২০১৩ সালে যখন মার্ক কার্নি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি প্রচলিত আট বছর মেয়াদের পরিবর্তে পাঁচ বছর মেয়াদ নিয়ে কথা বলেন। এর অর্থ ছিল, পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তিনি কানাডায় ফিরে যেতে আগ্রহী। সেই নির্বাচন ২০১৯ সালে হয়ে যায়, আর কার্নি ব্যাংকে তাঁর দায়িত্বকাল বাড়িয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। এক বছর পর গার্ডিয়ান তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তিনি কি একদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবেন? কার্নি একটু লাজুক ভঙ্গিতে বলেন, ‘আরে, সময়টা দেখো’! তিনি ভ্রু কুঁচকে হেসেছিলেন।
রোববার সন্ধ্যায় কার্নি উদারপন্থি নেতৃত্বের দৌড়ে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। প্রথম গণনায় মোট পয়েন্টের ৮৫.
কার্নি এখন কেবল লিবারেল পার্টির নেতা নন, আগামী দিনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। পরবর্তীকালে তাঁর প্রভাব দ্রুত পরীক্ষার মধ্যে পড়বে। অটোয়াতে গুঞ্জন আছে, কার্নি দ্রুত একটি ফেডারেল নির্বাচনের ডাক দেবেন। তা না হলে তিনি অবৈধতার অভিযোগের মুখে পড়বেন। এক, হাউসে আসনবিহীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। দুই, দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো উদারপন্থিরা জরিপে বিরোধী রক্ষণশীলদের সঙ্গে ব্যবধান কমাতে শুরু করেছে।
এটি একটি চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন। মাত্র দুই মাস আগে যখন ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দেন, তখন উদারপন্থিরা কানাডিয়ানদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছিল। এখন দলটির সমর্থন প্রায় ৩০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প আংশিক অনুঘটকের কাজ করেছেন। তিনি দ্রুত কানাডাবাসীর মনোযোগ বহির্বিশ্বের দিকে টেনে নিয়েছেন এবং তাদের অগ্রাধিকার নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছেন। এ বিবেচনায় রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তারা কাকে বিশ্বাস করেন।
ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে কানাডাবাসীর এর উত্তরের জন্য উদারপন্থিদের দিকে তাকাতে হচ্ছে, যখন কার্নি নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছেন– এটা স্পষ্ট হয়। ‘আমার জীবনের সবকিছুই এই মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছে’– রোববার উদারপন্থি জনতার উদ্দেশে কার্নি এ কথা বলেন। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, অসংখ্য কানাডাবাসী এতে সহমত পোষণ করছেন।
নিঃসন্দেহে এটি নেতৃত্বের দৌড়ে কার্নির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে হতাশ করেছে। রোববার ফ্রিল্যান্ড দলীয় ভোটে মাত্র ৮ শতাংশ সমর্থন পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এমনকি কার্নি ফ্রিল্যান্ডকে তাঁর নিজের এলাকায় ১,৩২২-১৮৮ ভোটে পরাজিত করেছেন। সত্যি বলতে, এটি ফ্রিল্যান্ডের জন্য একটি ভয়াবহ ফল ছিল। এটি এমন এক ফল, যা কয়েক মাস আগে খুব কম লোকই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।
ট্রাম্প কানাডাবাসীকে আবার জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ট্রুডোই তাঁর শেষ পদক্ষেপে কানাডাবাসীর এমন অনুভূতি ধারণে সাহায্য করেছেন, এখনও তারা একসঙ্গে আছেন। সংকটের মুহূর্তে তিনি সবসময় ভালো ছিলেন এবং ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতি তাঁর প্রতিক্রিয়াই তার প্রমাণ।
২০২১ সালে কার্নি ব্যাখ্যা করেছিলেন, ‘যদি আমি বেসরকারি অর্থায়নে থাকতাম, তাহলে ২০ বছর ধরে সরকারি চাকরিতে থাকার সুযোগ-ব্যয় (অপরচুনিটি কস্ট) অনেক বেশি হতো। আমি কি টাকার পরোয়া করি? স্পষ্টতই, আমার একটা পরিবার আছে এবং কিছু কাজকর্মও রয়েছে। কিন্তু আমি এখন পুরোপুরি অটোয়াতে আছি। আমি অটোয়াতে ফিরে এসেছি। এটি এখন আগের চেয়েও বেশি সত্য। কানাডায় শিগগিরই একটি নির্বাচন আসছে এবং আমরা দেখব, কার্নির জীবনের সবকিছু তাঁকে আরও একটি জয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে কিনা। ইতোমধ্যে মনে হচ্ছে, কার্নি ঠিক যেখানে থাকতে চান সেখানেই আছেন।
কলিন হর্গান: টরন্টোভিত্তিক লেখক এবং জাস্টিন ট্রুডোর সাবেক বক্তৃতা-লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন য কর ছ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।