প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসাতে উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চায় জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন (জেবিআইসি) এবং দেশটির অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে। এসব ব্যাংক থেকে সরকার ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ দেবে জেবিআইসি। বাকি অর্থ দেবে জাপানের অন্য কোনো ব্যাংক।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার এই ঋণ নিলে তার জন্য সুদ দিতে হবে ৩ দশমিক ৩৯ থেকে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত। আর এই ঋণ হবে কঠিন শর্তের। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ৬ মাস পর। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ৭ লাখ এবং কর্ণফুলী গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ৪ লাখ ৩৫ হাজার প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানো হবে। যদিও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগ এই ঋণের ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সম্প্রতি তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর ব্যাপারে একটা গ্রুপ আমার সঙ্গে দেখা করে গেছে। তারা আবার আসতে চায়। একদিকে উচ্চ সুদের বাণিজ্যিক ঋণ, অন্যদিকে অবচয়ের কারণে সম্ভাব্য বাড়তি চাপ। উভয় কারণেই বিষয়টির পক্ষে নই আমি।’

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের এপ্রিলে নতুন আবাসিক গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ২০১৯ সালে এসে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কমিটি গঠন করে কিছুসংখ্যক ব্যক্তির বাসায় নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে শিল্পমালিকেরা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন না। ফলে আবাসিক সংযোগ সরকার আর দেবে না। আবার প্রিপেইড মিটার বসানোর যে আলোচনা হচ্ছে, তা ডিজিটালও নয়। এ মিটার বসাতে সরকারের কোনো তহবিল নেই। তাই ঋণের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ ১২টি জেলায় গ্যাস সরবরাহ করছে তিতাস। আর চট্টগ্রাম, রাঙামাটিসহ পাঁচটি জেলার গ্রাহকেরা রয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাসের আওতায়। তিতাস ও কর্ণফুলীর মোট আবাসিক গ্রাহক ৩৪ লাখ, যার মধ্যে তিতাসের ২৮ লাখ ও কর্ণফুলীর ৬ লাখ। তিতাস এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৩ হাজার প্রিপেইড মিটার বসিয়েছে আর কর্ণফুলী বসিয়েছে ৬২ হাজার।

জেবিআইসি চায় অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা

প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর জন্য তোড়জোড় করছে জাপানি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একটি হচ্ছে জাপানি টয়োকেইকি কোম্পানি অন্যটি অনদা ইনকরপোরেশন। উভয় প্রতিষ্ঠানই ঋণের ব্যবস্থা করবে জেবিআইসি ও অন্য জাপানি ব্যাংক থেকে। এর বাইরে বিমা কোম্পানি হিসেবে থাকবে নিপ্পন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইনস্যুরেন্স (নেক্সি)। নেক্সিকে প্রিমিয়ামও দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। শুধু তাই নয়, ঋণের অর্থ ফেরতে জেবিআইসি অর্থ বিভাগ থেকে নিশ্চয়তা চায়। গত বছরের ৪ অক্টোবর জেবিআইসির পরিচালক শিবুইয়া আৎসুকি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে এক চিঠিতে জানান, প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর ব্যাপারে তারা ঋণ দিতে আগ্রহী, তবে প্রকল্পের আওতায় যেসব পণ্য ও সেবা কেনা হবে, তার ৮৫ শতাংশই জাপানি হতে হবে।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহনেওয়াজ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস থেকে আগে এ ব্যাপারে নেতিবাচক মতামত দেওয়া হয়েছিল। আদৌ এ গ্যাসের মিটার বসানোর দরকার আছে কি নেই, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।

জানা গেছে, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তদবিরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সম্প্রতি একটি বৈঠক ডাকে সচিবালয়ে। অতিরিক্ত সচিব এস এম মঈন উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঋণ নিয়ে গ্যাসের মিটার বসানোর বিষয়টিকে নতুন করে সামনে আনা হয়। এতে ইআরডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি মার্চের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন শেষ হবে আশা করছে জেবিআইসি। এমনকি আগামী ৩০ এপ্রিল ঋণচুক্তিও করে ফেলতে চায় তারা। এ জন্য একটি কমিটিও করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুধু জাপানি বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করছি, ঋণ নেওয়া ও চুক্তি করার এখতিয়ার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের।’

মূল উদ্যোগ আওয়ামী সরকারের

২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর তিতাসের গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড গ্যাসের মিটার স্থাপনের ব্যাপারে একটি কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি করে জেবিআইসি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ চুক্তির আওতায় পরে জেবিআইসি থেকে ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকার সমান অর্থ চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সাধারণত বিদেশি ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে তা ইআরডিকে অবহিত থাকতে হয়।

জানতে চাইলে ইআরডি সচিব মো.

শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টা অনেক আগে একবার ইআরডির কাছে এসেছিল। ইআরডি বলে দিয়েছে এটা হবে না।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে প্রিপেইড গ্যাসের মিটার বসানোর চিন্তা থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক গ সরক র জ ব আইস সরক র র হয় ছ ল র জন য ব ষয়ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ