মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ মা-মেয়ের, স্বামী-শ্বশুরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
Published: 12th, March 2025 GMT
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের মসুরগাঁও এলাকার মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা দুজন মা ও মেয়ে। তাঁদের হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগে নিহত নারীর স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
নিহত দুজন হলেন তানিয়া আক্তার (৩২) ও তাঁর মেয়ে রাবেয়া (৪)। তানিয়া বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাদিরাবাদ এলাকার দুলাল হাওলাদারের মেয়ে ও হিজলা উপজেলার আবদুর রহমান মাঝির স্ত্রী। তানিয়া-আবদুর দম্পতির একমাত্র মেয়ে রাবেয়া। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
গোসাইরহাট থানা ও তানিয়ার পরিবার সূত্র জানায়, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাদিরাবাদ এলাকার দুলাল হাওলাদারের মেয়ে তানিয়া আক্তার (৩২)। ২০২০ সালে পাশের হিজলা উপজেলার চরইন্দুরিয়া এলাকার ইউসুফ মাঝির ছেলে আবদুর রহমান মাঝির সঙ্গে পারিবারিকভাবে তানিয়ার বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের জেরে প্রায়ই স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির সঙ্গে তানিয়ার ঝগড়া হতো। গত সোমবার তানিয়ার সঙ্গে তাঁদের আবার ঝগড়া হয়। তাঁরা তানিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
তানিয়া তখন মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। সন্ধ্যায় মেহেন্দিগঞ্জের গঙ্গাপুর লঞ্চ স্টেশন থেকে সম্রাট-২ লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে করে ঢাকার সদরঘাটে রওনা হন। তানিয়াকে খুঁজতে ওই লঞ্চে আসেন তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও তাঁদের এক স্বজন। ওই স্টেশন থেকে লঞ্চ ছাড়ার পর রাত ১১টার দিকে তানিয়ার শ্বশুর পুত্রবধূর বড় ভাই আমীর হোসেনকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তানিয়াকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমীর হোসেনকে সদরঘাটে আসার অনুরোধ করেন ইউসুফ। পরের দিন গতকাল সকালে আমীর হোসেন সদরঘাটে গেলেও তানিয়াকে পাননি। তিনি তানিয়ার স্বামী, শ্বশুর ও তাঁদের এক স্বজনকে দেখতে পান। তাঁরা তাঁকে জানান, তানিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আমীর হোসেন গ্রামে তাঁর বাবাকে ফোন করে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে মেয়ে ও নাতনির লাশ উদ্ধারের খবর পান তানিয়ার বাবা।
আরও পড়ুনশরীয়তপুরে মেঘনা নদী থেকে নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার১১ মার্চ ২০২৫আজ বুধবার সকালে তানিয়া ও তাঁর মেয়ের মরদেহ নিতে সদর হাসপাতালে আসেন বাবার বাড়ির স্বজনেরা। সেখানে তানিয়ার ভাই আমীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বোন রাত ১২টার দিকে ফোন করে লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে থাকার কথা জানায়। সকালে আমি তাকে আনতে সদরঘাট যাব তা–ও তাকে জানাই। তার স্বামী ও শ্বশুর তাকে মেরে ফেলতে পারে—এমন শঙ্কার কথা আমাকে জানায়। তখন আমি তার শ্বশুরের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওকে বিরক্ত না করতে বলি। যা আলোচনা আছে সকালে হবে বলে ওর শ্বশুর আমাকে আশ্বস্ত করেন। লঞ্চ সকালে সদরঘাট পৌঁছালে আমার বোনকে পাইনি। তখন লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে গিয়ে বোনের বোরকা, হিজাব, ব্যাগ ও কিছু খাবার দেখতে পাই। তখন তার স্বামী ও শ্বশুর লঞ্চে ছিলেন। যখন আমি পুলিশের কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিই, তখনই তাঁরা সদরঘাট থেকে সটকে পড়েন। তানিয়ার স্বামী ও শ্বশুরই তাকে ও তার মেয়েকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছেন। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
গোসারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদ আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এটা হত্যাকাণ্ড। তাই হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলাটি নৌ পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্তের পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র হ স ন উপজ ল র সদরঘ ট র জন য এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।