সামনে। বিউটি বলেন, ‘সাহ্‌রির সময় উঠে দেখি পানি নেই। ঘরে পানি জমা ছিল না। এখন চার দিনেও আসেনি পানি।’

চট্টগ্রামের ২০ এলাকায় চার দিন ধরেই তীব্র পানিসংকট চলছে। গত শনিবার রাতে ‘বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ওয়াসার পাইপলাইন ফুটো হয়ে যায়। এটি ছিল ওয়াসার ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার ব্যাসের প্রধান সঞ্চালন লাইন। প্রকল্পের কাজ করছিল পাওয়া গ্রিড বাংলাদেশ লিমিটেড। এর ফলে আগ্রাবাদ, পশ্চিম মাদারবাড়ী, হালিশহর, বড়পোল, ছোটপোল, ব্যাপারীপাড়া, গোসাইলডাঙ্গা, পানওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, ধনিয়ালাপাড়া, কদমতলী, হাজীপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরীপাড়া, পাহাড়তলী, ঈদগাহ, দেওয়ানহাটসহ সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। আজ দুপুরেও পাইপলাইন মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

তবে পাইপলাইন মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের ঠিকাদারের ভুলের কারণে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খননযন্ত্রের আঘাতে পাইপ ফুটো হয়। এতে হালিশহরের জলাধারটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফুটো পাইপ মেরামতকাজ আজ রাতের মধ্যে শেষ করা চেষ্টা চলছে।

‘রোজার দিনে এত ভোগান্তি নিতে পারছি না’

আজ বেলা একটার দিকে দেখা যায়, নয়াবাজারের রোকেয়া হাইটসের জলাধার থেকে একটি পাইপ টেনে ফটকের সামনে রাখা হয়েছে। পানি নিতে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছেন ৩০ জন নারী ও শিশু। এক কলসি পানি কোমরে তুলে নিয়ে শারমিন আক্তার (৩৫) প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজার দিনে এত ভোগান্তি নিতে পারছি না। রোজা রেখে পানি টেনে নেওয়ার শক্তি নেই। তবু এই কাজ করতে হচ্ছে। নইলে রান্না করা যাবে না।’

ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে পানি পান আনোয়ারা বেগম। তাঁকেও বেশ ক্লান্ত দেখা গেল। চল্লিশোর্ধ্ব এই গৃহকর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাহ্‌রি শেষ করে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়েছিলাম। তারপর উঠে কাজে চলে যাই। এরপর এসে পানি টানতে হচ্ছে। নইলে ইফতার করা সম্ভব হবে না। ঘরে রান্নার পানি নেই।’

রোকেয়া হাইটসের তত্ত্বাবধায়ক মো.

নুরুল হুদার তদারকিতে নারী, শিশুরা পানি নিচ্ছিলেন। এক ফাঁকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির মালিকের নির্দেশনায় এক দিন পরপর পানি দেওয়া হচ্ছে। খাওয়ার জন্য দূরদূরান্ত থেকে এসে পানি নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।

নগরের ঈদগাহ বউবাজার এলাকার একটি গভীর নলকূপ থেকে ২০ লিটার পানি ৫০ টাকায় কিনে ঘরে ফিরছিলেন গাড়িচালক মোহাম্মদ জসিম। তখন বেলা দুইটা। জসিম জানান, তাঁর বাসায় ছেলেমেয়েসহ পাঁচ সদস্য। দিনে ২০০ লিটার পানি কিনতে হচ্ছে। এ জন্য খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা। এই বাড়তি খরচের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বউবাজারের বিভিন্ন মুদিদোকানে বোতলজাত পানি বিক্রির পরিমাণও বেড়ে গেছে। স্থানীয় মুদিদোকানি রফিক উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, গত চার দিনে কয়েক শ লিটার বোতলজাত পানি তিনি বিক্রি করেছেন। আগে এত বিক্রি হতো না। ওয়াসার পাইপ ফুটো হওয়ার পর বিক্রি বেড়ে গেছে।

ওয়াসা ঘেরাও

পানিসংকটের সমাধান চেয়ে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেন বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক বাসিন্দা। তাঁরা নানা ধরনের স্লোগান দেন। পরে বাসিন্দাদের কয়েকজন গিয়ে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানির অভাবে জনসাধারণ দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। কিন্তু ওয়াসা প্রশাসনের ঘুম ভাঙছে না। দ্রুত এ সংকটের সমাধান করতে হবে।

দেওয়ানহাটের বাসিন্দা আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার রাত থেকে পাইপে কোনো পানি নেই। হঠাৎ করে পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে জমা কোনো পানিই ছিল না। বড় বিপদে পড়তে হয়েছে।

২৩ নম্বর পাঠানটুলি চট্টগ্রাম ওয়াসা গ্রাহক কল্যাণ কমিটির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগরবাসীকে পানি সরবরাহে দেড় দশকে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে ওয়াসা। কিন্তু লাভ কী হলো? পানির সংকটের সমাধান তো হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক রকল প হ ইটস

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ