কিশোরগঞ্জে প্রণোদনার নতুন জাতের হাইব্রিড ধানে আগাম শীষ বেরিয়ে গেছে। এতে কৃষকরা উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত হলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদনে প্রভাব পড়বে খুব সামান্যই।

ধানে আগাম শীষ বেরিয়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন কৃষি কর্মকর্তা ও বীজ সরবরাহকারী কোম্পানির কর্মকর্তারা– বেশি বয়সের চারা রোপণ, প্রতি গোছায় একটির জায়গায় তিনটি চারা রোপণ ও বিলম্বিত সেচ ব্যবস্থাপনা। 

গত সোমবার সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের গাগলাইল ব্লকের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার কৃষক নূরুল ইসলাম, সিদ্দিক হোসেন, আব্দুল হাই ও ইছহাক মিয়া তাদের জমিতে লাল তীর কোম্পানির ‘টিয়া’ নামে প্রণোদনার হাইব্রিড ধানের আবাদ করেছেন। নূরুল ইসলাম তিন বিঘা, সিদ্দিক হোসেন ও আব্দুল হাই এক বিঘা করে এবং ইছহাক মিয়া ৪০ শতাংশ জমিতে এই জাতের ধানের আবাদ করেছেন। তারা বলছেন, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-৮৯সহ উফশী জাতের ধানে আরও অন্তত দেড় মাস পর শীষ বের হবে। কিন্তু এই হাইব্রিড ধানে এখনই শীষ বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের ধান উৎপাদন হতো ২৫ মণ। কিন্তু হাইব্রিড ‘টিয়া’ ধান বিঘায় ৩০ মণ হওয়ার কথা থাকলেও এখন কী হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সোমবারই জেলা খামারবাড়িতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক ইমরুল কায়েস, সহকারী উপপরিচালক (শস্য) শাহীনুল ইসলাম ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তালেবের কাছে আগাম শীষ বের হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তারা বর্ণনা শুনে সেদিনই বিকালে জমিগুলো পরিদর্শনে যান। বিষয়টি জানতে পেরে বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লাল তীর কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ওমর ফারুকও পরদিন মঙ্গলবার এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শন শেষে কৃষি কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম ও লাল তীরের কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, অন্যান্য উফশী জাতের ধানের জীবনকাল ১৬০ থেকে ১৬৫ দিন। কিন্তু হাইব্রিড টিয়ার জীবনকাল ১৩৫ থেকে ১৪০ দিন। উফশী ধানের চারা ৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সে রোপণ করতে হয়। আর টিয়া ধানের চারা ২১ দিন বয়সে রোপণ করার নিয়ম। টিয়া ধানের জীবনকাল ছোট হওয়ার কারণে উফশীর তুলনায় শীষ কিছুদিন আগেই বের হবে। যদিও কৃষকরা বলছেন, এক মাসের চারা রোপণ করেছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা জমি পরিদর্শন করে বললেন, দেড় মাসের চারা রোপণ করা হয়েছে। বেশি বয়সের চারা রোপণের কারণে রোপণ আর শীষ বের হওয়ার সময়ের ব্যবধানটা বেশি কম মনে হচ্ছে। শীষ একটু আগেভাগেই বেরিয়ে গেছে।

এ ছাড়া, হাইব্রিড ধান প্রতি গোছায় একটি করে চারা রোপণের নিয়ম। কৃষকরা তিনটি করে চারা রোপণ করেছেন। ফলে দ্রুত নতুন নতুন চারা (কুশি) জন্ম নিয়ে জমি বেশি ঘন হয়ে গেছে। তৃতীয়ত, যে এলাকায় টিয়া ধানের আবাদ করা হয়েছে, একই মাঠে অধিকাংশ জমিতে উফশী আবাদ করা হয়েছে। উফশীর চারা রোপণ করা হয় ৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সে। যে কারণে ওই মাঠে বিএডিসির গভীর নলকূপের সেচ কার্যক্রমও কিছুটা বিলম্বে শুরু হয়েছে। বিলম্বিত সেচের কারণেও হাইব্রিড রোপণ করতে গিয়ে চারার বয়স বেড়ে গিয়েছিল।

কৃষি কর্মকর্তা ও বীজ কোম্পানির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জমিগুলো পরিদর্শনে দেখা গেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরো জমির শীষ বেরিয়ে যাবে। অল্প কিছু আগাম শীষ বের হলেও ফলনে তেমন বিপর্যয় হবে না। হয়তো ঊনিশ-বিশ হতে পারে। তবে কৃষকরা যদি নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীতে টিয়া ধান আবাদ করেন, তাহলে এবার সামান্য যে সমস্যা হয়েছে, তাও হবে না। আরও কয়েকটি উপজেলায় কিছু জমিতে এরকম সমস্যা হয়েছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামীতে এটা কৃষকদের জন্য একটা অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজে লাগবে বলেও কর্মকর্তারা মনে করছেন।

কৃষি কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম বলেন, আগাম শীষ বের হওয়ার বিষয়টি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে জানিয়েছেন। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটেও জানাবেন। বেশি বয়সের চারা রোপণ করলে সব জাতের ধানেরই ফলন কম হয়। বেশি বয়সের চারা রোপণের কারণে দেশে বছরে ১১ হাজার কোটি টাকার ধান কম উৎপন্ন হয় বলেও তিনি জানান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ কর মকর ত র বয়স র চ র ল ইসল ম কর ছ ন হওয় র বলছ ন ক ষকর

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ