হাইব্রিড ধানে আগাম শীষ, শঙ্কায় কৃষক
Published: 13th, March 2025 GMT
কিশোরগঞ্জে প্রণোদনার নতুন জাতের হাইব্রিড ধানে আগাম শীষ বেরিয়ে গেছে। এতে কৃষকরা উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত হলেও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদনে প্রভাব পড়বে খুব সামান্যই।
ধানে আগাম শীষ বেরিয়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন কৃষি কর্মকর্তা ও বীজ সরবরাহকারী কোম্পানির কর্মকর্তারা– বেশি বয়সের চারা রোপণ, প্রতি গোছায় একটির জায়গায় তিনটি চারা রোপণ ও বিলম্বিত সেচ ব্যবস্থাপনা।
গত সোমবার সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের গাগলাইল ব্লকের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার কৃষক নূরুল ইসলাম, সিদ্দিক হোসেন, আব্দুল হাই ও ইছহাক মিয়া তাদের জমিতে লাল তীর কোম্পানির ‘টিয়া’ নামে প্রণোদনার হাইব্রিড ধানের আবাদ করেছেন। নূরুল ইসলাম তিন বিঘা, সিদ্দিক হোসেন ও আব্দুল হাই এক বিঘা করে এবং ইছহাক মিয়া ৪০ শতাংশ জমিতে এই জাতের ধানের আবাদ করেছেন। তারা বলছেন, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-৮৯সহ উফশী জাতের ধানে আরও অন্তত দেড় মাস পর শীষ বের হবে। কিন্তু এই হাইব্রিড ধানে এখনই শীষ বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের ধান উৎপাদন হতো ২৫ মণ। কিন্তু হাইব্রিড ‘টিয়া’ ধান বিঘায় ৩০ মণ হওয়ার কথা থাকলেও এখন কী হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সোমবারই জেলা খামারবাড়িতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক ইমরুল কায়েস, সহকারী উপপরিচালক (শস্য) শাহীনুল ইসলাম ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু তালেবের কাছে আগাম শীষ বের হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তারা বর্ণনা শুনে সেদিনই বিকালে জমিগুলো পরিদর্শনে যান। বিষয়টি জানতে পেরে বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লাল তীর কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ওমর ফারুকও পরদিন মঙ্গলবার এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শন শেষে কৃষি কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম ও লাল তীরের কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, অন্যান্য উফশী জাতের ধানের জীবনকাল ১৬০ থেকে ১৬৫ দিন। কিন্তু হাইব্রিড টিয়ার জীবনকাল ১৩৫ থেকে ১৪০ দিন। উফশী ধানের চারা ৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সে রোপণ করতে হয়। আর টিয়া ধানের চারা ২১ দিন বয়সে রোপণ করার নিয়ম। টিয়া ধানের জীবনকাল ছোট হওয়ার কারণে উফশীর তুলনায় শীষ কিছুদিন আগেই বের হবে। যদিও কৃষকরা বলছেন, এক মাসের চারা রোপণ করেছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা জমি পরিদর্শন করে বললেন, দেড় মাসের চারা রোপণ করা হয়েছে। বেশি বয়সের চারা রোপণের কারণে রোপণ আর শীষ বের হওয়ার সময়ের ব্যবধানটা বেশি কম মনে হচ্ছে। শীষ একটু আগেভাগেই বেরিয়ে গেছে।
এ ছাড়া, হাইব্রিড ধান প্রতি গোছায় একটি করে চারা রোপণের নিয়ম। কৃষকরা তিনটি করে চারা রোপণ করেছেন। ফলে দ্রুত নতুন নতুন চারা (কুশি) জন্ম নিয়ে জমি বেশি ঘন হয়ে গেছে। তৃতীয়ত, যে এলাকায় টিয়া ধানের আবাদ করা হয়েছে, একই মাঠে অধিকাংশ জমিতে উফশী আবাদ করা হয়েছে। উফশীর চারা রোপণ করা হয় ৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সে। যে কারণে ওই মাঠে বিএডিসির গভীর নলকূপের সেচ কার্যক্রমও কিছুটা বিলম্বে শুরু হয়েছে। বিলম্বিত সেচের কারণেও হাইব্রিড রোপণ করতে গিয়ে চারার বয়স বেড়ে গিয়েছিল।
কৃষি কর্মকর্তা ও বীজ কোম্পানির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জমিগুলো পরিদর্শনে দেখা গেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরো জমির শীষ বেরিয়ে যাবে। অল্প কিছু আগাম শীষ বের হলেও ফলনে তেমন বিপর্যয় হবে না। হয়তো ঊনিশ-বিশ হতে পারে। তবে কৃষকরা যদি নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীতে টিয়া ধান আবাদ করেন, তাহলে এবার সামান্য যে সমস্যা হয়েছে, তাও হবে না। আরও কয়েকটি উপজেলায় কিছু জমিতে এরকম সমস্যা হয়েছে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামীতে এটা কৃষকদের জন্য একটা অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজে লাগবে বলেও কর্মকর্তারা মনে করছেন।
কৃষি কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম বলেন, আগাম শীষ বের হওয়ার বিষয়টি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকে জানিয়েছেন। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটেও জানাবেন। বেশি বয়সের চারা রোপণ করলে সব জাতের ধানেরই ফলন কম হয়। বেশি বয়সের চারা রোপণের কারণে দেশে বছরে ১১ হাজার কোটি টাকার ধান কম উৎপন্ন হয় বলেও তিনি জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ কর মকর ত র বয়স র চ র ল ইসল ম কর ছ ন হওয় র বলছ ন ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।