‘রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে বাজারে সবজি বিক্রি করি। পৌরসভার কাঁচাবাজারে শেডের একটা দোকান নিতে ধারদেনা করে ১ লাখ টাকা জোগাড় করি ইঞ্জিনিয়ার স্যারের কাছে গেছিলাম। হাত ধরি কত অনুরোধ করনু তবুও দোকান দিল না। স্যারের সাফ কথা–২ লাখ টাকা নেবো, এক লাখ টাকার রসিদ দিব। বাকি টাকা জোগাড় করবার পারি নাই, দোকান নেয়া হয় নাই।’
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুরের সরদারপাড়া গ্রামের দরিদ্র সবজি ব্যবসায়ী রমজান আলী। একই অভিযোগ ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন, মকবুল হোসেন, আনছার আলীসহ অনেকের।
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজশে রাস্তা সংস্কারসহ সুপারমার্কেট, কাঁচাবাজার (শেড) ঘর বরাদ্দে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ফলে পাঁচ বছর আগে শেষ হওয়া মার্কেট আজও চালু হয়নি।
জানা গেছে, ২০২০ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁচাবাজার শেড ও তিনতলা সুপারমার্কেটের কাজ শেষ হয়। পরে সুপারমার্কেটে ৩০টি দোকান ও ৭টি শেড ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি দোকান ও শেডের জন্য লিজ মানি বাবদ (জামানত) এক লাখ টাকা নেওয়ার কথা। আদায় করা হয়েছিল দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাড়তি টাকা আদায় করা হলেও রসিদ দেওয়া হয় এক লাখ টাকার। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অর্ধেক টাকার রসিদ দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই ঘর নিচ্ছেন না। তারা অর্থ ফেরত চেয়ে আবেদন করায় বিপদে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ২২ জন ব্যবসায়ী বরাদ্দের টাকা ফেরত নিয়েছেন। দুই কর্মকর্তার এমন অনিয়মে পৌরসভা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কাঁচাবাজারের ২৮ নম্বর শেডের মালিক আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমার কাছে দেড় লাখ টাকা নিয়ে ১ লাখ টাকার রসিদ দিয়েছে পৌর কতৃরপক্ষ। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা কেন বেশি দিব।’
আইয়ুব আলীর মতো ২৭ নম্বর ঘরের মালিক আব্দুর রাজ্জাক ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ১৩ নম্বর ঘরের মালিক শাহজাহান আলী ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। দু’জনকেই ১ লাখ টাকার রসিদ দেওয়া হয়েছে। তারা বলছেন, পৌরসভা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য শেড করে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে গরিবের ওপর জুলুম করছে। আমরা টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করেছি। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমরা ঘর নেব না।
এখানেই থেমে নেই দুই কর্মকর্তার অনিয়ম। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেও ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছেন। রসিদ ছাড়া আদায় করা এ টাকা সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে ভাগবাটোয়া করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সহকারী প্রকৌশলী শাহীনুর রহমান অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, কাউকেই রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। কেন দিচ্ছেন না প্রশ্ন করলে সদুত্তর দিতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
এ প্রশ্ন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মাহবুবুল আলমকে করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এক লাখ টাকাই নেওয়া হয়েছে। বাড়তি টাকা তারা কাকে দিয়েছেন আমি জানি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নয়ন কুমার সাহা বলেন, ব্যবসায়ীদের কয়েকজন বরাদ্দের টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন। কীভাবে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া যায় তা দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন করে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র এক ল খ ট ক কর মকর ত বর দ দ প রসভ
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে